Hunger index

ক্ষুধা সূচকে আরও নামলো ‘বিশ্বগুরু’

জাতীয়

 বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে আরও নামলো বিশ্বগুরুর দেশ। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ২০২৩ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের যে নয়া তালিকা সামনে এসেছে, তাতে ১২৫টি দেশের মধ্যে ১১১তম স্থানে রয়েছে ‘বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ’ ভারত। ২০২২ সালের সমীক্ষায় ১২১ দেশের মধ্যে ১০৭তম অবস্থানে ছিল। এবার আর চার ধাপ নেমে গেল। ‘বিশ্বগুরু’ বলে নিজেকে জাহির করার মতোই মোদী আমলে দেশের মানুষের ক্ষুধা সামলানোয় ভারতের এই অধোগতি অব্যাহত। বিশেষ করে ২০১৫ সালের পর থেকে তালিকায় নেমেই চলেছে ভারত। অথচ পড়শি দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল এমনকি শ্রীলঙ্কাও ভারতের চেয়ে সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে। অবশ্য গতবারের মতো এবারও তালিকা প্রকাশের সাথে সাথেই রিপোর্ট নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে মোদী সরকার। বলেছে, ‘ত্রুটিপূর্ণ হিসাব’। দাবি করা হয়েছে, ‘ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চক্রান্ত। 
বিশ্ব, আঞ্চলিক তথা জাতীয় স্তরে সামগ্রিকভাবে ক্ষুধা মাপতে ও তার উপর নজর রাখার একটা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো এই বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্স (জিএইচআই)। তাতে ভারতের স্কোর ২৮.৭। প্রতিবেশী পাকিস্তান (১০২তম), বাংলাদেশ (৮১তম), নেপাল (৬৯তম) ও শ্রীলঙ্কা (৬০তম) তালিকায় ভারতের থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে। কেবলমাত্র আফগানিস্তান, হাইতি সহ এমনকি ১২টি উপ-সাহারা দেশই এই সূচকে ভারতের থেকে খারাপ জায়গায় রয়েছে। 
জিএইচআই স্কোর চারটি উপাদান সূচকের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। সেগুলি হলো অপুষ্টি, শিশুদের বেড়ে ওঠায় বাধা, শিশু ‘অপচয়’, শিশু মৃত্যুহার। শিশুর অপচয় বলতে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের উচ্চতার তুলনায় কম ওজনকে বলা হয়। রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, বিশ্বের মধ্যে ভারতেই এই শিশুর অপচয় সবচেয়ে বেশি, ১৮.৭ শতাংশ। তাতে স্পষ্টভাবেই ধরা পড়ছে ভয়ানক অপুষ্টিই। তাই শিশুর উচ্চতার তুলনায় ওজন কম হয়। প্রকাশিত সূচক অনুসারে ভারতে অপুষ্টির হার ১৬.৬শতাংশ ও পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুর মৃত্যুহার ৩.১ শতাংশ। এই রিপোর্ট ভারতে ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে মহিলাদের অ্যানিমিয়া ৫৮.১ শতাংশ।
ভারত যদিও ২০০০ থেকে ২০১৫’র মধ্যে ক্ষুধা সামলানোয় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটিয়েছিল। ২০০০ সালে এই স্কোর ছিল ৩৮.৪, ২০০৮’এ তা দাঁড়ায় ৩৫.৫। ২০১৫ সালে তা উঠে এসেছিল ২৯.২’এ। কিন্তু তারপর থেকে অগ্রগতি স্থবির হয়ে গিয়েছে। গত ৮ বছরে ০.৫ পয়েন্ট এগোলেও প্রতিবারই তালিকা নামতে থেকেছে ভারত। ১০০-পয়েন্ট স্কেল অনুযায়ী বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান এখন ২৮.৭। যেখানে ০ হলো সেরা স্কোর (ক্ষুধা নেই) এবং ১০০ হলো সবচেয়ে খারাপ। এই হিসাবে চারতে ক্ষুধার তীব্রতাকে ‘গুরুতর’ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করে।
মোদী আমলে তালিকায় ক্রমশ নামতে থাকায় সাম্প্রতিককালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই তা নিয়ে আপত্তি তোলে ভারত সরকার। রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে দাবি করা হয়, আসলে ভারতের বদনাম করতেই এমন রিপোর্ট বের করা হয়। বৃহস্পতি ২০২৩ সালের রিপোর্টে ভারত ১১১’এ নেমে যাওয়ার সাথে সাথে সরকার বলতে শুরু করেছে, এটা ক্ষুধা মাপার ভুল পদ্ধতি। এর মাধ্যমে দেশের প্রকৃত অবস্থান প্রতিফলিত হয় না। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু বিকাশ মন্ত্রকের কথায়, এই সূচক গুরুতর পদ্ধতিগত সমস্যায় দুষ্ট এবং এটি খারাপ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এই ধরনের রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, দেশের নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, পুষ্টির জোগান দিতে ব্যর্থ হিসাবে ভারতকে তুলে ধরে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের এমন চেষ্টা লাগাতার চোখে পড়ছে। শিশু অপচয়, শিশু অপুষ্টি বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের কোনও মাপকাঠিই মানতে নারাজ ‘বিশ্বগুরু’ সাজতে উদগ্রীব মোদী সরকার।
 

Comments :0

Login to leave a comment