Cricket

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নাটকীয় জয় ভারতের

খেলা

ব্রিসবেন, ১৭ অক্টোবর—   বিশ্বকাপের মূলপর্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামার আগে প্রস্তুতি ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারাল ভারত। রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চে ভরা ম্যাচে মাত্র ৬ রানে জিতেছে রোহিত শর্মার দল। 
মজার ব্যাপার হল, অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে শেষ ওভার করার আগে অবধি একটিও ওভার করেননি। অসিদের জিততে শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১ রান। জসপ্রীত পরিবর্তে দলে ঢোকা মহম্মদ সামি দুরন্ত বল করলেন। প্রথম দু’ বলে দিয়েছেন চার রান। পরের চার বলে চার উইকেট পড়েছে। সামি পেয়েছেন তিন উইকেট। তিনটি বলই ইয়র্কার দিয়েছেন। পরপর দু’বলে জস ইংলিশ ও কেন রিচার্ডসনের উইকেট ছিটকে দিয়েছেন। এই মহম্মদ সামিকে ভারতীয় দলের নির্বাচক সহ টিম ম্যানেজমেন্ট টি-২০ দলের ভাবনাতেই রাখেননি। এশিয়া কাপের দলের বাইরে রাখা হয়েছিল তাঁকে। তার অন্যতম কারণ, স্লগ ওভারে সামির ইকোনমি রেট বেশি। প্রথমে যখন বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করা হয়, সামিকে রাখা হয়েছিল স্ট্যান্ড বাই হিসেবে। বুমরা চোটে ছিটকে যাওয়ায় শিকে ছেঁড়ে সামির। মাঝে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় খেলতে পারেননি কয়েকটি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে সামি দেখে মনে হল, ফিট রয়েছেন। তাঁর বোলিংয়েই সেটা জলের মতো পরিস্কার। অস্ট্রেলিয়ার গতি-বাউন্সি উইকেট। বিশ্বকাপে সামি ছন্দে থাকলে, আগুন ঝরাবেন আশা করাই যায়। এবং হয়ে উঠতে পারেন রোহিতের গো টু ম্যান। মূলপর্বের জন্য সামি নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য আরও একটি ম্যাচ পাবেন, বুধবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। রোহিতের মুখে সামির স্তুতি। বলেছেন, ‘ভালো খেলা হওয়ায় আমাদের প্রস্তুতিটা ভালো হল। সামি বহুদিন পর মাঠে ফিরেছে। আমরা ওকে একটা ওভার দিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম। চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলেছিলাম। ও দেখিয়ে দিল, কী করতে পারে‌!’ 


টসে জিতেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তিনি প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে তোলে ১৮৬/৭। অর্ধশতক করেন ভারতের দুই ব্যাটার লোকেশ রাহুল ও সূর্যকুমার যাদব। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের বিরুদ্ধে রাহুল শুরু থেকেই আক্রমণের রাস্তা বেছে নেন। রোহিত ছিলেন ধীর-স্থির। রাহুল বোলারদের গতি ব্যবহার করে প্লেসমেন্টের সাহায্য বলগুলি বাউন্ডারির বাইরে ফেলছিলেন অবলীলায়। ৩৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংসে বেশ কিছু দর্শনীয় শট খেলেছেন। প্রস্তুতি ম্যাচে এত ভালো ছন্দ দেখিয়েছেন তিনি, কিন্তু তাঁর আসল পরীক্ষা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। গত বিশ্বকাপে শাহিন শাহ আফ্রিদির ইনডিপার তাঁর উইকেট ছিটকে দিয়েছিল। আট ওভার শেষ হওয়ার আগেই ভারত তুলেছিল ৭৩ রান। যার বেশিরভাগ এসেছিল রাহুলের ব্যাট থেকে। রাহুল আউট হওয়ার পরের ওভারেই রোহিত (১৫) আউট হয়ে যান। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক টি-২০’তে ধারাবাহিক ভাবে রান পাচ্ছেন না রোহিত। যা, চিন্তার বিষয়। বিরাটও ভালো শুরু করে আউট হয়ে যান। স্টার্কের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারিতে সামনে ধরা পড়েন মার্শের হাতে। তবে সূর্যের বিচক্ষণ ব্যাটিংয়ের সুবাদে ভারত ১৮০ পার করে। এক প্রান্ত উইকেট পড়লেও টিকে ছিলেন সূর্য। হার্দিক রান পাননি। কার্তিক (২০) ফিনিশারের মতোই ইনিংস খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার কেন রিচার্ডসন গতির হেরফের করে ভারতীয় ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করেছেন। তাঁর শিকার সূর্যকুমার সহ আরও তিন ব্যাটার। ব্যাট করতে নামেননি ঋষভ পন্থ। তাঁকে ডাগআউটে পায়ে বরফ লাগিয়ে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। 
রান তাড়ায় নেমে অসি দুই ওপেনার ফিঞ্চ-মিচেল মার্শ দু’জনে শুরুটা যেভাবে করেছিলেন, ভারতীয় বোলাররা চাপে পড়ে গিয়েছিল। ভুবি মার্শকে বোল্ড করতেই চাপ কিছুটা হালকা হয়। স্কোরবোর্ড সচল রাখার কাজটা করছিলেন ফিঞ্চ। তিনি ৭৬ রান করলেও আর কোনও অসি ব্যাটার পঞ্চাশ পার করতে পারেননি। ফিঞ্চ যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার হাতে ছিল। ম্যাক্সওয়েলকে পুরোনো ছন্দে দেখাচ্ছিল। ম্যাক্সওয়েলের ঘাতক ভুবি। তিনি তিন ওভারে স্পেলে দু’টি বড় উইকেট ভারতের জয়ের রাস্তা মসৃণ করেন। হর্ষলও নজর কেড়েছেন। শেষের আগের ওভারে সেট হওয়ার ফিঞ্চকে বোল্ড করেন। আহামরি বোলিং করতে পারেননি অর্শদীপ, হার্দিক ও চাহাল। 
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত- ১৮৬/৬ ( রাহুল ৫৭, সূর্য ৫০, কেন ৪/৩০)
অস্ট্রেলিয়া—  ১৮০ অলআউট (ফিঞ্চ ৭৬, সামি ৩/৪, ভুবনেশ্বর ২/২০)

Comments :0

Login to leave a comment