দেবদাস ভট্টাচার্য: দুর্গাপুর
বেসরকারি মালিকদের স্বার্থে এবার সরাসরি শ্রমিক বিরোধী পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় সংস্থা ইসিএল। মঙ্গলবার ইসিএল কর্তৃপক্ষ সার্কুলার জারি করে দুবেশ্বরী কোলিয়ারির সমস্ত শ্রমিককে অন্যত্র বদলির নির্দেশ জারি করেছে। ইসিএল-এর সোদপুর এরিয়ার উন্নত কয়লা ভাণ্ডারের চালু খনি চিনাকুড়ি-৩ নম্বর কোলিয়ারি ও দুবেশ্বরী কোলিয়ারি ঘুরপথে বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিতে সচেষ্ট হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে চিনাকুড়ি-৩ নম্বর কোলিয়ারির শ্রমিকরা এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে ধারাবাহিক লড়াই চালাচ্ছেন। লড়াই শুরু হয়েছে দুবেশ্বরী খনিতেও। ক্ষিপ্ত কর্তৃপক্ষ তাই এই কোলিয়ারির ৪৩০ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নিল।
মোদী সরকার ঘুরপথে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা খনি সংস্থাকে বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে কয়লা মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি বৈঠক করে নতুন শব্দবন্ধ ‘মাইনস ডেভেলপার অ্যান্ড অপারেটার’ (এমডিও ) এবং ‘রেভেনিউ শেয়ারিং’ চালু করেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত খনি কেবলমাত্র সাইন বোর্ড হয়ে যাচ্ছে। সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার করে কয়লা খনন, উত্তোলন এবং বিক্রি করছে বেসরকারি মালিকরা। বিভাগীয় শ্রমিকদের উৎপাদনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকছে না। ২৫/৩০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া ঠিকা সংস্থার শ্রমিকরা সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার করে উৎপাদন করবে। রেভেনিউ শেয়ারিংয়ে মাত্র ৪ শতাংশ রাজস্ব দেওয়া হচ্ছে ইসসিএলকে। কয়লাঞ্চলের উন্নয়নে কোনও ভূমিকা থাকছে না বেসরকারি সংস্থার। ধস-গ্যাস-আগুনের বিপদ আরও বাড়িয়ে তোলা হবে। কোনও দায় নেবে না বেসরকারি সংস্থা। একেবারে মগের মুলুক। কেবল মুনাফা আর মুনাফা, লুট আর লুট। সাজানো খনি তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি হাতে।
এমডিও পদ্ধতির জন্য বলা হয়েছিল বন্ধ খনি, পরিত্যক্ত খনি, উৎপাদন জারি নেই এমন খনিতে এমডিও হবে। কিন্তু চালু এবং লাভজনক খনিতে এমডিও চালু করা হচ্ছে। চিনাকুড়ি-৩ নম্বর খনিগর্ভে ৬টি উন্নত মানের কয়লার স্তর রয়েছে। লাভজনক খনি। ১৯২ মিলিয়ন টন উন্নত মানের মজুত ভাণ্ডার। ১৭৬৩ হেক্টার ভূভাগ। সবটাই তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি মালিকের হাতে।
গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ গাড়ি সিআইএসএফ নিয়ে বেসরকারি মালিক চিনাকুড়ি-৩ নম্বর খনির দখল নিতে এসেছিল। প্রতিরোধের লড়াই দিয়ে রুখেছেন শ্রমিকরা। এলাকায় গড়ে উঠেছে সোদপুর এরিয়া বাঁচাও কমিটি। বাঁচাও কমিটির মানুষ এখনও লড়াইয়ে রয়েছেন।
এদিকে কর্তৃপক্ষ দুবেশ্বরী কোলিয়ারিতে এমডিও চালু করতে চাইছে। এলাকার মানুষ এগিয়ে এসেছেন এমডিও বিরোধী লড়াইয়ে। কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় শ্রমিকদের উৎপাদনের বাইরে রাখার জন্য বারুদ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়। ব্লাস্টিং না হলে উৎপাদন হবে না। সমস্ত শ্রমিক ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কেউ বদলির নির্দেশ মানবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে, গত তিনদিন ধরে চিনাকুড়িতেও কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে বারুদের জোগান বন্ধ করে দেয়। শ্রমিকরা খনিতে নেমে তবুও উৎপাদন করেছেন। মঙ্গলবার ও বুধবার, পরপর দু’দিন খনিতে তীব্র শ্রমিক বিক্ষোভ হয়। কর্তৃপক্ষকে ঘিরে ধরে শ্রমিকরা দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে বারুদ বরাদ্দ করতে হবে। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে উৎপাদন ‘শূন্য’ দেখিয়েছে।
চিনাকুড়ির তপন চ্যাটার্জি, নগেন্দ্র হরিজন দুবেশ্বরীর কীর্তিবাস বাউরি, উষা দেবী, উপেন্দ্র সিংরা একজোট হয়ে লড়াই জারি রেখেছেন। বেসরকারি মালিকের হাতে চালু খনি তুলে দেওয়া হবে না, এই তাঁদের অঙ্গীকার। এলাকার মানুষ শ্রমিকদের লড়াইয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন। কয়লা খনি জাতীয়করণ আইন বিরুদ্ধ পদক্ষেপ এমডিও। মালিকের জমানার অন্ধকার কয়লা ক্ষেত্রকে ফিরিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি সরকার। রুখতে হবে। খনি চত্বরে স্লোগান উঠেছে, এমডিও হটাও— খাদান বাঁচাও।
Comments :0