Start trial in court

হাসপাতালে দুর্নীতির মামলা

রাজ্য কলকাতা

আর জি করে ধর্ষণ ও খুনের মূল মামলায় সিবিআই তদন্ত প্রায় শীতঘুমে চলে গেলেও হাসপাতালের অভ্যন্তরে দুর্নীতির মামলায় অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হলো আলিপুরে বিশেষ সিবিআই আদালতে।
আর জি করে পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তদন্তে সামনে এসেছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভ্যন্তরে, সরকারি হাসপাতালে মধ্যেই ভয়াবহ দুর্নীতির ছবি। সেই আর্থিক দুর্নীতিতে ইতিমধ্যে চার্জশিট দাখিল করেছে সিবিআই। তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, আর জি করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট সভাপতি আশিস পান্ডে, হাওড়ার ব্যবসায়ী সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বিপ্লব সিং, ওষুধ সরবরাহকারী সুমন হাজরা ও আর জি করের ক্যান্টিন চালানো তৃণমূল কর্মী আফসার আলি খান— এই ৫ জন দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেপ্তারও হয়েছিল। ধর্ষণ-খুনের তদন্তেও আর জি করের ওই তৃণমূল ছাত্রনেতা আশিস পান্ডে জেরার মুখে পড়েছে। সেদিন ঘটনাস্থলে অর্থাৎ সেমিনার রুমে একাধিকবার দেখা গিয়েছিল সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূলীকে।
সোমবার আলিপুরে সিবিআই’র বিশেষ আদালতের এজলাসে এই ৫ অভিযুক্তের উপস্থিতিতে দুর্নীতি দমন আইনের ৪২০, ৪০৯, ৪৬৭, ৪৬৮ এবং ৭ নম্বর ধারায় চার্জ গঠন হয়েছে। বিচার শুরু হবে ২২ জুলাই থেকে।
চার্জ গঠনের তৎপরতা শুরু হতেই কলকাতা হাইকোর্টে সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডিভিসন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল সন্দীপ ঘোষ। মূলত চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েই তার এই পদক্ষেপ। সেই মামলার শুনানি চলাকালীনই এমনকি বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেছিলেন, ‘‘এই ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকলে প্রশাসনের অভ্যন্তরে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। এই ধরনের দুর্নীতি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং প্রশাসনকে দূষিত করে।’’ এই ধরনের মামলায় কেন দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার, তাও বলেছিলেন বিচারপতি। 
গত ২৯ নভেম্বর আলিপুর আদালতে সিবিআই এই আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে ১০০ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছিল। এই চার্জশিটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক হাজার পাতার তথ্যপ্রমাণ। কীভাবে হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম সহ অন্যান্য বহু প্রয়োজনীয় সামগ্রী বেআইনি টেন্ডারে কেনা হয়েছে তার তথ্যপ্রমাণ এই চার্জশিটে রয়েছে।
গত বছরের ৮ আগস্ট আর জি করে পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তেই সামনে আসে হাসপাতালের ভিতরে দুর্নীতির ভয়াবহ ছবি। যার মূল মাথা ছিল তৎকালীন অধ্যক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ সন্দীপ ঘোষ। চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা থেকে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ, বিভিন্ন টেন্ডার ডেকে নিজের প্রভাব খাটানো, কোটি টাকার কমিশন খাওয়ার অভিযোগ বার বারে উঠেছিল।
শুধু তাই নয়, হাসপাতালের পরিকাঠামোগত আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গেও অধ্যক্ষের নাম জড়িয়েছে এবার। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্তত ২০ শতাংশ করে কাটমানি বা কমিশন নেওয়ার মারাত্মক অভিযোগ স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়েছে। বছরের পর বছর চুপ ছিল সরকার, প্রশাসন। আর জি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দু’টি মামলা দায়ের হয়েছিল। একটি মামলা করেছিলেন হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি এবং আরেকটি মামলা ছিল আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্তের। আখতার আলির মামলাটির শুনানিতে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন।
এই মামলাতেই দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিচারের অনুমতি দেয় রাজ্য সরকার। গত ২৭ জানুয়ারি সেই অনুমোদন আসে সিবিআই’র হাতে। এরপরেই ২৮ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নির্দেশ দিয়েছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে ট্রায়াল শুরু করে দ্রুততার সঙ্গে বিচার শেষ করতে হবে। ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই চার্জ গঠন করার কথা ছিল। হাইকোর্টের এই বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়সীমা আরও বাড়ানোর আরজি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় সন্দীপ ঘোষ ও আর জি করের তৃণমূল ছাত্রনেতা আশিস পান্ডে।
চার্জ গঠন প্রক্রিয়া পিছিয়ে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালানো হয়েছিল সন্দীপ ঘোষের তরফ থেকে। 
গত ১৮ জুন আর জি করে এই দুর্নীতি মামলায় তদন্তের সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল আলিপুর আদালত। প্রভাবশালী মদতে সরকারি হাসপাতালের ভিতরে এই ভয়াবহ দুর্নীতি চক্রের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেয় আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত।
তারই মধ্যে এবার চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শেষে বিচার পর্ব শুরু হতে চলেছে আগামী ২২ জুলাই থেকে। ওই দিন প্রথম সাক্ষী হিসাবে তলব করা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগকারী দেবল ঘোষকে।

Comments :0

Login to leave a comment