বস্তি উচ্ছেদ করতে এসে বস্তিবাসী মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে হলো ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে। বৃহস্পতিবার বিকল্প পুর্নবাসন বিহীন উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে মুখোমুখী লড়াই দিয়ে প্রতিরোধ গাথা তৈরি করলেন দুর্গাপুর তামলা বস্তির মানুষ। ডিএসপি কর্তৃপক্ষের হটকারি অভিসন্ধী মূলক ও প্ররোচনা মূলক কাজের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ) লেলিয়ে দিয়েছিল ডিএসপি কর্তৃপক্ষ বস্তিবাসী মানুষদের ওপর। সিআইএসএফ’র বেপরোয়া লাঠিচার্জে মহিলা সহ বস্তিবাসী অনেকে আহত হয়েছেন। প্রতিবাদী মানুষ গান্ধীমোড়-মায়াবাজার রাস্তায় অবরোধ তৈরি করেন। পাঁচ ঘন্টা ধরে মানুষের বিক্ষোভে অবরুদ্ধ ছিল রাস্তা। ঘটনাস্থলে পুলিশ বাহিনী ছুটে আসে।
এদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দুর্গাপুর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড, তামলা বস্তিতে উত্তেজনা তৈরি করে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। শোনা যাচ্ছে, কারখানার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের জন্য সেইল এগিয়ে এসেছে। তামলা সহ অনেকগুলি বস্তির জমি চাই কর্তৃপক্ষের। পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি বলেছে, আমরা শিল্পের বিরোধী নই। দীর্ঘ ৪০/৫০ বছর ধরে আমরা বস্তিতে বসবাস করছি। দুর্গাপুর নগর নিগমকে কর দিচ্ছি। রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল সরবরাহ হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে। পূর্বপুরুষ এসেছিলেন ডিএসপি তৈরির সময়। কয়েক প্রজন্ম ধরে আমরা বস্তিতে বসবাস করছি। জীবিকা বজায় থাকে এমন জায়গায় আমাদের পুনর্বাসন দাও। উচ্ছেদ মানবোনা।
বস্তিবাসীদের সঙ্গে শুনানী শুরু হয়েছে ডিএসপি’র প্রশাসনিক ভবনে। এরই মাঝে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এদিন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ তামলা বস্তি এলাকা পাঁচিল দিয়ে ঘেরার জন্য ভিত পুজোর করতে চলে আসে। একটা প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির রাজ্যনেতা লখীরাম মুর্মু এই বস্তির বাসিন্দা। অনেক আদিবাসী মানুষ বসবাস করেন বস্তিতে। আদিবাসী মানুষ যেই মাঠে হুল দিবসের উৎসব করেন, সেই মাঠেই চলছিল ‘ভূমি পূজন’ বা ভিত পুজোর আয়োজন। বস্তিবাসী মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদী মানুষের ওপর সিআইএসএফ বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। তুমুল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে সমস্ত বস্তিবাসী মানুষ ঘর ছেড়ে পথে নেমে আসেন। বস্তিবাসী মানুষ গান্ধীমোড়-মায়াবাজার রাস্তায় বসে পড়েন পিএনবি ব্যাঙ্কের কাছে। মানুষ প্রশ্ন তোলেন, সিআইএসএফ কেনো লাঠি চালিয়েছে? ওদের কমানডান্টকে ক্ষমা চাইতে হবে।
সিআইটিইউ জেলা সাধারণ সম্পাদক, প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বস্তিবাসী মানুষদের ওপর সিআইএসএফ-এর লাঠি চালানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজ্য পুলিশের এলাকায় সিআইএসএফ লাঠি চালাতে পারেনা। জেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ প্ররোচনা মূলক কাজ করেছে। সিআইএসএফ-এর বেআইনী লাঠিচার্জের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি জেলা শাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ২/১ দিনের মধ্যে নতুন জেলা শাসক দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। তাঁর সাথে আমি এই নিয়ে কথা বলবো। তিনি আরো বলেন, প্রকল্প সম্প্রসারণ, জমি অধিগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে সেইল-এর পুনর্বাসন প্যাকেজ রয়েছে। আলোচনা করার জায়গা রয়েছে। এক সময় আমি স্টিলের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে ছিলাম। বার্নপুরে সাঁতা গ্রামে গ্রাবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানো হয়েছিল।
এদিন প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে প্রতিবাদী মানুষ গান্ধীমোড়- মায়াবাজার রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা হস্তক্ষেপ করেন। মাইকে পুলিশের পক্ষ থেকে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, খুব শীঘ্র কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বস্তিবাসী মানুষদের আলোচনার ব্যবস্থা করা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ বস্তির জমি নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবেনা।
Comments :0