Gangetic Dolphin and Ganga Vilas

মোদীর গঙ্গাবিলাস ক্রজে বিপন্ন হবে ডলফিন, মৎস্যজীবীরাও

জাতীয় রাজ্য

Gangetic Dolphin and Ganga Vilas

বারাণসী থেকে ডিব্রুগড়ের দীর্ঘ জলপথে বিলাসযাত্রা চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আশঙ্কা, এই ক্রুজ পর্যটন বিপদ আরও বাড়াবে গাঙ্গেয় ডলফিনের। যাত্রাপথে একাধিক জায়গায় ডলফিনের আবাস। শঙ্কা রয়েছে জলজ সম্পদের ক্ষতিরও। যার প্রভাবে মৎস্যজীবীরা জীবিকা হারানোর মুখে পড়তে পারেন।  

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর প্রদেশের বারাণসী শহর থেকে "বিশ্বের দীর্ঘতম নদী ক্রুজ" চালু করেছেন। বিলাসবহুল সমুদ্রযাত্রাটি ৫১ দিন ধরে বাংলাদেশের ঢাকা হয়ে আসামের ডিব্রুগড় পর্যন্ত ৩,২০০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে ২৭টি নদী প্রণালী অতিক্রম করবে। 

 

সারা ভারত মৎস্যজীবী এবং ফিশারি শ্রমিক ফেডারেশন (AIFFWF)’র সর্বভারতীয় সভাপতি দেবাশিস বর্মনও এই আশঙ্কার শরিক। ‘গণশক্তি’-কে তিনি বলেছেন, ‘‘তাৎক্ষণিকভাবে এই ধরনের পর্যটনের প্রভাব বোঝা অনেকসময় যায় না। কিছুদিন গেলেই প্রভাব বোঝা যায়। সুন্দরবন এলাকায় জলপথ পর্যটনের নানা প্রভাব পড়ছে। এখানেও পড়বে।’’ 

তিন ডেকের বিলাসবহুল জলযান এমভি গঙ্গাবিলাস (MV Ganga Vilas) ১৮টি স্যুট সহ, ভারতে ক্রুজ পর্যটনের মোড় ঘোরানো উদ্যোগ বলে প্রচার করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। 

ক্রুজের পথে পড়ছে পাটনা, কলকাতা, ঢাকা, গুয়াহাটিও। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশবাদী এবং সংরক্ষণবাদীরা। তাঁরা বলছেন যে সমুদ্রের ওপর দিয়ে এই যাত্রার ফলে গঙ্গায় ডলফিনের জীবনযাপনের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।

 

বর্মন মনে করছেন যে কেবল ডলফিন নয়। প্রভাব পড়বে জলজ প্রাণী এবং সম্পদের ওপর। স্বাভাবিক গতিপথে বাধা তৈরি হবে। তিনি বলছেন, ‘‘নদীর ওপর নির্ভর করে থাকে যাঁদের জীবিকা, সেই লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হবেন।’’ 

এমভি গঙ্গা বিলাস কৈথি গ্রামের মধ্য দিয়ে যাবে বারাণসী ছাড়িয়েই। বারাণসী ছাড়িয়ে ৩০ কিমি দূরে গঙ্গা এবং গোমতী নদীর সঙ্গমস্থলে এই গ্রাম। যেখানে জলের গভীরতা এবং চারপাশে ধীর স্রোত বিপন্ন ডলফিনের অন্যতম নিরাপদ আশ্রয়। এই প্রজাতির ডলফিনের বৈজ্ঞানিক নাম প্ল্যাটানিস্টা গ্যাঞ্জেটিকা (Platanista Gangetica)। দক্ষিণ এশিয়ার মিষ্টি জলের ডলফিনের দু’টি প্রজাতির মধ্যে একটি। অপরটি প্ল্যাটানিস্টা মাইনর (Platanista Minor) বা সিন্ধু নদের ডলফিন, পাকিস্তানে এবং উত্তর ভারতের বিপাশা নদীতে পাওয়া যায়। 

গঙ্গা নদীর ডলফিন জল দূষণ, অত্যধিক জল উত্তোলন এবং চোরাশিকার সহ অনেকগুলি বিপদের সম্মুখীন ইতিমধ্যেই।

‘‘ডলফিনের জন্য এমনিই ঝুঁকি রয়েছে। তার ওপর এই পর্যটন একটি বিপজ্জনক প্রস্তাব,’’ বলেছেন রবীন্দ্র কুমার সিনহা। যাঁর প্রয়াসেই সরকারকে ১৯৯০-এর দশকে গাঙ্গেয় ডলফিনকে একটি সংরক্ষিত প্রজাতি হিসাবে ঘোষণা করতে বাধ্য করেছিল। 

সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘‘সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ডলফিনের সংখ্যা বেড়েছে, গঙ্গায় প্রায় ৩,২০০টি এবং ব্রহ্মপুত্রে ৫০০টি। উন্নত জল এবং সংরক্ষণের উদ্যোগের কারণে। তবে ক্রুজ পর্যটন এই সুফলগুলিকে নাকচ করে দিতে পারে।’’ 

সিনহা মনে করেন যে গাঙ্গেয় ডলফিনগুলির ভবিষ্যৎ চীনের বাইজি ডলফিনের মতো হতে পারে। ইয়াজি নদীতে যান চলাচল বৃদ্ধির কারণে ২০০৬ সালে কার্যকরীভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এই প্রজাতির ডলফিনকে।

গাঙ্গেয় ডলফিনগুলি ‘‘প্রায় অন্ধ’’ এবং প্রতিধ্বনি অনুভূতি তীব্র বলে ঘোলা জলেই খাবারের জন্য এদিক সেদিক যেতে পারে। বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান সেটেলমেন্টস’র ইকোহাইড্রোলজিস্ট জগদীশ কৃষ্ণস্বামী ‘গার্ডিয়ান’-কে বলেছেন: ‘‘ক্রুজ, পণ্যবাহী জাহাজ এবং যান্ত্রিক যান চলাচল বাড়তে থাকলে জলের নিচের শব্দ দূষণ হয়। ফলে ডলফিনের স্বাভাবিক ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এদের বেঁচে থাকাকেই কঠিন করে তোলে।’’ 

বর্তমানে, জাতীয় জলপথ-১ (NW-1) গঙ্গা এবং জাতীয় জলপথ-২ (NW-2) ব্রহ্মপুত্র রুটে প্রায় ১০০টি ক্রুজ চলাচল করে। মোদী সরকার সংখ্যাটি ১০ গুণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এই পর্যায়ে উন্নয়নহলে নদীর বাস্তুতন্ত্রের উপর বিশাল বিরূপ প্রভাব পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রের মতো বিস্তৃত নয় বলে নদীর প্রাণী সহজে সরতে পারে না। ফলে ড্রেজিংয়ের মতো কার্যকলাপের সময়ও ডলফিনদের সরে যাওয়ার উপায় থাকবে না। 

দেবাশিস বর্মন বলছেন, ‘‘নদীর স্বাভাবিক গতিপথে চাপ সৃষ্টি হলে বাস্তুতন্ত্রে ক্ষতি হবেই। নতুন ক্রুজের পরিকল্পনায় এ সব বিবেচনায় রাখা হয়েছে কিনা স্পষ্ট নয়। পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রে ক্ষতি হলে সহজে তা পূরণ করা যায় না। বহু মানুষ বিপন্ন হচ্ছেন এবং হবেন।’’ 

মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি মোদী সরকারের আরেক প্রকল্প ‘সাগরমালা’ ঘিরে একই যুক্তিতে প্রতিবাদে শামিল। বেসরকারি হাতে বন্দর পরিকাঠামো তৈরির এই প্রকল্পে পরিবেশের ক্ষতি, জীবিকার ক্ষতি, বলছেন তাঁরা। এবার গঙ্গাবিলাস ক্রুজ ঘিরে একই অভিযোগ।  

Comments :0

Login to leave a comment