editorial

ধর্মের নামে খুন হয় আখলাক-দীপুরা

সম্পাদকীয় বিভাগ

বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদী ধর্মান্ধ উন্মত্ততার আবহে হিংস্র জনতার হাতে সংখ্যালঘু হিন্দু যুবক দীপু দাসের নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও উদার মানবিক চেতনায় সমৃদ্ধ মানুষ পথে নেমেছেন, সোচ্চার হয়েছেন। বাংলাদেশে বামপন্থীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। এমনটাই হওয়ার কথা, হয়েছেও তাই। এমন এক সংখ্যালঘু যুবককে তার কর্মস্থল থেকে টেনে হিঁচড়ে বার করে এনে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেহ পোড়ানোর বীভৎসতা সভ্য সমাজে বিরল। তাই শিউরে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। ভারতের উদার গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ এই ঘটনায় রীতিমতো স্তম্ভিত, উদ্বিগ্ন। নানা ফর্মে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন ভারতের জনগণ। কলকাতায় এবং অন্যত্র প্রতিবাদ মিছিল করে কমিউনিস্টরা। ধর্মের অবমাননা করার অজুহাত খাড়া করে ধর্মান্ধ উন্মত্ত জনতা ভিন্ন ধর্মের মানুষকে সদলবলে আক্রমণ করে মেরে ফেলবে এটা সভ্য মানব সমাজে কল্পনারও অতীত। কিন্তু বাস্তবে এখন বাংলাদেশে সেটাই ঘটছে। মুসলিম মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশকে সেই অসভ্য বর্বর যুগে ফিরিয়ে নিতে চাইছে। তাই উদার চিন্তার মানবিক চেতনার মানুষ তার বিরুদ্ধে সরব হবেন সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আপাদ মস্তক মৌলবাদী চিন্তায় পুষ্ট ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা এই ঘটনার প্রতিবাদে নেমে হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়াবে সেটাই বিস্ময়ের। সঙ্ঘ পরিবারের চৌহদ্দির মধ্যে থাকা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ দল সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন দিল্লিতে, কাশ্মীরে, কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতবাসগুলিতে প্রতিবাদের নামে তাণ্ডব করে। এই হিন্দুত্ববাদী ধর্মান্ধরাই ভারতের বুকে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একই অপরাধ করেছে। এখানেও নানা অজুহাত তুলে অন্তত দুই শতাধিক সংখ্যালঘু মানুষকে পিটিয়ে বা অন্যভাবে খুন করেছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা তো কয়েক গুণ বেশি। হিন্দুত্ববাদী ঠেঙাড়ে বাহিনীর একাংশ গো-রক্ষার নামে নৈরাজ্য তৈরি করে চলেছে আজও। এদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এমন কি আদিবাসী, দলিতরাও।
দুঃশ্চিন্তার কথা এই হিন্দুত্ববাদী হিংস্র জনতার নৃশংস কার্যকলাপকে সমর্থন বা মদত দিয়ে চলে বিজেপি। রাজ্যে ও কেন্দ্রে বিজেপি’র সরকারগুলি‍‌ও খুন, হিংসার কারবাদীদের আইনিভাবে রক্ষা করার ব্যবস্থা করছে প্রশাসনিক নীরবতায়। বিজেপি’র নেতারাও নানাভাবে এদের উস্‌কে দিচ্ছে বা উৎসাহিত করছে।
বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদীরা সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে আর সেখানকার সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ভারতে হিন্দু মৌলবাদীরা একইভাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের খুন করছে। তাদের মদত দিচ্ছে বা আড়াল করছে বিজেপি সরকার। এই মুহূর্তে উত্তর প্রদেশে যোগী রাজ্যের রামরাজত্বে মহম্মদ আখলাক খুনের ঘটনা সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। মোদী ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালে উত্তর প্রদেশের গ্রেটার নয়ডায় প্রৌঢ় আখলাকের ঘরে ঢুকে তাকে পিটিয়ে খুন করে হিন্দুত্ববাদী হিংস্র বর্বররা। তার বাড়িতে গোরুর মাংস আছে এমন গুজব ছড়িয়ে লোক জড়ো করে আক্রমণ করা হয়। এত বছর ধরে মামলা চললেও পুলিশি তদন্তে ঢিলেমির ফলে বিচার প্রক্রিয়া এগোয়নি। এখন যোগী সরকার মামলা তুলে নিয়ে খুনিদের সসম্মানে মুক্ত করতে আবেদন করেছে। আদালত অবশ্য তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এটাই হিন্দুত্ববাদী সরকারের বৈশিষ্ট্য। ভিন্ন ধর্মের মানুষকে খুন করা, অত্যাচার করাকেই তারা হিন্দু ধর্মের আচার বলে মনে করে। ধর্মের নামে এই দাগী অপরাধীরা রাজনীতির ঝান্ডাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করে। বিজেপি এটাই চায়। তাই এদের মদত দেয়, রক্ষা করে। এদের বিরুদ্ধে পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে।

Comments :0

Login to leave a comment