বর্ণবাদী, অভিবাসী বিরোধী দাবি, মিথ্যাচার এবং ভীতিপ্রদর্শনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর শহরতলি অরোরা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গণ নির্বাসন এজেন্ডার জন্য দক্ষিণপন্থীদের রাজনৈতিক উন্মাদনার রঙ্গমঞ্চ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম গণ নির্বাসন অভিযান শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার ফলে দেড় থেকে দুই কোটি অভিবাসীকে বহিষ্কার করা হবে যা শ্রমজীবী সম্প্রদায় এবং পুরো মার্কিন অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার গণ নির্বাসন প্রচেষ্টার নাম দিয়েছেন ‘‘অপারেশন অরোরা’’।
অরোরার লোরি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ‘দ্য এজ’এ একদল সশস্ত্র ব্যক্তিকে একটি ভাইরাল ভিডিও দিয়ে এই উন্মাদনার সূত্রপাত। এই ভিডিওটি দক্ষিণপন্থী সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়া হয়, এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের পাশাপাশি পুরো শহরটি ভেনেজুয়েলার গ্যাং ‘ট্রেন ডি আরাগুয়া’ দখল করে নিয়েছে বলে দাবি করা হয়। এই দাবিগুলি অরোরা সিটি কাউন্সিলের সদস্য ড্যানিয়েল জুরিনস্কি সহ দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দ্বারা আরও উসকে দেওয়া হয়।
যদিও অরোরার মেয়র, খোদ রিপাবলিকান, মাইকেল কফম্যানসহ কর্মকর্তারা এই ধরনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। দ্য এজের বাসিন্দারা তাদের বাড়িওয়ালাকে দোষারোপ করে দাবি করেছেন যে ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক ভিত্তিক সিবিজেড ম্যানেজমেন্ট ভবনের মেরামতকে অবহেলা করার অজুহাত হিসাবে অভিবাসী বিরোধী উন্মত্ততাকে ব্যবহার করা হয়েছে।
যদিও এতে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক কৌশলকে পুঁজি করে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা কমে যায়নি। ট্রাম্প নিজেও একাধিকবার তার গণ নির্বাসন পরিকল্পনা প্রচারের জন্য শহরটিকে ঘিরে উন্মাদনাকে ব্যবহার করেছেন। ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা অভিবাসী অপরাধে জর্জরিত’ অরোরার একটি চিত্র এঁকেছেন, তবে কলোরাডো ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের শেষের দিক থেকে অরোরা এবং বৃহত্তর ডেনভার অঞ্চলে অপরাধ হ্রাস পাচ্ছে। ২০২৪ সালে অরোরায় ৩৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তথ্য ধারাবাহিকভাবে দেখায় যে অভিবাসীরা, বিশেষত অ-নথিভুক্ত অভিবাসীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় কম হারে অপরাধ করে।
লাখ লাখ শ্রমিককে বহিষ্কারের পক্ষে সমর্থন জোগাতে কীভাবে অরোরা শহর অভিবাসী বিরোধী মিথ্যাচারের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলো?
সিবিজেড ম্যানেজমেন্টের অভিবাসী ভাড়াটেদের নিয়ে কাজ করা ইস্ট কলফ্যাক্স কমিউনিটি কালেক্টিভের (ইসি৩) অরোরার সংগঠক নেট কাসা বলেন, ‘ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য অভিবাসীদের ‘দানবীয়’ করে তোলার একটি সুযোগ দেখেছিলেন। ইসি ৩ এই অঞ্চলে গণ নির্বাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৃণমূল স্তর এবং অভিবাসী গোষ্ঠীগুলির সাথে জোট করেছে। ‘‘তিনি এই অভিবাসীদের গ্যাং সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন, যাতে তিনি তাদের ‘দানবীয়’ করে তুলতে পারেন, যাতে লোকেরা তাকে ভোট দিতে উৎসাহিত হয়।
কলোরাডো ইমিগ্র্যান্ট রাইটস নেটওয়ার্ক এবং পার্টি ফর সোশ্যালিজম অ্যান্ড লিবারেশনের মতো সংগঠনের পাশাপাশি ইসিথ্রি ট্রাম্পের গণ নির্বাসন কর্মসূচির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সম্প্রদায়গুলিকে সংগঠিত করছে। এই পরিকল্পনাগুলির মধ্যে ২৫ জানুয়ারী একটি বিক্ষোভ করার কথা রয়েছে, যা অরোরা এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন, অরোরা অভিবাসী সুরক্ষা নেটওয়ার্ক, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার-কলোরাডো কেন্দ্র এবং কলোরাডো পিপলস অ্যালায়েন্স সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে।
দক্ষিণপন্থী হুমকির সময় বাসিন্দাদের সুরক্ষিত রাখার জন্য এই ভবনগুলিতে কমিউনিটি টহল প্রদানের প্রচেষ্টা চলছে।
world
আমেরিকায় গুজব ছড়িয়ে ‘‘অপারেশন আরোরা’’ দক্ষিণপন্থীদের
×
Comments :0