তামিলনাড়ু থেকে পরিবার নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন এস প্রভু। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী টি মধুমিতা, শ্বশুর এস মুথুকৃষ্ণাণ আর দুই ছেলে-মেয়ে। দার্জিলিঙ ঘুরে গতকাল কলকাতায় ফিরেছিলেন। মঙ্গলবার রাতেই হাওড়া থেকে ফেরার ট্রেন ছিল। তাই হাওড়া স্টেশনের কাছে মেছুয়া বাজার সংলগ্ন ঋতুরাজ হোটেলে উঠেছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোটেলে আগুন লাগার আগে বাইরে বেরোন দম্পতি। খাবার ও কিছু জিনিস কিনতে হোটেলে বাকিদের রেখে বেরিয়েছিলেন তাঁরা।
রাত আটটায় হঠাৎ মোবাইল বেজে ওঠে এস প্রভুর। ফোনে কে যেন বলেন তাঁদের হোটেলে আগুন লেগেছে। তাই শুনে পড়িমড়ি করে ছুটে আসেন ওই দম্পতি। এসে দেখেন দাউ দাউ করে জ্বলছে ঋতুরাজ হোটেল। ছেলে-মেয়ে, বয়স্ক মানুষও হোটেল ঘরে। কী করবেন ঠিক করার আগেই তাঁদের আশ্বস্ত করতে এগিয়ে আসেন পুলিশকর্মীরা। তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। বলা হয় উদ্ধার চলছে। কিন্তু কোথায় কী উদ্ধার!
পরে মধুমিতা জানতে পারেন, চারতলার ঘরের কেউ বেঁচে নেই। সেখান থেকে গলগল করে বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। ওই তলের ৩১৩ নম্বর রুমে ছিল ওই তামিল দম্পতিরা। মাঝারাতে নিথর অবস্থায় যখন ছেলে পি রিথম (৪), মেয়ে পি দিয়া (১০) আর বাবা এস মুথুকৃষ্ণাণ (৬১)-কে বার করা হলো তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি। পুলিশ তাঁদের নিয়ে যায় কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে।
পরে জানা যায়, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শিয়ালদহের এনআরএস হাসপাতালে, আর বাবা’কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে। সেখানে ময়নাতদন্ত করা হবে। আর এর জন্যই এস প্রভু আর মধুমিতা দুইজন চলে যান দুই হাসপাতালে। শ্বশুর এস মুথুকৃষ্ণাণের ময়নাতদন্তের জন্য আরজিকর হাসপাতালে যান এস প্রভু। ছেলে-মেয়ের নিথর দেহের কাছেই কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে থেকে যান মধুমিতা।
ময়নাতদন্তের শুরু থেকে শেষ অবধি ছিলেন মধুমিতা। বুধবার সকালে তাঁর কলকাতায় পরিচিত কিছু মানুষ আসেন। তাঁরাও থেকে যান। বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পুলিশের শবযানে করে এনআরএস হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সেরে সাদা কাপড়ে নিয়ে যাওয়া হয় ছেলে পি রিথম আর মেয়ে পি দিয়াকে। দেহ দুটিকে সংরক্ষণ করা হবে পিস ওয়ার্ল্ডে। দেহকে যথাযথভাবে কফিনবন্দি করে চেন্নাইয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এনআরএস থেকে ময়নাতদন্তের পর দুই শিশুর দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় মা মধুমিতার আকুতি দেখার পর পেশাদার সাংবাদিকরাও যেন বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তামিলে মধুমিতা শুধু বলে চলেছেন, কেন তোরা একা একা চলে গেলি। আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলি না।
Mechhuya Fire Children
‘কেন একা চলে গেলি’, কাতর আকুতি মায়ের

×
Comments :0