ঊর্ধ্বগামী মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে মারাত্মক প্রকোপ পড়ছে দানাশস্যের ওপরে। যে খাদশস্যের ওপরে দেশের অধিকাংশ মানুষের মূল নির্ভরতা। জানুয়ারিতে ক্রেতা মূল্যসূচকের হার দাঁড়িয়েছে ৬.৫২ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথাকথিত ‘সহনীয়’ মাত্রার থেকে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় এই হার ৬.৮৫ শতাংশ। কিন্তু এই সাধারণ মূল্যবৃদ্ধির হারের থেকেও বেশি উদ্বেগের হয়ে দাঁড়িয়েছে দানাশস্যের মূল্যবৃদ্ধি। সরকারি হিসাবেই এই হার ১৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। নতুন সিরিজ চালু হবার পর থেকে ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারির এই মূল্যবৃদ্ধির হারই সর্বোচ্চ। এমনকি এক্ষেত্রেও গ্রামে মূল্যবৃদ্ধির হার ১৭.২ শতাংশ।
গমের দাম এক বছর আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এক দশকে এত বৃদ্ধি কখনও ঘটেনি। গমের দাম বৃদ্ধির পিছনে গত রবি মরশুমের দাবদাহের ফলে উৎপাদন কমে যাওয়াকে একটি কারণ হিসাবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু একটি বড় কারণ দেশে গমের দাম বাড়ছে দেখেও সরকারের নির্লিপ্ত মনোভাব। রপ্তানি অব্যাহত থেকেছে। অনেক পরে রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আটার দামও একলাফে অনেকটা বেড়ে গেছে।
গত কয়েক মাসে চালের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রেও বর্ষার তারতম্যে খরিফ মরশুমে চালের উৎপাদন কমে যাওয়াকে কারণ হিসাবে দেখানো হচ্ছে। এর আরও একটি প্রতিক্রিয়া হলো পশুখাদ্যের দরবৃদ্ধি। গোটা ২০২২-এ তা ১০ শতাংশের ওপরে বেড়েছে, গত মে থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে, গত তিন মাসে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
একটানা দানাশস্যের এই দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে আক্রান্ত নিম্ন আয়ের মানুষ। রেশনে বিশেষ যোজনায় মাথাপিছু ৫ কিলোগ্রাম খাদশস্যের যে সুযোগ ছিল নতুন বছরে তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গরিব মানুষের যেটুকু স্বস্তি মিলছিল তা-ও উধাও। উপরন্তু অর্থনীতির স্বাভাবিক হিসাবেই এর ফলে বাজারে দানাশস্যের দাম আরও বাড়বে। যে সময়ে এই যোজনা বন্ধ করা হলো তখন মানুষের আয় কমছে। খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্কট ডেকে আনতে পারে।
খাদশস্যের সঙ্গেই ডিম ও দুধের দাম বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে মূল্যবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ। বৃদ্ধির প্রবণতাও স্পষ্ট। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রেও গড় মূল্যবৃদ্ধি ৬ শতাংশ বা তার বেশি। পোশাক-আশাকের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ, জ্বালানির দাম ১০.৮ শতাংশ, চিকিৎসার ব্যয় বেড়েছে ৬.৪ শতাংশ।
গ্রামাঞ্চলে এই মূল্যবৃদ্ধির বাড়তি প্রভাব পড়ছে। কৃষি থেকে আয় কমছে, মজুরিও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার বৃদ্ধি করে এই সমস্যার কোনও মোকাবিলাই করতে পারবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতার আরেকটি দিক হলো সরকারি হিসাবে বৃদ্ধির হারের থেকে নিম্নবিত্তের জন্য এই হার বেশি। সকলের জন্যই সমান মূল্যবৃদ্ধির তত্ত্ব বাস্তবে খাটছে না। ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ সংস্থার শমীক্ষায় জানানো হয়েছে, জনসংখ্যার তলার দিকের ৫০ শতাংশের কাছে কার্যকরী মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের এই হিসাব। সরকারি মূল্যবৃদ্ধির হারের থেকে এই হার বেশি কেননা উচ্চতর আয়ের ক্ষেত্রে খাদ্যে ব্যয়ের অংশ কমতে থাকে। অথচ নিম্ন আয়ের ক্ষেত্রে সেখানেই খরচ বেশি হতে থাকে। এই একই হিসাবে দেখা যাচ্ছে ওপরের তলার ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধির হার ৬.৯ শতাংশ।
Comments :0