পূর্ব ভারতে আগামী অন্তত চার দিন তাপপ্রবাহ চলবে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের পরিভাষায় ‘হিট ওয়েভ’ উত্তর পশ্চিম ভারতেও চলবে অন্তত আরও দু’দিন। পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় অববাহিকা, বিহারে তাপপ্রবাহ পরপর চারদিন চলবে। ওডিশা, ঝাড়খণ্ড এমনকি সিকিমেও দুই থেকে তিনদিন তাপপ্রবাহ চলবে বলে আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
হিট ওয়েভ বলতে বোঝানো হয় সমতলে যখন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হয়। উপকূল অঞ্চলে অন্তত ৩৭ ডিগ্রি এবং পাহাড়ি এলাকায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে তা তাপপ্রবাহ বলে ধরে নেওয়া হবে। স্বাভাবিকের থেকে ৪.৫ ডিগ্রি বেশি হলেও তা তাপপ্রবাহ বলে ধরা হয়।
পূর্ব ভারত ছাড়াও পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার বিচ্ছিন্ন এলাকায়, পশ্চিম উত্তর প্রদেশে তাপপ্রবাহ চলছে। পূর্ব উত্তর প্রদেশে মঙ্গলবার-বুধবার তাপপ্রবাহ হবে। পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় অববাহিকায় গত ছ’দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। অন্ধ্র প্রদেশের উপকূল অঞ্চলে চার দিন এবং বিহারে তিন দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। রাজধানী দিল্লির পরপর তিনদিন তাপমাত্রা ৪০ডিগ্রির ওপরে। রাজস্থানের চুরুতে তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। হিমাচলে স্বাভাবিকের থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি হয়ে ৪১ ডিগ্রি ছুঁয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের অনুমান, পশ্চিম হিমালয়ে একটি ঝঞ্ঝা উত্তর ভারতের তাপমাত্রায় কিছু স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু চলতি মাসের গোড়াতেই আবহাওয়া দপ্তর জানিয়ে দিয়েছিল এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকবে। মধ্য, পূর্ব এবং উত্তর পশ্চিম ভারতের গ্রীষ্ম এবার দাবদাহে পরিণত হবে। ঘটনা সেদিকেই গড়াচ্ছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আশঙ্কার বিষয় হলো এই তাপপ্রবাহ একবারের বিষয় নয়। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ কবলে পড়েছে ভারতও। ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলির জলবায়ু এমন জায়গায় পৌঁছতে শুরু করেছে যখন তা মানুষের স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করছে। ২০১৮সালের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছে থাকার পরিস্থিতি প্রায় নেই। অথচ পাঁচ বছর পরেই এই গ্রীষ্মের শুরুতেই ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল সেই তাপমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। পারস্য উপসাগর থেকে পাকিস্তান হয়ে ভারতের উত্তর প্রান্তে তাপপ্রবাহ নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বের জলবায়ু এখন লা নিনা চক্রের মধ্যে রয়েছে। অপেক্ষাকৃত শীতলতর গ্রীষ্ম হয় এই চক্রে। কিন্তু এর পরের পর্যায়েই এল নিনো চক্র শুরু হবে যা পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
তাপপ্রবাহের কারণে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে, আরো ঘটতে থাকবে। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানে হাজির থেকে রবিবারই মহারাষ্টের নভি মুম্বাইয়ে ১৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। ১২০ জনের বেশি অসুস্থ হয়েছেন। একই অনুষ্ঠানে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় তা নজরে এসেছে। কিন্তু কোটি কোটি ভারতবাসী কোনও সুরক্ষা ছাড়াই এই তাপপ্রবাহের মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে যাঁরা বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন। এই তাপমাত্রার মধ্যেই কৃষির কাজ চলছে, নির্মাণ শ্রমিকরা রাস্তায় রয়েছেন, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি এমনকি জীবনহানির কোনও তথ্যপঞ্জি নেই, হবেও না। দেশে কোভিডে মৃত্যুরই সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। গরমে প্রাণহানির তথ্য আরও অপ্রতুল হবে।
Comments :0