Podojatra

পদযাত্রায় ভয় ভাঙছে, জোর বাড়ছে দাবির

রাজ্য

Podojatra Panchayat Election

পদযাত্রা বামপন্থীদের। আলোড়ন তুলেছে অনেকটা, মূলত গ্রামে। আর প্রভাব ফেলেছে রাজ্যের রাজনীতিতে — মূলত বামপন্থীদের বিরোধী শিবিরে।  
তৃণমূল বাধা দিচ্ছে। ভয় দেখাচ্ছে। হামলা করছে। বিজেপি তার কর্মীদের বামপন্থীদের দেখাদেখি মিছিল করতে নির্দেশ দিচ্ছে। কিন্তু শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর, মহিলা, যুব এবং ছাত্রদের পদযাত্রায় বাধা কিংবা বিভ্রান্তি, কোনটিই তৈরি করতে পারছে না। 
কারণ — ইস্যু। কাজ কেন নেই, কাজ চাই। মূল দাবি পদযাত্রার। জবাব দেওয়ার কথা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের। রেগার মজুরি কোথায়? জবাব দাবি করা হচ্ছে দুই সরকারের কাছেই। লুটের পঞ্চায়েত চাই না — সোচ্চার গ্রাম। মূলত ক্ষোভ মমতা ব্যানার্জির দল, প্রশাসন, সরকারের বিরুদ্ধে এই প্রশ্নে। কিন্তু ১৮টি সাংসদ, একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিধানসভায় অতগুলি বিধায়ক নিয়েও বিজেপি রাজ্যে পঞ্চায়েত থেকে নবান্ন, কোনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। অন্যদিকে সারদা, নারদ — কোনটিরই দোষীদের শাস্তি হয়নি। বরং ‘অভিযুক্ত’রা অনেকেই এখন বিজেপি-তেই।
ফলে লড়াই লাল ঝান্ডা হাতেই হবে। এই উপলব্ধির প্রকাশ ঘটছে পদযাত্রাগুলিতে।
রবিবার ছিল তার অন্যতম প্রমাণ। 
মিনাখাঁয় যেমন। রবিবার উত্তর ২৪পরগনার সুন্দরবনের এই ব্লকের বামনপুকুর অঞ্চলে পদযাত্রার ঘোষণা ছিল সিআইটিইউ, কৃষকসভা, খেতমজুর ইউনিয়নসহ অন্যান্য গণ সংগঠনগুলির। পুলিশ জানত। গ্রামবাসীরা জানতেন। পঞ্চায়েতের ১১টি বুথ এলাকাতেই পদযাত্রা ঘুরবে, ঘোষণা এমনই ছিল। কিন্তু তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তাই পদযাত্রা আটকাতে শনিবার রাত থেকেই হুমকি দেয় তারা। পদযাত্রা শুরুর সময়, হাজির হয় তৃণমূলের কুখ্যাত বাইকবাহিনী। পুলিশকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় হুমকি উড়িয়ে পদযাত্রীরা অঞ্চলে ১৫ কিমি পদযাত্রা করেন।
এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপেও পদযাত্রা হয়েছে রামকৃষ্ণ এবং নারায়ণপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। আমফানের পরে ক্ষতিগ্রস্তদের সামগ্রী, চাল-ত্রিপল-বাড়ির টাকা, দেদার চুরি করেছে তৃণমূল এই অঞ্চলগুলিতে। তার বিরুদ্ধে ক্ষোভই প্রতিফলিত হয়েছে পদযাত্রায়।
এদিন রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলার অনেক গ্রামাঞ্চলে এমন পদযাত্রা হয়েছে। 
বাঁকুড়ায় কী দেখা গেছে? 
জেলার পূর্বপ্রান্তের কোতুলপুর, সোনামুখী, বিষ্ণুপুর,ইন্দাস থেকে শুরু করে পশ্চিমের শালতোড়া, ছাতনা, উত্তরের মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, দক্ষিণের রাইপুর, তালডাংরা, সিমলাপাল, খাতড়া, রানিবাঁধ, হিড়বাঁধ আজ সব প্রান্তেই প্রতিদিন সকাল থেকে মানুষ বেরিয়ে পড়ছেন গ্রাম মিছিলে। হাতে থাকছে লাল ঝান্ডা, গলায় দাবির প্ল্যাকার্ড ঝুলছে। রবিবার বাঁকুড়ার শুনুকপাহাড়ি থেকে আধারথোল অঞ্চলের গ্রামে পদযাত্রা শুরু হওয়ার মুখেই অসুস্থ শরীর নিয়ে নতুন গ্রাম থেকে হাজির হলেন বৃদ্ধা জায়রুন বিবি। অনেকেই অবাক হলেন। জানতে চাইলেন কেন এই শরীর নিয়ে এলেন। তাঁর কথা: ‘ কেন কী হয়েছে আমার? ঠিক আছি, এই ঝান্ডাটা যখন ধরে ছিলাম তখন গাঁয়ের মানুষের পেটে ভাত জুটত না, একদিন লড়াই করে ভাতের ব্যবস্থা করেছি। সেই সরকার চলে গেছে। এখন ফের ভাতের টান পড়েছে, টান পড়েছে ভালো করে বেঁচে থাকার জায়গায়। খালি চিন্তা কাল কী করব। এই অবস্থাটারও পরিবর্তন করতে হবে। করতে হবে লাল ঝান্ডা দিয়েই’। একই কথা বললেন ইরফান মল্লিক, শ্যামপুরের ফুলটুসি মাল, ধোবার গ্রামের দিলীপ বাউরি, সাবিত্রী মালেরা। এঁরা জানান, এখনকার পঞ্চায়েত, ব্লক, এমএলএ, এমপি আমাদের কিছুই করবে না। তাবলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব? আমরা ভালো করে বাঁচতে চাই, তার জন্যই এই রাস্তায় নামা।
এদিন ভালুকগেঞ্জা গ্রামে খেতমজুর প্রণব বাউরি, সন্তোষ মাল, কোতুলপুরের নিমাই কৈবর্তরা জানান, ধান কাটার সময় হয়ে গেল। মেসিনে ধান কাটবে বহু জায়গায়। খেতমজুরের কাস্তে ঘরে পড়ে থাকবে। একটা আশার দিক ছিল আলু চাষ। সার ও চলতি আলুর দাম এই অবস্থা হলে কৃষক কিভাবে চাষ করবেন? কৃষক বসে গেলে খেতমজুরদের কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখেছেন। কোথাও কোনও কাজ নেই। কাজের জন্য শহরে ছুটে আসছেন তাঁরা। এখানেও বালি, ইট, পাথরের অভাবে নির্মাণের কাজ বন্ধ। প্রতি মুহূর্তে অন্ধকার নেমে আসছে। এই অবস্থায় লাল ঝান্ডার গ্রাম মিছিলে মানুষের হাঁটা এটা একটা নতুন মাত্রা দিয়েছে গ্রাম বাঁকুড়ায়। মানুষই অর্থ সংগ্রহ করছেন। গ্রামের মানুষ পদযাত্রীদের খাওয়াচ্ছেন। মিছিলে যোগ দিচ্ছেন।

Comments :0

Login to leave a comment