প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি শক্তিশালী করবে এই বাজেট। উন্নত ভারত গড়ার পক্ষে শক্তিশালী পদক্ষেপ।
অর্থ মন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ফের বড় মাত্রায় বাড়ানো হলো মূলধনী বিনিয়োগ। যা থেকে পরিকাঠামোয় বিনিয়োগের হিসেব পাওয়া যায়।
বাস্তবে বাজেট সঙ্কোচনের দিকে ঠেলে দেওয়ার মতো। পরিকাঠামো বিনিয়োগে বরাদ্দ বৃদ্ধির ঘোষণার উলটোপিঠেই ব্যাপক মাত্রায় কমেছে ভরতুকি, কমেছে চলতি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও।
খাদ্য, সার এবং পেট্রোলিয়ামে ভরতুকি ছাঁটাই হয়েছে মারাত্মক মাত্রায়। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের সংশোধিত বরাদ্দ (যত টাকা খরচ হবে মার্চের শেষে) ৫.২২ লক্ষ কোটি টাকা। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে, এই তিন খাতে, ভরতুকির বরাদ্দ মাত্র ৩.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারি। সরাসরি সরকারি পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছেন ৯৮ শতাংশ ভারতবাসী। তাঁদের হতাশই করছে বাজেট।
উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে রেগায় গতবারের খরচের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া। গ্রামাঞ্চলে কাজের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়ে এই আইনি কাজের নিশ্চয়তা প্রকল্প।
গতবারের বাজেটে মূলধনী ব্যয় প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। প্রশ্ন হচ্ছে তাতে কর্মহীনতার হার কমছে না কেন। সিএমআইই’র সমীক্ষা দেখাচ্ছে গ্রামে কর্মহীনতার হার ৭.৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে খানিক কমে ৬.৪৮ শতাংশ।
শহরে ১০ শতাংশে পৌঁছেছিল কর্মহীনতার হার। সামান্য নেমে হচ্ছে ৮.৫৫ শতাংশ। সারা ভারত হিসেবে ধরলে কর্মহীনতার হার দাঁড়িয়ে ৭.১৪ শতাংশেই। আগের মাসে তা ছিল আরও বেশি, ৮.৩০ শতাংশ।
২০১৯’এ সরকারি পরিসংখ্যান জানিয়েছিল কর্মহীনতার হার ৬.৯ শতাংশ। চল্লিশ বছরে সর্বোচ্চ। লকডাউন-কোভিড পরিস্থিতির আগেই সেই মাত্রায় পৌঁছেছিল দেশ। লকডাউনের তিন বছর পরও কর্মহীনতার হার সেই চল্লিশ বছরের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনাতেও বেশি।
পরিকাঠামো বরাদ্দ হলে কর্মহীনতার হার নামছে না কেন, সে প্রশ্ন নিয়ে বাজেট ভাষণে আলোচনাই করেননি অর্থ মন্ত্রী।
বাজেট নথি জানাচ্ছে, মোট ব্যয় বরাদ্দ ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। অনুমান। গতবারের তুলনায় বৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধির হার বিবেচনায় রাখলে এই বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে প্রসারণের বড় ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা নেই।
মোট ব্যয়ের থেকে আলাদা করে চলতি খাতে ব্যয়ের হিসেব নিলেও স্পষ্ট হচ্ছে বাজেট সঙ্কোচনেরই। সরকারি কোষাগার থেকে বেতন, ভাতার মতে খরচ হয় এই খাত থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষেই ৩৪.৫৯ লক্ষ কোটি টাকা টাকা খরচ হবে বলে ধরা হচ্ছে। অথচ আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য বাজেট বরাদ্দ ৩৫.০২ লক্ষ কোটি টাকা। চলতি খাতে ১ শতাংশ বৃদ্ধি করার দিকেও এগোয়নি বাজেট।
অর্থনীতিতে সঙ্কটের বড় কারণ হিসেবে ধরা পড়েছে মারাত্মক আয় বৈষম্য। যে কারণে অতিধনীদের ওপর সম্পদ এবং উত্তরাধিকার কর বসিয়ে কোষাগারে আয়ের দাবি উঠেছে। তা হয়নি। দেখা যাচ্ছে সরাসরি আদায়ের প্রত্যক্ষ করের প্রায় সমান মাত্রায় জিএসটি’র মতো পরোক্ষ কর বাবদ আদায়ের ভাবনা আঁকড়ে রয়েছে কেন্দ্র।
প্রত্যক্ষ কর এবং পরোক্ষ করের অনুপাত ৫৪.৪ শতাংশ এবং ৪৫.৬ শতাংশ। ফলে আয় বৈষম্য বাড়বে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমবে না। অথচ কেন্দ্রেই আর্থিক সমীক্ষায় বিশ্ব বাজারে মন্দার অনুমান করা হয়েছে। অর্থনীতিকে সেই পরিস্থিতিতে গতিশীল রাখতে পারত অভ্যন্তরীণ চাহিদার সম্প্রসারণ। কিন্তু বেশি মানুষের পকেট থেকেই জিএসটি বা জ্বালানির ওপর বসানো কর থেকে রাজকোষ ভরার পথ নেওয়া হয়েছে বাজেটে।
Comments :0