Lok Sabha Election Phase 6

ভোট দানে বাধা, গোলমাল, হিংসাও ষষ্ঠ দফার ভোটে

রাজ্য জেলা লোকসভা ২০২৪

শুরু থেকে শান্তিতে ভোট হলেও বেলা যত বাড়তে থাকে ততই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। গড়বেতা-কেশপুরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। নির্বিঘ্নেই শেষ হলো পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন। দু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সব জায়গাতেই শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ ভোট দিয়েছেন। একইভাবে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকায় এবং ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বান্দোয়ান বিধানসভা এলাকাতেও ভোট প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি চড়া রোদের মধ্যে উৎসবের মেঝে মানুষ ভোট দিয়েছেন। পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট সমর্থিত জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী নেপাল মাহাতো জানিয়েছেন, পুরুলিয়ার মানুষ নির্ভয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রের শাসক দল এবং রাজ্যের শাসক দলের যে মনবল ভেঙে গেছে তা এদিনের নির্বাচন প্রক্রিয়াতে স্পষ্ট। সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কৃষ্ণপদ বিশ্বাস জানিয়েছেন, জেলার অন্যত্র শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হলেও পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর দুই ব্লকের চেলিয়ামার নতুনডি অঞ্চলের ৮৪ নম্বর বুথে বিকেল চারটার পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় রাজ্যের শাসক দল ব্যাপক ছাপ্পা দিতে শুরু করে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ। ঘটনা জানার পরেই সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে জেলা নির্বাচন আধিকারিক এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সমস্ত ঘটনা জানানো হয়। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জেলায় ভোট পড়েছে ৭৪.০৯ শতাংশ।
ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বিধানসভা কেন্দ্র। বান্দোয়ানের আসনপানি গ্রামের বাসিন্দা সোনামনি টুডু এবার প্রার্থী হয়েছেন সিপিআই(এম)’র। এদিন সকাল সকাল তিনি নিজের গ্রামের বুথে ভোট দিয়ে তারপর বান্দোয়ান বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। 
রক্ত ঝরল ষষ্ঠ দফার ভোটেও। সংঘর্ষ, ছাপ্পা, ভোটদানে বাধা, বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্যেই ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। আক্রান্ত হলেন প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বাহিনী।  কেশপুরে সন্ত্রাস ও ভোট লুটের অভিযোগ জানিয়ে সেখানে ফের পুর্ননির্বাচন করার দাবি উঠেছে। ঝাড়গ্রামের গড়বেতায় বিক্ষোভের মুখে বিজেপি প্রার্থী। গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ। ষষ্ঠ দফার ভোটে সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কেশপুর। বিশৃঙ্খলা রুখতে রীতিমতো বেগ পেতে হল পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর লোকসভার অধীন খণ্ডঘোষ বিধানসভা এলাকায় ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও বহু বুথে ভোট লুট করার জন্য শাসকদল মরীয়া চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ভোট চোরদের চোখে চোখ রেখে সকাল থেকে ভোট দিয়েছেন মানুষ সকাল থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে। বেশকিছু জায়গায় বুথের কাছে তৃণমূলের জমায়েত সরাতে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। ভোট চুরি করতে ব্যর্থ হয়ে বহু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অতি সক্রিয়তা নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তবে দিনের শেষে ভোট লুটেরাদের ঠকিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে যেন প্রশংসা কুড়িয়েছে ভোটার। কারণ, বেশিরভাগ বুথেই ভোটারদের লম্বা লাইন লক্ষ্য করা গিয়েছে সকাল থেকে। মহিলাদের পাশাপাশি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও নির্ভয়ে এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যা কাটিয়ে ভোটের লাইনে হাজির হয়েছেন।
একজন বুথ স্লিপ নিয়ে ভোট দিতে যান। তাঁকে বেধড়ক পেটায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। খণ্ডঘোষ বিধানসভা এলাকায় স্লিপ দেখিয়ে ভোট দেওয়ায় বাধ সেধেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। বুথে ঢোকার মুখেই স্লিপ দেখে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া ভোট দিতে দেওয়া হয়নি কাউকেই। 
তমলুকে তৃণমূল বিজেপি নিজেদের খেলায় মানিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষ নিজেদের ভোট প্রয়োগ করলেন লাইনে দাঁড়িয়েই। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন সায়ন ব্যানার্জীও। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্তে সকাল থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ালেন সিপিআই(এম) প্রার্থী সায়ন ব্যানার্জি। ভোট শুরুর সময় থেকেই হলদিয়া বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর আসতে থাকে পোলিং এজেন্ট বসতে না দেওয়া, এমনকি সিপিআই(এম)'র পোলিং এজেন্টকে অপহরণ করা এই সব ঘটনা ঘটল সকাল থেকেই। সায়ন ব্যানার্জি সেই সমস্ত এলাকায় গিয়ে পোলিং এজেন্টদেরকে বুথের মধ্যে প্রবেশ করান নিজেই। হলদিয়ার ঘাসিপুর তালপুকুর এলাকার তিনটি বুথে ব্যাপক জমায়েত করেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেরা। প্রায় আধ ঘণ্টারও বেশি সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোট করানোটাই বদ্ধপরিকর ছিল সিপিআই(এম)র কর্মীরা। এখানের ২১৭, ২১৯ নম্বর বুথে রেসিমুন্নাশা নামে এক ভোটারের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই মহিলা নিজেই জানিয়েছেন, তিনি ভোট দিতে যাওয়ার সময় তৃণমূল বাধা দেয় প্রতিবাদ করায় তার উপর আক্রমণ করে তৃণমূল।
অন্যদিকে দেভোগ এলাকার তেতুলবেড়িয়া প্রাইমারি স্কুল, ১৭ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২২৭, ২২৮, ২২৯, ২৩০, ২৩১, ২৩২ বুথে জমায়েত করেছিল তৃণমূল। মারুতি গাড়িতে সেক্টর লিখে পর পর এসেছিল তৃণমূল বাহিনী। লক্ষ্য ছিল ছাপ্পা। তা না করতে পেরে ভোট দিতে আসা সাধারণ মানুষের মোটরবাইক, গাড়ি ভাঙচুর করে দুষ্কৃতীরা। তমলুকের আমগেছিয়া বুথে জমায়েত করে ছাপ্পা শুরু করেছিল তৃণমূল। এই সমস্ত এলাকায় সায়ন ব্যানার্জি পৌঁছে তা প্রতিহত করেছেন। নন্দীগ্রাম ও ময়নার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল ও বিজেপি বুথ জ্যামের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ নিজেদের ভোট নিজেরা দিয়েছে। তমলুকের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সায়ন ব্যানার্জী বুথে বুথে ঘুরে বেড়ান। কার্যত তৃণমূল ও বিজেপির প্রার্থীদের দেখা পাওয়া যায়নি।
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে সকাল থেকে কোথাও তৃণমূলের হুমকি ভোটারদের প্রতি, কোথাও বিজেপির হুমকি ছিল। পটাশপুর বিধান পরসসভা এলাকায় নইপুর অঞ্চলের ১৫, ২৩৮ কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লক, রামনগরে বেশ কিছু জায়গায় তৃণমূল এবং বিজেপির দ্বন্দ্বে আহত হয় ভোটার। খেজুরির কিছু অংশে বিজেপি তৃণমূল গন্ডগোল করার চেষ্টা করেও বাম কংগ্রেস কর্মীদের প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়।
কাঁথি দক্ষিণে ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০ এবং ৮৫ নম্বর দুধগুলি সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত ছিল। কিছু বুথে নির্দিষ্ট সময়ে ভোট গ্রহণ শুরু করতে পারে নি। কাঁথি দুরমুঠ ৬৮ নম্বর বুথে সাতটার থেকে দশটা পর্যন্ত ভোট সঠিকভাবে চলার পর মেশিন মেশিনের গন্ডগোল হয়। পরে মেশিন ঠিক করে ভোট গ্রহণ পর্ব চালু হয়।
সারাদিন একটার পর একটা ভোট কেন্দ্রে দৌড়ে বেড়ালেন বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ঊর্বশী ব্যানার্জি ভট্টাচার্য। ভগবানপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর আক্রমণ করে দুষ্কৃতীরা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়ায় অভিযোগ। দু -একটা ঘটনা ছাড়া বেশিরভাগ জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দানের চিত্র দেখে বিজেপি- তৃণমূল কৌশলে পটাশপুর, ভগবানপুর, দক্ষিণ কাঁথির কয়েকটি জায়গায় গোলমাল ও সংঘর্ষ পাকানোর চেষ্টাকরে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভোটারদের সম্মিলিত উদ্যোগও দলীয় সমর্থকদের  সাথে মিলিত হন। বুথে বুথে ভোট কেমন হচ্ছে তা নিরীক্ষণ করেন। 
কমিশন সূত্রের খবর, শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ৮টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়ল ৭৭.৯৯ শতাংশ। তমলুকে ভোটদানের হার ৭৮.৭৯ শতাংশ। কাঁথিতে ৭৫.৬৬ শতাংশ, ঘাটালে ৭৮.৯২ শতাংশ, ঝাড়গ্রামে ভোটদানের হার ৭৯.৬৮ শতাংশ, মেদিনীপুরে ভোটদানের হার ৭৭.৫৭ শতাংশ, পুরুলিয়ায় ভোটদানের হার ৭৪.৯ শতাংশ, বাঁকুড়ায় ভোটদানের হার ৭৬.৭৯শতাংশ, বিষ্ণুপুরে ভোট পড়েছে ৮১.৪৭ শতাংশ। সর্বশেষ ভোটের হার আরও কয়েক শতাংশ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment