Kiren Rijiju on judge

বিচারপতিদের হুমকিই দিলেন কেন্দ্রের আইনমন্ত্রী

জাতীয়

কলেজিয়াম পদ্ধতিতে বিচারক নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বনাম কেন্দ্রের সংঘাত চরমে উঠল। এই সংঘাতের সময়ে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী কিরণ রিজিজু সোমবার সরাসরি হুমকি দিলেন, বিচারপতিরা কী বিচার করছেন তা জনতা নজর রাখছে। বিচারপতিরা ভোটে দাঁড়ান না বলেও কটাক্ষ করলেন মন্ত্রী। 
কলেজিয়াম পদ্ধতিতে বিচারক নিয়োগ বাতিল করে বিচারক নিয়োগ সরাসরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় মোদী সরকার। তাতে আপত্তি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে চলতে থাকা এই বিতর্কে সম্প্রতি কলেজিয়াম নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর এস সোধি। তাতে উৎসাহিত হয়ে রিজিজু সোধির সেই মন্তব্য উল্লেখ করে তাঁর কলেজিয়াম পদ্ধতি বাতিলের দাবি কত সঙ্গত তা দাবি করে বসেন। এতে বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে সোধি সরাসরি মন্ত্রী রিজিজুর মন্তব্য উল্লেখ করেই তা খারিজ করেন। তিনি বলে বসেন,‘দয়া করে আমার কাঁধে বন্দুক রেখে লড়াই করতে যাবেন না।’ আইন মন্ত্রীকে সোধি সরাসরি এভাবে নস্যাৎ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ আইন মন্ত্রী এবারে গোটা বিচারপতিদের সরাসরি জনতা সব দেখছে বলেই হুমকি দিলেন। পর্যবেক্ষক মহলের মত, দেশের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দখলে গেছে বিজেপির। এবারে বিচার ব্যবস্থাকে দখলে নিতে চায় মোদী সরকার। এই প্রক্রিয়া মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে। আজও তাতে সফল হতে পারেনি বিজেপি। তাই এবারে  বিচারপতিদের পরোক্ষে হুমকির পথ নিয়েছে বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা।
রিজিজু এদিন দিল্লি বার অ্যাসোসিয়েশনের সভায় বক্তব্য রাখার সময় বিচারপতিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেই বললেন, ‘শুনুন, বিচারপতিদের  কখনো নির্বাচনের মুখে পড়তে হয় না। তাদের জনতার স্ক্রুটিনির সামনে পড়তে হয় না। কিন্তু তাদের সেই জনতা নজর করছেন। জনতা দেখছেন কীভাবে বিচারপতিরা বিচার করছেন। জনতা সব নজর রাখতে পারে, তারা সব বিচার করতে পারে। তারা নিজেদের মধ্যে এই নিয়ে নিজেদের মতামত তৈরি করতে পারে। তারা বিচারপতিদের কাজ দেখছেন। জনতা দেখছে কী বিচার আপনারা দিচ্ছেন, কীভাবে কাজ করছেন—আমাদের বর্তমান সোসাল মিডিয়ার যুগে আপনি কিছু  গোপন করতে পারবেন না।’ 
তিনি কলেজিয়াম পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে তাঁর মত জানিয়ে ফের বললেন, দেশ ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর অনেক কিছু পালটে গেছে। আমাদের তার সঙ্গে পালটাতে হবে। বিচার ব্যবস্থায় তাই পরিবর্তন দরকার। নির্বাচিত সরকার বিচারক নিয়োগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী তাও মন্ত্রী জানিয়ে দেন। রায় পক্ষে গেলে ঠিক আছে, বিপক্ষে গেলেই জনতার নামে তার পরিণাম যে ভুগতে হবে তা উল্লেখ না রেখেই বার্তা দেওয়া হলো। বাবরি মসজিদ মামলায় রায় পক্ষে না হয়ে বিপক্ষে হলে তা যে মানা হবে না তা প্রচারে পরিষ্কার বুঝিয়ে ছিল বিজেপি। 
এদিকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সোধি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে কলেজিয়াম নিয়ে তাঁর যে বক্তব্য রাখছিলেন তার অংশ উল্লেখ করেন মন্ত্রী রিজিজু। তাতে ক্লিপিংস উল্লেখ করে বলা হয়, সোধি বলছেন, ‘খালি সংসদ সংবিধান সংশোধন করতে পারবে। তবে আমি মনে করছি সুপ্রিম কোর্ট এই প্রথম সংবিধান হাইজ্যাক করে নিয়েছে। তা হাইজ্যাক করে তারা (সুপ্রিম কোর্ট) বলছে আমরা আমাদের বিচারক নিয়োগ করব। সরকারের বিচারক নিয়োগে কোনও হাত থাকবে না।’ হিন্দিতে সোধির এই খণ্ডিত ভাষ্য উল্লেখ করেই মন্ত্রী রিজিজু টুইটারে বলছেন, এটাই হলো বিচারকদের নিজেদের কথা। এই বক্তব্যই সব বিচারকদের কথা বলে জানিয়ে রিজিজু টুইটারে বলছেন, আসলে দেশের বেশিরভাগ মানুষ বিচারপতির এইরকম সুস্থ বক্তব্যের পক্ষে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, একমাত্র তারা এই বক্তব্যের বিপক্ষে যারা এতে সংবিধানের ধারা মানেন না এবং মানুষের রায় মেনে নিতে পারেন না। তারা ভাবেন একমাত্র তারাই ভারতের সংবিধানের উপরে। তিনি আরেক টুইটারে বিচারপতি সোধির প্রশংসা করে বলেন,‘তাঁর বক্তব্য হলো আসলে বিচারপতিদের বক্তব্য। এটাই আমাদের গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। জনতা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে নিজেদের শাসন ব্যবস্থা বজায় রাখে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশে আইন তৈরি করে। তারাই মানুষের স্বার্থ দেখছে।’
স্বয়ং সোধি এনডিটিভি-তে এক সাক্ষাৎকারেই মন্ত্রী রিজিজুর বক্তব্য খণ্ডন করেই বলছেন, ‘আইন মন্ত্রীকে ধন্যবাদ এই ইস্যুতে আমার নাম উল্লেখ করার জন্য। কিন্তু আমি কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে আমার মত জানিয়েছি। তবে দয়া করে আমার কাঁধে বন্দুক রেখে লড়াই করতে যাবেন না। আমার ব্যক্তিগত মত হলো কলেজিয়াম পদ্ধতি হলো অসাংবিধানিক। সেখানে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারিয়েট থাকা দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ আইন তৈরি করতে পারে কিন্তু বুঝতে  হবে সেই আইন ঠিক আছে কিনা তার চূড়ান্ত রায় দিতে পারে একমাত্র সুপ্রিম কোর্ট।’ 
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিচারক নিয়োগ সরকারের নিয়ন্তন আনতে চাইছে মোদী সরকার। তাই ২০১৪ সালে বিচারক নিয়োগে কলেজিয়াম পদ্ধতি বাতিল ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন আইন (এনজেএসি) তৈরি করে। সুপ্রিম কোর্ট বিচারক নিয়োগে কলেজিয়াম পদ্ধতি বহাল রেখে এনজেএসি আইন বাতিল করে দেয়। ফলে কলেজিয়াম পদ্ধতিতে বিচারক নিয়োগ চলতে থাকে। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে মোদী জিতেই ফের বিচারক নিয়োগে কলেজিয়াম পদ্ধতি বাতিলের তোড়জোড় শুরু করে। স্বয়ং আইনমন্ত্রী রিজিজু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা সরাসরি কলেজিয়াম পদ্ধতির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা শুরু করেন। একই সঙ্গে কলেজিয়াম পদ্ধতিতে যাদের নাম সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয় তার অনুমোদনে চলে কেন্দ্রের ঢিলেমি। যাঁদের বিচারপতি নিয়োগে কেন্দ্রে আপত্তি তুলেছে তার ফের নিয়োগের সুপারিশ করেছে কলেজিয়াম। এই প্রক্রিয়া চলার মধ্যে মন্ত্রী উপরাষ্ট্রপতিকে সংযত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশে সংবিধান হলো সবার উপরে। সেই সংবিধান মেনেই কাজ করছে সুপ্রিম  কোর্ট।

 

Comments :0

Login to leave a comment