সোমবার ‘জাতির উদ্দেশ্যে’ ভাষণ দিতে এসে তিনি হয়তো বিস্মৃত হয়েছিলেন কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান কী। কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্প মধ্যস্থতা করতে চান, বলার পরেও প্রধনামন্ত্রী সেসব মুখে না আনায় মঙ্গলবারই হয়তো অবস্থান স্পষ্ট করতে সামনে আসতে হলো ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে। রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়ালকে বলতে হলো, কাশ্মীর বিষয়ে ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান অপরিবর্তিত, এটি শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক ইস্যু। বললেন, “কাশ্মীর ইস্যু শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমাধান হওয়া উচিত, এবং এই অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি।” সঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, “এই বিষয়ে একমাত্র বকেয়া বিষয় হলো— পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।” এছাড়াও তিনি জানান, পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার দায় স্বীকার করা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’-কে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত ও নিষিদ্ধ করার জন্য ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে আবেদন করবে।
শুধু কাশ্মীর প্রসঙ্গ নয়, আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে এদিন সাফাই দিতে হলো জয়সওয়ালকে। আসলে আগ বাড়িয়ে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করে দিয়ে ট্রাম্পই ডুবিয়েছেন বন্ধু মোদীকে। সঙ্গে কাল মোদীর ভাষণের আগেই তিনি বলে বসেন, ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধ থামাতে রাজি না হলে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হবে এমন হুঁশিয়ারির মুখেই দুই পরমাণু অস্ত্র শক্তিধর দেশকে থামানো গিয়েছে। মোদী গতকাল ট্রাম্প শব্দটি উল্লেখ না করলেও এদিন জওসওয়াল দাবি করেন, “মার্কিন আধিকারিকদের সঙ্গে কখনও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয়নি।”
তিনি আরও দাবি করেন, সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব এসেছিল পাকিস্তানের তরফ থেকে। ওরা ভারতীয় ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস-এর সঙ্গে আলোচনার জন্য অনুরোধ জানায়। কারণ, ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাকিস্তানি ঘাঁটিগুলিতে কার্যকরী হামলা চালানো হয়েছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ভারতের সব হামলা প্রচলিত লক্ষ্যবস্তুতে ছিল। সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোগুলি ধ্বংস করা হয়েছে, যেগুলি শুধুমাত্র ভারতীয়দের নয়, সারা বিশ্বের বহু নিরীহ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল।”
মঙ্গলবারের সাংবাদিক সম্মেলনেও রনধীর জয়সওয়ালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভারতীয় হামলার পরে পাকিস্তানে ‘পারমাণবিক গ্যাস লিক’ বা ‘নিউক্লিয়ার লিকেজ’–এর যে গুজব ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে, সে বিষয়ে ভারতের কী প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, “পাকিস্তানও একটি পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে গুজব অস্বীকার করেছে। ভারত কখনও পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের কাছে মাথা নত করে না।” গতকালই সেনা কর্তা জেনারেল ঘাই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, ভারত কিরানায় কোনও হামলা চালায়নি।
চীন ও তুরস্কের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে দেওয়া প্রতিরক্ষা সামগ্রী সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জয়সওয়াল বলেন, ‘এসব প্রশ্ন পাকিস্তানের জন্য, আমাদের নয়। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সাংবাদিক সম্মেলনে আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। আপনার প্রশ্নের প্রসঙ্গে, পাকিস্তানের একজন মন্ত্রী ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন।’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানের ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার কতটা কার্যকর ছিল, তাও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তানকে একসাথে গুলিয়ে দেখা হচ্ছে কিনা— এই প্রশ্নের উত্তরে জয়সওয়াল দাবি করেন, “উলটে বরং আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে বোঝা গেছে যে, পহেলগামে ভারতীয় পর্যটকরাই সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে, আর এই সন্ত্রাসের মূল কেন্দ্র সীমান্তপারের পাকিস্তানে। বহু বিদেশি নেতাই এই ঘটনায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।” জয়সওয়াল ভারতের বৃহত্তর নীতিগত অবস্থান আরও একবার উল্লেখ করে বলেন, “আপনারা জানেন, ভারত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে পারমাণবিক হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা যাবে না, আর সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদের কোনোরকম অনুমতি দেওয়া হবে না। আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলাকালীন তাদের সতর্ক করেছি যে, এমন হুমকির পেছনে সমর্থন জানানো তাদের নিজেদের অঞ্চলেই ক্ষতির কারণ হতে পারে।”
এদিকে এর পাশপাশি ভারত এদিন বিভিন্ন দেশের কাছেও ‘অপারেন সিঁদুর’ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের মানেকশ শাহ সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আধঘণ্টা ধরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস রানা এই অভিযানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।
সূত্রের খবর উল্লেখ করে পিটিআই জানিয়েছে, সুইডেন, নেপাল, ফিলিপাইন, মিশর সহ আরও কয়েকটি দেশের প্রতিরক্ষা দূতেরাও উপস্থিত ছিলেন। ইন্টিগ্রেটেড ডিফেন্স স্টাফের সদর দপ্তর “এক্স” (টুইটার)-এ এক পোস্টে জানিয়েছে, “ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির ডিরেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি.এস. রানা ৭০টি দেশের ফরেন প্রতিনিধিদের কাছে অপারেশন সিঁদুর-এর সফল বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন। ভারত-পাক সম্পর্কের একটি ‘নতুন মানদণ্ড’ স্থাপন করেছে এই অভিযান এবং ভারত তার সামরিক শ্রেষ্ঠতা এবং জাতীয় সংকল্প নতুন যুগের যুদ্ধে প্রদর্শন করেছে।” সরকারি সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানা ‘নিশ্চিত সন্ত্রাসবাদ সংযোগ’ রয়েছে এমন টার্গেট বেছে নেওয়ার জন্য ‘সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রক্রিয়া’র বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বিত, নিখুঁত এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া, যা বহুমাত্রিক অভিযানের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণ করেছে, তা এখানে তুলে ধরা হয়।
Kashmir MEA
কাশ্মীর ‘দ্বিপাক্ষিক’ ইস্যু, এখন বলছে বিদেশ মন্ত্রক

×
Comments :0