MONDA MITHI — KRISHANU BHATTACHARJEE — RASARAJ DADATHAKUR — NATUNPATA — 27 APRIL 2025, 3rd YEAR

মণ্ডা মিঠাই — কৃশানু ভট্টাচার্য্য — রসরাজ — নতুনপাতা — ২৭ এপ্রিল ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHI  KRISHANU BHATTACHARJEE  RASARAJ DADATHAKUR  NATUNPATA  27 APRIL 2025 3rd YEAR

মণ্ডা মিঠাই নতুনপাতা, বর্ষ ৩

রসরাজ 
কৃশানু ভট্টাচার্য্য

সোজা কথা সোজাসুজি বলতে পারাটা এটা কঠিন কাজ। কারণ নিতে অপ্রিয় হবার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। আবার রঙ্গ রসিকতার আড়ালে সেই অপ্রিয়তার বাতাবরণকে সরিয়ে ফেলে এটা প্রীতি পূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে পারার মধ্যে একটা বাড়তি মুন্সিয়ানা আছে। মানুষটি সেই মুনশিয়ানা আয়ত্ত করতে পেরেছিলেন। ১৯১৪ সাল। ভারতের অনেক মানুষের মতো তিনিও চাইছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজদের পরাজয় হোক। কারণ তখনও বঙ্গভঙ্গের চক্রান্ত থেকে শুরু করে এ দেশের আর্থিক সার্বভৌমত্বকে পদদলিত করার ইতিহাসটা মানুষের কাছে বাস্তব। জঙ্গিপুর পৌরসভায় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ইংরেজ সরকারের বিজয় কামনা করে একটি সভা হচ্ছে। একজন বক্তা তিনি। কারণ তিনি সেই সময় শুরু করেছেন একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র। নাম জঙ্গিপুর সংবাদ। চিরাচরিত ধুতি আর চাদর গায়ে সভায় বক্তৃতা দিতে উঠে তিনি বললেন এই যুদ্ধে জিতবে জার্মানি। উপস্থিত ভদ্রমণ্ডলী যখন রীতিমতো বিব্রত তখন দ্বিতীয় বার কথাটি কে উচ্চারণ করলেন এই যুদ্ধে জিতবে 'যার মানি'- অর্থাৎ যার মানি আছে তারই মান থাকবে। আর সবাই জানে সেই সময় অর্থনৈতিকভাবে জার্মানির থেকে ইংল্যান্ড অনেকটাই এগিয়ে। দুনিয়াজোড়া উপনিবেশ থেকে নিয়মিত তাদের আর্থিক লাভ। ঠিক এরকম এরই একটি ঘটনা ঘটেছিল স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষে। ‌  স্বাধীনতার এক দশক পর সরকার পরিচালনা নিয়ে মানুষের মধ্যে যখন নানা ধরনের প্রশ্ন এবং ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে সেই সময়ে জঙ্গিপুর সংবাদের ১৯৬৩ সালের মার্চ মাসে একটি সম্পাদকীয় লিখলেন তিনি। শিরোনাম, 'স্বাধীনতার স্বাদহীনতা, সাধহীনতা' । রচনাটিতে স্বাধীনতার 16 বছর পরেও সরকারি প্রতিশ্রুতির ঢাকের আওয়াজকে তীব্র ভাষায় বিদ্রুপ করা হলো।‌ বলা হলো কোন এক বাইজিকে নাচ দেখতে দেখতে এক বাদশা প্রচুর উপঢৌকন দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নাচ শেষে বাইজি যখন সেই সমস্ত উপঢৌকন চাইছেন তখন বাদশা বলেছিলেন, "তুমি আমাকে নাচ দেখিয়ে খুশি করেছ,  আমি তোমাকে বাৎ শুনিয়ে নিয়ে খুশি করেছি। অতএব এখানে আর কোন লেনদেনের প্রশ্ন ওঠে না." । এরপরেই লেখা হয়েছিল "বিগত বছরে আমরা পন্ডিত জি জিন্দাবাদ বলে পন্ডিত জিকে খুশি করেছি আর পণ্ডিত জিও আমাদের নানারকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে খুশি করে দিয়েছেন।" হক কথা সোচ্চারে বলবার এই মানসিকতাই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দিয়েছিল। 
কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন আমি এক কথার মানুষ। ‌ আমার জন্ম সাল যেদিক থেকে পড়বি একই দেখাবে। বস্তুত ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে তার জন্ম। ‌ এমনকি জন্মদিন মৃত্যুদিনও তিনি এক। ‌ জন্মেছিলেন ১৮৮১ র ২৬ শে এপ্রিল ।‌ ৮৭ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ১৯৬৮ র ছাব্বিশে এপ্রিল।‌ এর মধ্যে এই ডেড স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং পরবর্তীকালে এফ এ পাস করে স্বাধীন জীবন যাপনের অঙ্গীকার নিয়ে পরিচালনা করেছেন পন্ডিত প্রেস এবং জঙ্গিপুর সংবাদ নামে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র। টানা তিন বছর প্রকাশ করেছেন বিদুসক নামে আরেকটি সংবাদপত্র। যেখানে মূলত কবিতায় সংবাদ প্রকাশিত হতো। ‌ লিখেছেন অজস্র মজাদার লেখা, যার মধ্যে অন্যতম বোতল পুরান। ‌ প্রতিবাদী সত্তা হিসেবে সারা বাংলার মানুষের কাছে তিনি ছিলেন একাই একশ। ‌ নিজের কাগজ নিজে লিখে ছাপিয়ে বিক্রি করে সংসার নির্বাহ করেছেন। ‌
তিনি শরৎচন্দ্র পণ্ডিত যাকে জঙ্গিপুরের সাধারণ মানুষ আদর করে ডাকতেন দাদা ঠাকুর নামে।


অঙ্কন : দেবস্মিত গুপ্ত 
নবম শ্রেণী, কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ, শীতলাতলা , নাটাগড়, উত্তর ২৪ পরগনা

Comments :0

Login to leave a comment