Dinhata Rape Victim

দিনহাটায় ধর্ষিতা, পরিবারের পাশে সিপিআই(এম)

জেলা

দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নির্যাতিতার সাথে কথা বলছেন মহিলা নেত্রীরা।

ধর্ষিতা মামলা করায় জেলে বিচারাধীন বন্দী দিনহাটার "ডন" আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নে। জেলে যাবার আগে ধর্ষিতা ও তাঁর পরিবারকে দলবল নিয়ে বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছিল, "মামলা করলে তার ফল হবে মারাত্বক! পরিবারের সবাইকে জানে মেরে দেওয়া হবে। সেটা যে কথার কথা ছিল না, সেটার প্রমান মিলেছে শুক্রবার!
ওইদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ পুলিশ ধর্ষণ মামলার তদন্ত করতে ধর্ষিতার বাড়িতে গেলে পুলিশের সামনেই মান্নের স্ত্রী আফরুজা বিবি এবং তার ছেলে মারুফ হোসেন দলবল নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়ে ধর্ষিতা ও তাঁর মাকে বেদম মারধোর করে। উপস্থিত দিনহাটা থানার পুলিশ তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। দুজনেই এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওইদিন রাত আড়াইটে নাগাদ ফের ধর্ষিতার বাবার বাড়িতে (যেখানে এখন থাকেন ধর্ষিতা) বোমা ছোঁড়ে মান্নের অনুগামীরা।
শনিবার দিনহাটার ধর্ষিতা কলেজ পড়ুয়া গৃহবধূ এবং তাঁর পরিবারের পাশে থাকার কথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিনাক্ষী মুখার্জী। পুলিশের ভূমিকা ও আক্রমণের ঘটনার নিন্দা করে ওই পড়ুয়া গৃহবধূ এবং তাঁর পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
শনিবার ধর্ষিতার প্রতিবেশী মজিবর মিয়া ফরিদুল মিয়া, আফান মিয়ারা বলেন, রাত আনুমানিক আড়াইটা নাগাদ বিকট শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে। বুঝতে পারি ওটা বোমার শব্দ। ভয়ে কেউ আর রাতে বের হই নি। সকালে মেয়েটির বাবার বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি ওদের বাড়িতেই বোমা ছোঁড়া হয়েছিল। বাড়িতে কেউ না থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছে ওঁরা। প্রতিবেশীরা বলেন,পুলিশের উচিত পরিবারটিকে নিরাপত্তা দেওয়া।
এদিকে প্রতিবেশীদের থেকে ফোনে রাতে তাঁর বাড়িতে বোমা ছোঁড়া হয়েছে শুনে দিনহাটা হাসপাতালে জখম স্ত্রী ও মেয়েকে রেখে বাবা বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখান থেকেই এদিন জেলা পুলিশ সুপারকে ফোন করে শুক্রবার দিনের আক্রমণ ও রাতে বোমা ছোঁড়ার কথা বলতে শুরু করতেই পুলিশ সুপার ধর্ষিতার বাবাকে পালটা বলেন, আপনি মিথ্যা মামলা করছেন। পুলিশকে ক্ষেপিয়ে তুলছেন। এর ফল ভালো হবে না। এরপর ফোন কেটে যায়। ধর্ষিতার বাবা অভিযোগ করেন, পুলিশ সুপার তো আমার কোন কথাই শুনলো না। উলটে আমাকেই ধমক দিলো। এখন আমি আমার পরিবার নিয়ে অসহায়। মান্নের লোকেরা বুঝি আমাদের বাঁচতে দেবে না। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অসহায় বাবা।
বিচারাধীন বন্দী হিসেবে জেলে থেকেও এতটুকু দাপট কমে নি দিনহাটার বড়আটিয়াবাড়ির মন্ত্রী উদয়ন গুহ ও সাংসদ জগদীশ চন্দ্র রায় বসুনীয়া ঘনিষ্ট তৃণমুল নেতা আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নে’র!
চাকরি দেবার নাম করে প্রথমে ৫ লক্ষ টাকা নেওয়া, পরে সেই বিবাহিত কলেজ পড়ুয়াকে চাকরির ইন্টারভিয়ু দেবার নাম করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অপরাধে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৃণমূল দলের জেলা সভাপতি মান্নেকে বহিষ্কার করার পরেও তার দাপট এতটুকু কমে নি। মান্নে আসলে সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানের আরেক সংস্করণ। মান্নে এলাকার "ডন'। গত ২৪ ঘন্টায় তার অনুগামীদের কার্যকলাপে প্রশ্ন উঠেছে, মান্নে কি জেলে বসেই তার অনুগামীদের নিয়ন্ত্রণ করছে? এদিকে ধর্ষিতার বাবা দুটি ঘটনার আলাদা করে থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ এখনও কাউকেই গ্রেপ্তার করে নি।
গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সুজাতা চক্রবর্তী, বাসন্তী বর্মন ও মুক্তা রায় শনিবার দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে জখম  ধর্ষিতা ও তাঁর মায়ের সাথে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরে প্রতিনিধি দলটি দিনহাটা মহিলা থানায় গিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ধর্ষিতার পরিবারকে পুলিশি নিরাপত্তা দেবার দাবি জানান। এছাড়াও অভয়া মঞ্চের কোচবিহার জেলার আহ্বায়ক রাজাপাল চৌধুরী,  বিদ্যুৎ দে, নাদিরা আজাদ নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তারাও পাশে থাকবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় শনিবার বলেন,আমরা পার্টির পক্ষ থেকে নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিবারের পাশে আছি। পরিবারের আইনী নিরাপত্তার বিষয়টিও নিয়ে ইতিমধ্যে আইনজীবিদের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। রবিবারের ব্রিগেডের সভার পরেই পার্টির একটি প্রতিনিধি দল ওই বাড়িতে গিয়ে নির্যাতিতা এবং তাঁর বাবা- মায়ের সাথে কথা বলবে।

Comments :0

Login to leave a comment