প্রবীর দাস- সন্দেশখালি
খুলনায় মাফিয়া শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের পোষ্টারের পোষ্টার পড়লো বরিবার। এদিকে ৩ মার্চ তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক ব্যানার্জি আসতে চলেছেন সন্দেশখালিতে। নতুন তৃণমূল ফর্মূলায় সরগরম সন্দেশখালি। দলীয় পতাকায় ধামাখালি ফেরিঘাট সহ সর্বত্র সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। অন্যদিকে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠলো বেড়মজুর। নামলো র্যাফ। শুরু হয়েছে রুটমার্চ। সেখানকার কাছারি পাড়ায় তৃণমূলের অঞ্চল সম্পাদক অজিত মাইতিকে ধাওয়া করলো গ্রামবাসীরা। তাদের অভিযোগ শুক্রবার তার বাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছিল এবং অজিত মাইতিকে মারধর করার অভিযোগে ৭০ জনের নামে অভিযোগ করেছে অজিত। সেই আক্রোশে তাকে ধাওয়া করলেন গ্রামবাসীরা। ধাওয়া করলে স্থানীয় সিভিক পুলিশের বাড়তি লুকিয়ে পড়ে। সেখানে গ্রামবাসীরা তাকে সবক শেখাতে জড়ো হয়। এ যেন মঙ্গলকোটের ছায়া বেড়মজুরে। সেদিন তৃণমূলের নেতা মানস ভুঁইয়াকে গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে ধুতি উঁচিয়ে ছুটতে দেখা গিয়েছিল। এদিনও সেই একই চিত্র বেড়মজুরে। তৃণমূল নেতা ছুটছেন প্রাণ বাঁচাতে। তেভাগার মাটিতে গ্রামবাসীদের এহেন আন্দোলন যেন ফিরে এলো ১৯৪৬ সালের জমিদার জোতদারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ছবি। গ্রামবাসীদের দাবি অজিত মাইতিকে গ্রেপ্তার করতে হবে এখুনি। পুলিশ আড়াল করছে। এবার পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লো তারা। মহিলারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে হাত উচিয়ে বলে শাখা সিঁদুর পড়ে কাপড় পড়ে থাকুন। আপনারা অজিত মাইতিকে ধরে শাস্তি দেব। ও আমাদের জমি কেড়েছে। দিনের পর দিন অত্যাচার সহ পাহাড় প্রমান অভিযোগ রয়েছে। সিভিক পুলিশ বিপ্লব দাসের বাবা গৌরদাসের বাড়িতে অজিত মাইতি ঢুকে ভিতর থেকে তালা দিয়ে দেয়। বাড়ির মালিক গৌর দাস বাড়িতে ঢুকতে পারছে না। অজিত মাইতি জানায় বিপ্লব আমায় ঘরে ঢুকতে বলেছে। এই বটতলাতে ২০১৯ সালে আমাকে মারধর করে তৃণমূল করতে বাধ্য করেছিল। আমি কোন অন্যায় করিনি। অন্যায় করে থাকলে আমি ক্ষমা চেয়ে নেব। আমি ১০০ দিনের টাকা আমফানের টাকা লুট করি নি। এলাকায় বিরাট পুলিশ বাহিনী।
বেড়মজুর যখন ফের উত্তপ্ত হলো এদিন ঠিক সেই সময় রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু পার্থ ভৌমিককে দেখা গেল ১৪৪ ধারা জারি করা এলাকা কাছারি পাড়ায় কীর্তনের অনুষ্ঠানে গলায় ফুলের মালা পড়ে নাচতে। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করেছে। মানুষের অভাব অভিযোগ শুনতে গ্রামে এসেছেন দুই মন্ত্রী ও শাসকদলের বহিরাগত নেতারা। তারা এদিনও বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তাদের অভিযোগ এতদিন কোথায় ছিলেন? এখন কী করতে এসেছেন? লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়ে আমাদের চুপ করিয়ে রাখতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রী। আমরা লক্ষ্মীর ভান্ডার চাই না। তাঁরা বলছেন জমি ফেরতের ব্যাবস্থা করতে এসেছেন। প্রশ্ন উঠছে তবে কী শাসকদলের নেতা মন্ত্রীরা আইনের উর্দ্ধে।
অবরুদ্ধ সন্দেশখালি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে পৌছাতে পারছেন না কোন বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা। অথচ শাসকদলের নেতা মত্রীরা বিনা বাধায় সেখনে পৌছে যাচ্ছে। শনিবারের পর রবিবারও সন্দেশখালিতে রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু পৌছে যান বিনা বাধায়। পুলিশের ভূমিকায় রয়েছে প্রশ্ন।
সন্দেশখালিতে জনরোষ আঁছড়ে পড়েছে শাহজাহানের অনুগামীদের উপর। শিবু হাজরার পোলট্রি ফার্মের কেয়ার টেকার ভানু মণ্ডলের মিথ্যা অভিযোগের মামলায় জেলে রয়েছেন সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক নিরাপদ সরদার। অথচ রাজ্যের পুলিশ আসল অপরাধী সেখ শাহাজাহানকে গ্রেপ্তার করছে না। পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলছেন সন্দেশখালির মানুষ। শিবু হাজরা, উত্তম সরদাররা গ্রেপ্তার হয়েছে তবুও শান্ত হয়নি সন্দেশখালি। মানুষ চাইছেন শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তারি।
রেশন দুর্নীতি কান্ডে অভিযুক্ত মমতা বানার্জি ও অভিষেক বানার্জির আশীর্বাদ ধন্য সেখ শাহাজাহান পলাতক ৫২ দিন। গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে সে ফেরার। তার দিরুদ্ধে লুক-আউট নোটিস জারি হওয়ার পরেও ফেরার। তাকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সন্দেশখালির জনতা। ইডি’র একটা সূত্রে জানা গিয়েছে, রেশনকাণ্ডে মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে একাধিক তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে এই বাহুবলী নেতার বিরুদ্ধে। বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেনের নথিও কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থার হাতে এসেছে।
রেশন দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়াও সন্দেশখালির গ্রামবাসীদের জমি, ভেড়ি লুঠ, মারধর, মহিলাদের শ্লীলতাহানি সহ একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। জনরোষ আঁছড়ে পড়েছে শাহজাহানের অনুগামী শিবু এবং উত্তমের দখল করা সম্পত্তির ওপর। গ্রামবাসীদের আন্দোলনের চাপে গ্রেপ্তার হয়েছেন উত্তম সরদার এবং শিবু হাজরা। কিন্তু এখনও ফেরার শাহজাহান। দীর্ঘদিন অত্যাচার সহ্য করার পর মানুষ প্রতিরোধে নেমেছেন। ক্যামেরার সামনে মুখও খুলছেন।
রবিবার সকালে সন্দেশখালি যাওয়ার আগে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে ভোজেরহাটে আটকে দেয় পুলিশ। ওই দলে রয়েছেন পাটনা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এল নরসিমহা রেড্ডিও, প্রাক্তন আইপিএস রাজপাল সিং, আইনজীবী চারু ওয়ালি খান্না, আইনজীবী অম প্রকাশ ভিয়াস, প্রবীণ সাংবাদিক সঞ্জীব নায়েক এবং আইনজীবী ভাবনা বাজাজ। পুলিশের সঙ্গে তাদের বচসা শুরু হয়। পুলিশ তাদের সন্দেশখালিতে ঢুকতে বাধা দেয়। পুলিশ জানায় সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পুলিশ বাধা দিলে তাঁরা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এদিন সকালে গ্রেপ্তরা করা হয় আইএসএফ নেত্রী আয়েশা বিবি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেশখালি অশান্তিতে তাঁর ইন্ধন রয়েছে।
এদিন ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভ দেখালেন মাঝেরপাড়ার মহিলারা। ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে তাদের সামনেই তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে হবে। পুলিশের কাছে জবাব চান কেন এখনও তাকে গ্রেপ্তার কর হলো না। তাদের বক্তব্য সরকারী অনুদান চাই না, চাই শাহজাহানের গ্রেপ্তারি। তৃণমূল নেতা বিনয় সরদারের পরিবারকে ধাওয়া করে মারধরের চেষ্টায় পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে। ঘটনায় উত্তেজনা হালদার পাড়ায়।
Comments :0