রেগার টাকার খোঁজ করতে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে আসছেন গরিব মানুষ। শিবিরে এসে কবে চালু হবে রেগার কাজ জানতে ভিড় জমাচ্ছেন কাজ না পাওয়া গ্রামের গরিব।
খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, জাতিগত শংসাপত্র সহ ২৫ ধরনের সরকারি পরিষেবা নিয়ে দুয়ারে গেছে সরকার। কিন্তু কাজের হাহাকারে ১০০ দিনের প্রকল্প কবে চালু হবে, প্রশ্নের উত্তর দিতে নাজেহাল সরকার।
১ নভেম্বর থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে দুয়ারে সরকার শিবির। এক ছাতার তলায় সব সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে মমতা ব্যানার্জির সরকার চালু করেছিল দুয়ারে সরকার শিবির। এবারই প্রথম শিবিরে নেই ১০০ দিনের প্রকল্প। কিন্তু তিন দিনেই শিবিরে এসে মানুষ খোঁজ নিতে শুরু করেছেন কবে মিলবে রেগার কাজের বকেয়া মজুরি? কারোর দাবি, কবে থেকে ফের শুরু হবে ১০০ দিনের কাজ? দুয়ারে সরকার গেছে, নেই রেগার কাজ করা বকেয়া টাকা।
সরকারি শিবিরে কর্তব্যরত এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন বকেয়া মজুরি কবে পাওয়া যাবে তা জানতে। ১০০ দিনের কাজ চালু কবে হবে তা নিয়ে শিবিরে এসে বহু মানুষ খোঁজ নিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কাছে জবাব দেওয়ার মতো কিছু নেই।’’ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ক্ষোভ যাতে না বাড়ে তার জন্য শিবিরে আসা মানুষকে শুধু হাতে ফিরিয়ে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তাই ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি চাইতে আসা থেকে রেগার কাজ নিয়ে অভিযোগ জানাতে মানুষের জন্য সাদা কাগজে দরখাস্ত লিখিয়ে নিতে বলা হচ্ছে। এক আধিকারিকের কথা, ‘‘ মানুষ যাতে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে না যায় তারজন্য সাদা কাগজে অভিযোগ লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রেগার বকেয়া মজুরি চাইতে গরিব মানুষের কাছে যাতে প্রমাণ করা যায়, সরকার তার সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাই মানুষের বক্তব্য সাদা কাগজে লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’ কিন্তু সেই কাগজের ভবিষ্যত কী জানা নেই শিবিরে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের।
গত আট মাস হতে চললো রাজ্যে বন্ধ ১০০ দিনের কাজ। গত ডিসেম্বর থেকে রেগার কাজ করে মজুরি পর্যন্ত বকেয়া পড়ে আছে গ্রামের মানুষের। দুয়ারে সরকার শিবির হচ্ছে দেখে, গরিব মানুষের আশা ছিল, হয়তো রেগার কাজের বকেয়া টাকা পাওয়ার একটা সুরাহা হতে পারে। কিন্তু দুয়ারে এসে মানুষের অভিজ্ঞতা এটাই যে, শিবির আছে, কিন্তু মজুরি নেই।
আসলে রেগার কাজ বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে এখন রাজ্যজুড়ে পঞ্চায়েত দপ্তর জব কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণের কাজে নেমেছে। জব কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণকে কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্যতামূলক করার পর রাজ্য সরকার এখন তা রূপায়ণ করতে শুরু করেছে। ফলে আধার নাম্বার যাচাই করে রাজ্য জুড়ে জব কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগের কাজ চলছে। দুয়ারে সরকার শিবিরের বাইরেই পঞ্চায়েতে এই কাজ চলেছে। সংযুক্তিকরণের এই কাজ করাতে গিয়ে গরিব মানুষের ধারণা হচ্ছে, ফের হয়তো ১০০ দিনের কাজ শুরু হতে চলেছে। কিন্তু আগামী তিন মাসের মধ্যে রাজ্যে ১০০দিনের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দিয়েছে নবান্ন।
গত বুধবার রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ১০০ দিনের কাজ চালু হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। মেলার খরচ কমিয়ে সরকারি দপ্তরগুলিকে ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড গ্রাহকদের কাজ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী রাজ্যের সব জেলাশাসক ও দপ্তরগুলির প্রধান সচিবদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠক করেন। কীভাবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামে ১০০ দিনের কাজ জব কার্ড গ্রাহকদের রাজ্য সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করা যায় তা নিয়ে জেলাশাসকদের সক্রিয় হতে বলেন। প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী দিনে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যসচিব। বৈঠকে জেলাশাসকদের তিনি জানিয়েছেন, ‘‘ আমরা ভেবেছিলাম, ১০০ দিনের টাকাটা রাজ্য চলে আসবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বরাদ্দ করেনি। কেন্দ্রীয় সরকার আবার সময় দিয়েছে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে আমরা রাজ্যের বরাদ্দ পেতে পারি। কিন্তু তার জন্য আমাদের অপেক্ষা না করেই রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের কাজে ১০০ দিনের কাজে যুক্ত করা যায় তা আমাদের দেখতে হবে।’’
দীর্ঘদিন ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকাটা শুধু শাসক দলের নয়, মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে সরকারেরও। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কাজ না পাওয়া মানুষের ক্ষোভ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক শীর্ষকর্তারাও।
People's Question
দুয়ারে সরকার শিবিরে মানুষের প্রশ্ন
রেগা কবে চালু হবে, মজুরি কবে পাব?
×
Comments :0