প্রিতম ঘোষ
আমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার স্মৃতি টাটকা। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্ত চলছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা, সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২৬০।
কেবল যাত্রী সুরক্ষা নয়, বিমান পরিষেবা নিয়ে গত কয়েক বছরে উঠতে থাকা গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগও চলে এসেছে সামনে। তার অন্যতম যাত্রী পরিষেবা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একসময়ে বলেছিলেন যে যারা হাওয়াই চপ্পল পড়ে তাদের হাওয়াই জাহাজে চড়াবে তাঁর সরকার। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, বিমানের ভাড়া এমন মাত্রায় বেড়েছে তাঁর সময়ে এমনকি মধ্যবিত্ত অংশের নাগাল পাওয়া কঠিন হয়ে গিয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া আদতে ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। নরেন্দ্র মোদীর সরকার জনতার অর্থে তৈরি এই সংস্থাকে বিক্রি করে দেয় টাটা গোষ্ঠীর কাছে। প্রতিশ্রুতি ছিল পরিষেবার মান লাফিয়ে বাড়বে। বাস্তবে বেড়েছে টিকিটের দাম। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নিয়মিত দেরি, খাবারের খারাপ মানও।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর যখন পর্যটকরা তাদের জীবন রক্ষার জন্য কাশ্মীর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন। ঠিক তখনই বিমান ভাড়া প্রায় ১০ গুন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। শ্রীনগর থেকে দিল্লি এবং অন্যান্য মেট্রো শহরের বিমানের টিকিটের দাম নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।
শ্রীনগর থেকে দিল্লি ইকনমি ক্লাসে টিকিটের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে ৬,০০০-৮,০০০ টাকা। বেড়ে হয় ৬৫,০০০ টাকা। শ্রীনগর থেকে কলকাতার বিমানে ইকনমি ক্লাসের ভাড়া ৮,০০০- ৯,০০০ টাকা। বেড়ে হয়েছিল ৩৬,৫০০ টাকা। বিভিন্ন মেট্রো শহরের জন্য বিমান ভাড়া ৩০,০০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও এভাবেই জনতার ঘাড় ভেঙে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গিয়েছে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলিকে। অথচ, পহেলগামে অটো চালকরা বিনা ভাড়ায় পর্যটকদের বিপদের সময় যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছিলেন।
জনরোষের চাপে ডিজিসিএ (ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন) শ্রীনগর থেকে বিমানের ভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য বিমান সংস্থাগুলিকে নির্দেশ জারি করে। তবে তার আগেই বহু টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
একই ভাবে মহাকুম্ভের সময় চেন্নাই থেকে প্রয়াগরাজ যাওয়ার ইকনমি ক্লাসের বিমান ভাড়া করা হয় ৭০,৯৯৬ টাকা। এদিকে মাত্র ৩১,৩৪২ টাকায় লন্ডন যাওয়া যায়।
মোদীর প্রচার, ভারতে বিমানবন্দরের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ এবং বর্তমানে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবা ক্ষেত্র বিশ্বে তৃতীয়। প্রতি বছর ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু বিমান ভাড়া অগ্নিমূল্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান পরিষেবার চাহিদা বাড়লেও পর্যাপ্ত বিমান বা বিমানকর্মী নেই। এসিআই (এয়ারপোর্ট কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল)-এর তথ্য অনুযায়ী ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের বিমান ভাড়া বেড়েছে সবথেকে বেশি, ৪১ শতাংশ।
ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রের ৬৩. ৭ শতাংশ ইন্ডিগো এবং ২৭.৩ শতাংশ এয়ার ইন্ডিয়ার দখলে আছে যা ভারতীয় বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রের সর্বমোট ৯১ শতাংশ। বাকি ৯ শতাংশ রয়েছে অন্যান্য ছোট বিমান পরিষেবা সংস্থার কাছে। ২০২৩’র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বেশ কিছু বিমানপথের ভাড়া ২২৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। প্রাথমিক ভাড়ার ওপর জিএসটি ও অন্যান্য মাশুল বসিয়ে ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে প্রতি তিনটির মধ্যে একটি বিমান দেরিতে ছেড়েছে। যার ফল ভুগতে হয়েছে ২৪ লক্ষ বিমানযাত্রীকে। দিনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা দেরি নিয়মিত হচ্ছে। এমনকি বিমানের দেরির জন্যও যাত্রীদের প্রাথমিক সুযোগ সুবিধাগুলি দেওয়া হয় না। যেমন অপেক্ষা করার জন্য জায়গা, খাবার বা শৌচালয়ের ব্যবস্থা।
Comments :0