MD SALIM JHARGRAM

আদানিদের কাছে জনতার সম্পদ বন্ধক রাখছে দু’দলই: সেলিম

রাজ্য জেলা

MD SALIM JHARGRAM শনিবার ঝাড়গ্রামে সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম।

দেশের অর্থ মন্ত্রীকেই জানাতে হবে এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্ককে আদানি গোষ্ঠীতে টাকা রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল কে। নির্মলা সীতারামনকে লক্ষ্য করে এ প্রশ্ন ছুঁড়েছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। 

এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টানা দুর্নীতি সত্ত্বেও কেন্দ্র চোখ বুঁজে আছে কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক। ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, আদানির সঙ্গে মিলে আছে বিজেপি এবং তৃণমূল। নির্বাচনী বন্ডে বিপুল আয় করেছে বিজেপি। তৃণমূলকেও পাঁচশো কোটি টাকা দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। 

শনিবার ঝাড়গ্রামে সিপিআই(এম) জেলা কমিটির ডাকে সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেন সেলিম। সেখানেই সাংবাদিক সম্মেলন হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে বোমা বিস্ফোরণে তিনজন গুরুতর আহত। এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যকে জতুগৃহ বানিয়েছে তৃণমূল। শিশুরা বিস্ফোরণে মারা যাচ্ছে খেলতে গিয়ে। সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছেন। গত মার্চে বগটুইয়ের সময় তো মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পুলিসের ডিজি’কে পনের দিনের মধ্যে সব অস্ত্র বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার কী হলো। পুলিশমন্ত্রী এবং ডিজি অপদার্থ।’’ 

কেন্দ্রের বিজেপি আসীন হওয়ার পর আইন বদলে কর্পোরেট গোষ্ঠীর পরিচয় গোপন করে রাজনৈতিক দলকে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সিপিআই(এম) নীতিগত কারণেই নির্বাচনী বন্ডে অর্থ নেয় না। 

সেলিম বলেছেন, ‘‘এখন দিল্লির সরকার যেন হঠাৎ জানতে পেরেছে এ রাজ্যে দুর্নীতি হচ্ছে। আসলে বামপন্থীরা ‘চোর তাড়াও, গ্রাম জাগাও’ স্লোগানে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নেমেছে। জড়িয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। এখন বিজেপি’কে উদ্বেগ দেখাতে হচ্ছে।’’ 

একশো দিনের কাজ বা আবাস যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্প ব্যাখ্যা করে সেলিম বলেছেন যে তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে নজরদারির ব্যবস্থা এমনিতেই চালু রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নজরদারির জন্য আরএসএস’র মদতে চলা বিভিন্ন এনজিও’কে দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এরা কাজ করে না। একদিকে মানুষকে ভাগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে মজুরির টাকা লুট করা হচ্ছে।’’ 

এদিনই দিল্লিতে নির্মলা সীতারামন দাবি করেছেন, এলআইসি বা স্টেট ব্যাঙ্ক স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। বোঝাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করেনি রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থা। সীতারামানের দাবি, বিদেশি বিনিয়োগের অর্থ আসতে সমস্যা হচ্ছে না। আদানিকান্ডে ভারতের ওপর বিনিয়োগকারীদের ভরসা উঠে যায়নি। 

বিজেপি নেত্রীর এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন সেলিম। তাঁর ক্ষোভ, নরেন্দ্র মোদী আদানি, আম্বানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়েছে দেশের উপকূল, বন্দর, জমি। তারা ব্যাঙ্কে জমানো মানুষের টাকা নিয়ে এ সব কিনছে। তারপর সম্পদ দেখিয়ে ফের বাজার থেকে টাকা তুলছে। শেয়ারে দাম বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। 

সেলিম বলেছেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস এই পথেই চলছে। তাজপুরে সমুদ্রবন্দর মৎস্যজীবীদের কথা না ভেবে আদানিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ডেউচা পাচামীতে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করছে। প্রতিবাদে আদানিরা ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে আগাম হিসেবে।’’ 

ঝাড়গ্রামে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জমি বিক্রি করে দিচ্ছে সিন্ডিকেট। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘ডুয়ার্সেও এমনই করছে। চুপিসারে এই হাতবদল আইনসিদ্ধ করছে। কেন্দ্র যা করছে রাজ্যে তৃণমূলও তাই করছে। জনগণের সম্পদ বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে। বিনিময়ে নির্বাচনী তহবিলে অর্থ নিশ্চিত করছে। 

কেশপুরে  এদিন  তৃণমূল সাংসদ এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর  মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সেলিমকে। তিনি বলেন, ‘‘সিপিআই(এম)-বিজেপি’র জোট হয়েছে এ’ কথা অভিষেক ছাড়া আর কেউ বলবে না।’’

সেলিম বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যে তো বটেই সারা দেশেই বিজেপি’কে হটানোর লড়াইয়ে রয়েছে বামপন্থীরা। ধর্মনিরপেক্ষ অন্য শক্তিগুলির সঙ্গে এ লড়াই চালাচ্ছে বামপন্থীরা। তৃণমূল এ লড়াইয়ে নেই। ত্রিপুরায় এখন তৃণমূল নেই। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে গিয়েছিল। মেঘালয়ে যাচ্ছে গরু পাচারের রাস্তা পরিষ্কার রাখতে। সংসদে ডুব দিয়েছে তৃণমূল। আদানিকাণ্ডের তদন্তের দাবিতে সরব অন্য বিরোধীরা, বামপন্থীরা।’’

সেলিম বলেছেন, ‘‘দুই শক্তিতে মিল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার দিকেও। বিবিসি’র তথ্যচিত্র বন্ধ করছে বিজেপি। তৃণমূল নওসাদ সিদ্দিকীকে বন্দি করে রেখেছে।’’ 

সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র, জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকার প্রমুখ।

 

Comments :0

Login to leave a comment