RG kar Rape and Murder Case

অসঙ্গতির চার্জশিটে আজ আর জি কর মামলার রায় ঘোষণা

রাজ্য

আর জি করে ধর্ষণ-খুনের মামলায় বিচার পর্ব শেষে শনিবার রায় দেবে নিম্ন আদালত। 

ঘটনার পাঁচ মাস পরেও সিবিআই’র তরফে দায়ের করা প্রথম দফার চার্জশিটের ভিত্তিতে কেবলমাত্র ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। টানা দু’মাস ধরে তা চলে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব। আজ গোটা দেশের সংবেদনশীল মানুষকে নাড়িয়ে দেওয়া, হাসপাতালের ভিতরেই পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের মামলায় রায় দেবে আদালত। ঘটনার ঠিক ১৬২দিনের মাথায় শনিবার রায়। বিচার পর্ব শেষে শুনানিতে ইতিমধ্যেই সিবিআই অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে। 

আর তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে গোটা ঘটনাপরম্পরা এবং সিবিআই’র তদন্তের একের পর এক অসঙ্গতি নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে ধর্ষণের পর খুন হওয়া পড়ুয়া চিকিৎসকের মা-বাবা বলেন, ‘‘এটা প্রাতিষ্ঠানিক খুন। আমার মেয়ের ওপর এই অত্যাচারের ঘটনার পিছনে টাকার খেলা আছে। গোটা খেলার পিছনে অদৃশ্য কোনও হাত আছে। তা মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে, স্বাস্থ্য মন্ত্রী হতে পারেন, স্বাস্থ্য সচিব হতে পারেন।’’ শুধু তাই নয় সিবিআই’ও ধামাচাপা দেওয়ার ষড়যন্ত্রে যুক্ত সেই অভিযোগও তুলেছেন সন্তানহারা মা। তদন্তকে সিবিআই কলকাতা পুলিশের মতই নষ্ট করেছে। সিবিআই তদন্তে প্রায় ৩৭টি অসঙ্গিতর কথা, সন্দেহের কথা আদালতেও জানিয়েছেন মা-বাবা।

নির্যাতিতা পড়ুয়া চিকিৎসকের বাবা এদিন অভিযোগ করেন টাকা দিয়ে আমাদের কেনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমরা সত্যের জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য লড়বো শেষ পর্যন্ত। সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় একজন ক্রিমিনাল, ওর শাস্তি হোক, আদালত শাস্তি দিক আগামীকাল। কিন্তু আমরা কেন গোটা রাজ্যের কোনও মানুষ বিশ্বাস করে না এই ঘটনা ও একা ঘটিয়েছে। এটা সম্ভব নয়। সিবিআই সব শুনেছিল আমাদের কাছ থেকে। তারপরেও এমন তদন্ত। ওরা তো সেন্ট্রাল ফরেন্সিকের রিপোর্টও মানেনি। সেদিন রাতে যারা ছিল ওদের সঙ্গে, চেস্ট ডিপার্টমেন্টের সেই তাঁদের সিবিআই কি জেরা করেছিল, গ্রেপ্তার করেছিল? আমার মেয়ের ধর্ষণ, খুনের ঘটনা সন্দীপ ঘোষের ইশারায় হয়েছিল। ক্রাইম সিনেও সন্দীপ ঘোষ, আশিস পান্ডেৃ ছিল। কী হলো তাদের? সন্দীপ ঘোষ এখন জেলে বসে মাইনে পাচ্ছে, চাকরি তো যায়নি। আমাদের মেয়েটা চলে গেল চিরতরে’।

টাকা দিয়ে এখনও কি কেনার চেষ্টা চলছে? মা-বাবা জানিয়েছেন, হ্যাঁ। সেদিন অর্থাৎ গত ৯আগস্ট তো এলাকারই তৃণমূল নেতা সঞ্জীব মুখার্জি ডিসি(নর্থ)-কে নিয়ে এসেছিল টাকা দেওয়ার জন্য। যিনি পানিহাটির বিধায়কের নির্দেশে পরিবারের সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে দ্রুত দেহ সৎকারের আয়োজন করেছিল। পড়ুয়া চিকিৎসকের বাবা এদিনও জানান, সেদিন একটা প্যাকেটে করে ওই সঞ্জীব মুখার্জির সঙ্গে এসেছিল পুলিশ কর্তা। জিজ্ঞাসা করেছিল, ওটায় কী আছে? বলেছিলেন টাকা আছে, রাখুন, আপনাদের এখন লাগবে। আমরা বলেছিলাম আপনারা যেমন পড়াশোনা করে আইপিএস হয়েছেন, তার থেকেও বেশি পড়াশোনা, পরিশ্রম করে আমার মেয়ে ডাক্তার হয়েছিল। ওকে এভাবে অসন্মান করবেন না।

এখানেই শেষ নয়, সিবিআই’ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে আসলে টাকা দিয়ে যেন আর জি করের ঘটনার রহস্য ধামাচাপা দিতে চাইছে এমন বিস্ফোরকও অভিযোগও তোলেন তাঁরা। মৃতার বাবা বলেন, সেদিন আদালতেও সিবিআই বিচারকের কাছে বারেবারে বলছিল আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। আমরা আগামীকাল যদি আদালতে বিচারকের সামনে বলার সুযোগ পাই তবে বলবো, মেয়ের ধর্ষণ খুনের তদন্ত চাইছে এসেছি, ভিক্ষা নিতে নয়। ক্ষতিপূরণ চাই না, চাই প্রকৃত তদন্ত যা সিবিআই করছে না।

ঘটনার ১৬২দিন পরেও এমন অভিযোগ, ক্ষোভের আবহেই আর জি কর মামলার বিচারপর্ব শেষে রায় দিতে চলেছে শিয়ালদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস। গত ১১ নভেম্বর আর জি করের ঘটনায় বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। টানা দু’মাস ধরে তা চলে। এই মামলায় ৫৪ জন সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও আশ্চর্যজনক ভাবে নির্যাতিতা পড়ুয়া চিকিৎসকের মায়ের সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। সিবিআই সেই সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করতে চায়নি বলে ইতোমধ্যেই অভিযোগ করেছেন পড়ুয়া চিকিৎসকের জননী। বাবা-মাকে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্বে আইনত থাকার কোন বাধা না থাকলেও সিবিআই’র তরফে তাঁদের এজলাসে থাকতে নিষেধ করা হয়েছিল।

টানা ৩৬ ঘণ্টা কর্মরত পড়ুয়া চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল তাঁরই কর্মস্থল, আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় চেস্ট মেডিসিনের সেমিনার রুমে। হাসপাতালের ভিতরই ধর্ষণ করে খুন করা পড়ুয়া চিকিৎসককে। গোটা দেশ জুড়ে প্রতিক্রিয়া। লাখো লাখো মানুষ এই শহরে, রাজ্যে ন্যায় বিচারের দাবিতে পথে নামেন। 

রাত দখল থেকে রাস্তা দখল- প্রতিবাদের নতুন নতুন চেহারা, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের তাতে শামিল হওয়া- গত পাঁচ মাস ধরে আর জি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়া ঘটনাপরম্পরা রাজ্যের সাম্প্রতিক সময়ে বেনজির। সেই ঘটনার তদন্তেও এমন সন্দেহ, অসঙ্গতির চিহ্ন রেখে যাচ্ছে দেশের অন্যতম গোয়েন্দা সংস্থা যার ফলে এই কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিশ্বাসযোগ্যতা এখন সাধারণ মানুষের কাছে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। 

গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ায় একাধিক প্রশ্ন ইতোমধ্যে সামনে এসেছে যার উত্তর মেলেনি সিবিআই’র তরফে। আর জি করের ধর্ষণ খুনের মামলাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর এই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। প্রায় চার মাস হতে চলেছে অতিরিক্ত চার্জশিট পর্যন্ত দেয়নি সিবিআই।  ৯০ দিনের মধ্যে কেবল সিবিআই’র অপদার্থতায় চার্জশিট না দিতে পারায় মাত্র ২০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে গত ১৩ ডিসেম্বর জামিন পেয়ে যায় সন্দীপ ঘোষ-অভিজিৎ মণ্ডল। এদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ লোপাটের গুরুতর অভিযোগ তুলেছিল সিবিআই নিজেই। আদালতে শুনানিতে যা বলেছে তা চার্জশিটে বলতে পারেনি তারা?

কেন জোর করে সেদিন রাতে দ্বিতীয়বারের ময়নাতদন্তের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল? সেদিন সিসিটিভি ক্যামেরায় রাতে হাসপাতালের চারতলায় ৬৮ জনের যাতায়াত দেখা গেছে। সিসিটিভি দেখে এঁদের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল কী? ডিএনএ’তে একাধিক জনের নমুনা মিলেছিল, তা কি বিকৃত করা হয়েছিল? যদি না হয় তাহলে সেদিন সেখানে উপস্থিত সবার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল কী? অকুস্থল কী চারতলাতেই? সিএফএসএলের রিপোর্টের সঙ্গে কেন সঙ্গতি নেই চার্জশিটের? এর একটিও উত্তর যদিও মেলেনি সিবিআই’র কাছ থেকে।

Comments :0

Login to leave a comment