Budget on CPIM

গরিবকে শুষে ধনীদের বিত্ত বাড়ানোর বাজেট বলল পলিট ব্যুরো

জাতীয়

গরিবকে শুষে ধনীকে আরও বিত্তশালী করে তোলাই যে মোদীর ‘উন্নয়ন মডেল’, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেটে তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল মন্তব্য করেছে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো। এদিন এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো এই মন্তব্য করে বলেছে, ভারতের অর্থনীতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রীর গালভরা দাবি সত্ত্বেও ২০২৪-২৫ সালের অন্তর্বর্তী বাজেটে উঠে এল দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিবর্ণ চেহারাই, যা দুর্দশা নামিয়ে এনেছে শ্রমজী বী মানুষের জীবনে। আসন্ন নির্বাচনের পরে ২০২৪-২৫ সালের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করার দায়িত্ব নতুন সরকারের হলেও ২০২৩-২৪ সালের বাজেটের সংশোধিত হিসাবে তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এদিন অন্তর্বর্তী বা‍‌জেটে ওই হিসাব জানিয়েছেন কেন্দ্রের মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রীই। 
পলিট ব্যুরো বলেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বাজেটের অনুমিত হিসাবের তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহ তার আগের অর্থবর্ষের থেকে ১৩.৩ শতাংশ বাড়লেও কোষাগারীয় ঘাটতি কমাতে কেন্দ্রীয় সরকার ওই বাজেটের অনুমিত হিসাবের ঘোষণা থেকেও কম অর্থ ব্যয় করেছে। অথচ সরকার যখন ব্যয় কমিয়েছে, তখন সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় বাড়ানো হয়েছে বাজেটে ঘোষিত বরাদ্দের থেকেও বেশি পরিমাণে। অবশ্যম্ভাবীভাবে তার পরিণতিতে কোপ পড়েছে কল্যাণমূলক প্রকল্পের ব্যয়ে এবং মূলধনী ব্যয়ে। নিশ্চিতভাবেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ভবিষ্যতের বিকাশ ও মৌলিক অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যগুলির উপরে। কৃষি ও সহায়ক কাজকর্মে, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, সামাজিক কল্যাণে, তফসিলি জাতি সহ আদিবাসী ও অন্যান্য দুর্বল অংশের জন্য প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে বাজেট বরাদ্দের তুলনায় কম অর্থ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী পোষণ কর্মসূচিতে শুধু বাজেট বরাদ্দের তুলনায় কম অর্থ খরচ করা হয়েছে, তা নয়। ২০২২-২৩ সালের খরচের তুলনায়ও তা কম। মহিলা ও শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও বরাদ্দের তুলনায় কম অর্থ খরচ করেছে মোদী সরকার। ২০২২-২৩ সালের তুনায় ২০২৩-২৪ সালে সরকার অর্থ খরচ কমিয়েছে সার ও খাদ্যে ভরতুকিতে, রেগায় এবং নগর উন্নয়নে। ওই দুই অর্থবর্ষের মধ্যে খাদ্যে ভরতুকি ছাঁটাই করা হয়েছে ৬০ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা এবং সারে ভরতুকি কমানো হয়েছে ৬২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। রেগায় সরকার ২০২২-২৩ সালের তুলনায় ২০২৩-২৪ সালে ৪ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা ব্যয় ছাঁটাই করেছে। পাশাপাশি গ্রামোন্নয়ন ও রাজ্যগুলিকে করের ভাগ দেওয়ার খাতে ব্যয় মোটামুটি একই রাখা হয়েছে। এর অর্থ, টাকার প্রকৃত মূল্যে কম অর্থ দেওয়া হয়েছে। কারণ, এ‍‌ই সময়ে টাকার দাম কমেছে। সেই সঙ্গে জিএসটি’র ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে রাজ্যগুলিকে এর আগে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, ‍‌বিদায়ী অর্থবর্ষে মূলধনী ব্যয় খাতে ঋণ কম দিয়ে তাদের আর্থিক ক্ষমতাকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। 
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের বিকাশের চিত্র যখন খুবই খারাপ, তখন কেন্দ্রীয় সরকার রাজস্ব সংগ্রহ বাড়লেও ব্যয় এভাবে কমিয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে প্রকৃত বিকাশের অনুমিত হার ৭.৩ শতাংশ বলা হয়েছিল, যা পুরোপুরি কল্পনা ছিল। এর ভিত্তিতে ছিল এই অবাস্তব ধারণা যে, মুদ্রাস্ফীতির হার নেমে এসেছে ১.৬ শতাংশে! অথচ তথ্য বলছে, এখনও ভোগ্যপণ্য মূল্য সূচক ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীংতির হার প্রায় ৬ শতাংশ এবং খাদ্যদ্রব্যে এই হার প্রায় ১০ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রেপো রেটকে (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি যে সুদের হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদী ঋণ পায়) ৬.৫ শতাংশে ধরে রাখতে বাধ্য হয়েছে, যাতে মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপ ভারতে মুদ্রাস্ফীতির আসল চেহারাই প্রকাশ করে দিয়েছে। এত খারাপ বিকাশ হওয়া সত্ত্বেও মোদী সরকার ধীর গতির আয়বৃদ্ধির সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে বৃহৎ ব্যবসায়িক ক্ষেত্রকে, ধনীদের এবং বিত্তশালীদের। কোভিড-পূর্ব পরিস্থিতির তুলনায় কোম্পানি কর ও আয়কর খাতে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ার মূল কারণ, মোট আয়ে ধনীদের অংশ লাফিয়ে বেড়েছে। এ হলো সেই উন্নয়ন, যেখানে শ্রমজীবী মানুষকে দিয়ে বেশি সময় কাজ করিয়ে নেওয়া হলেও তাদের কম মজুরি ‍‌দিয়ে পেষা হয়। 
পলিট ব্যুরো বলেছে, শ্রমজীবী মানুষকে ‘বিকাশের সহযোগী’ করে প্রকৃত সামাজিক ন্যায়কে সুনিশ্চিত করা হচ্ছে বলে মোদীর গালভরা একপেশে প্রচারের ফানুস পুরোপুরি ফাটিয়ে দিয়েছে এই এই অন্তর্বর্তী বাজেট। এই বাজেট মোদী সরকারের ত্রুটিপূর্ণ ‘উন্নয়ন মডেল’-কেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে, ভারতের শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের জীবন-জীবিকাকে পিষে মুষ্টিমেয়র মুনাফাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে পৌঁছে দেওয়াই যার লক্ষ্য।   
সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকেও এই বাজেটকে মিথ্যার ফুলঝুড়ির বাজেট বলে অভিহিত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠন বলেছে, সারা দে‍‌শে যখন জিনিসপত্রের দাম ও বেকারত্ব বাড়ছে, তখন জনগণের আয় ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলে কাল্পনিক দাবি করা হয়েছে। এই সময়ে আইএলও’র রিপোর্টে ভারত সহ গোটা বিশ্বে প্রকৃত মজুরি হ্রাসের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দারিদ্র সূচক সংক্রান্ত রাষ্ট্রসঙ্ঘর রিপোর্ট  দারিদ্র দূরীকরণে ভারতের শোচনীয় ভূমিকাকে প্রকাশ করে দিয়েছে। সেই সময়ে মোদী সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট জনগণকে জীবন-জীবিকার লড়াইয়ে আস্থা জোগানোর বদলে বাস্তবতা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে নির্মম রসিকতা করেছে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment