Madhyamik results

মাধ্যমিকের ফলাফলে পাশের হারে পিছিয়ে ছাত্রীরা

রাজ্য

মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের মধ্যে ছাত্রীদের হার বেশি। এবছর পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৯ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪২৫ জন। ছাত্রদের পাশে হার ৮৯.১৯ শতাংশ, ছাত্রীদের  ৮৪.৩৯ শতাংশ। উত্তীর্ণ ৮ লক্ষ ১৪ হাজার ৪৪০ জনের মধ্যে ১০.৫৭ শতাংশ ছাত্র অকৃতকার্য হয়েছেন, সেখানে ১৫.৪১ শতাংশ ছাত্রী অকৃতকার্য হয়েছে। যে সকল পরীক্ষার্থীরা পুনরায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন (সিসি) তাদের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। মাত্র ৩৭.৬৯ শতাংশ ছাত্রী পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে এবছর পাশ করতে পেরেছে। এমনকি ৬৬ জনের ‘প্রভিশনাল মেরিট লিস্ট’এও মাত্র ১১ জন ছাত্রী রয়েছে। 
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অবশ্য এ বিষয়ে বলেন, ‘যেভাবে স্কুলে আমাদের কর্মসূচিগুলো চলে এবং উৎসাহ দেয়, তার সামাজিক সুফল আমরা দেখবোই। জেন্ডার এমপাওয়ারমেন্টের কথা বলি, তার প্রতিফলন এটা হয়ে চলেছে। বছর বছর ক্রমশ সংখ্যাটা বাড়ছে।’যদিও সরকারি শিক্ষায় ছাত্রীদের পিছিয়ে থাকার প্রসঙ্গে পর্ষদ সভাপতির কোনও উত্তর মেলেনি। পর্ষদ পরীক্ষায় অধিক ছাত্রীর সংখ্যার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষার  শিকড় পশ্চিমবঙ্গের ভাবনা এবং সংস্কৃতির গভীরে পৌঁছে গেছে বলে সাধুবাদ জানাচ্ছে, অথচ সেই ছাত্রীরা শিক্ষাগত দিক থেকে কতটা উন্নত হলো, তা নিয়ে কোনও সদুত্তর নেই পর্ষদের কাছে।  
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে ফর্ম ফিলাপ করেও পরীক্ষায় বসেনি ৩ হাজার ৬৮ জন। গত বছরের তুলনায় এবছর সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ১১৮। অপরদিকে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য রাজ্য বাজেটে কন্যাশ্রী প্রকল্পের বরাদ্দ চল্লিশ শতাংশের বেশি কমিয়েছে সরকার এই যুক্তিতে যে, রাজ্যের প্রচুর ছাত্রী এই সুবিধা পাচ্ছে, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণের সংখ্যা কমার ফলে বৃত্তি গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে, সেই  অনুযায়ী বরাদ্দও কমেছে। একথা ঠিক উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু যত সংখ্যক ছাত্রী মাধ্যমিকে পাশ করল তার  কত শতাংশ কলেজে বা অন্যান্য বৃত্তিমূলক কোর্সে ভর্তি হলো অথবা উচ্চশিক্ষা থেকে কত সংখ্যক ছাত্রী ছিটকে গেছে সে পরিসংখ্যান নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য সরকার সেই সময়ে করেনি। পাশাপাশি যখন বারবার স্কুলছুট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকার তাকে অস্বীকার করছে। অথচ উত্তীর্ণের সংখ্যা কমার কোনও যুক্তিপূর্ণ কারণ খুঁজে দেখার প্রবণতা সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। ১২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যর বাজেট ঘোষণার সময় সরকার ইকনমিক প্রিভিউতে দেখিয়েছে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কন্যাশ্রীর ১০০০ টাকার বার্ষিক বৃত্তি পাচ্ছে মোট ১৫ লক্ষ ৭৫ হাজার এবং এককালীন ২৫ হাজার টাকার বৃত্তি দেওয়া হয়েছে মোট ২ লক্ষ ১০ হাজার। গত ১১ বছর ধরে বর্তমান  রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চালাচ্ছে। অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অবিবাহিত পাঠরত ছাত্রীদের বার্ষিক হাজার টাকা এবং ১৮ বছর পেরিয়ে গেলে এককালিন ২৫ হাজার টাকা দেয়। তারপর তৃতীয় বিভাগে কলেজে পাঠরত ছাত্রীদেরও দু’হাজার এবং আড়াই হাজার টাকা বৃত্তি দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য স্কুলে ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ানো, বাল্য বিবাহ কমানো। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে ল্যান্সেট এবং জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে বিবাহের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্থান বিহারের পরেই।  
রাজ্যে স্কুলছুট, নাবালিকা বিবাহের পরিসংখ্যাকে সুচতুরভাবে এড়িয়ে গিয়ে শিক্ষা প্রকল্পগুলির গুণগান গাইলেও তা শেষপর্যন্ত সরকারি শিক্ষা কাঠামোর বিপর্যস্ত অবস্থাকে চাপা দিতে পারছে না। চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে ছাত্রীদের পিছিয়ে পড়ার যে চিত্র উঠে আসছে তা রাজ্যের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নের বিষয়টিকে গুরুতর প্রশ্নের সম্মুখীন দাঁড় করিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment