MAMATA RG KAR

আর জি কর ‘দুর্ঘটনা’! --- পুজো উদ্বোধনে বললেন মমতা

রাজ্য

আর জি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে নৃশংস খুনের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে এবার পেশ করলেন মমতা ব্যানার্জি! 
গত ৯ আগস্ট তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর প্রথমে আত্মহত্যার ঘটনা সাজিয়েছিল পুলিশ। হাসপাতাল থেকে তরুণী চিকিৎসকের বাড়িতে টেলিফোন করে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানানো হয়েছিল। ভয়াবহ এই ঘটনার দেড় মাস কেটে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে দুর্ঘটনার তত্ত্ব শোনার পর সকলেই স্তম্ভিত। শুক্রবার দুপুর থেকে একের পর এক পুজো উদ্বোধন করে মমতা ব্যানার্জি হিন্দুস্তান পার্কের দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে আসেন। মণ্ডপের ফিতে কেটে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা অনেক সময় হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাকে, মাকে অসম্মান করলে আমরা মেনে নেব না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন মন্তব্য শোনার পর আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন হাততালি দিতে শুরু করেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুজো উদ্যোক্তাকেও বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমরাও মেনে নেব না।’’  
আর জি কর হাসপাতালের নৃশংস হত্যার ঘটনাকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে মমতা ব্যানার্জির মন্তব্য শুনে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা মুখ্যমন্ত্রী মুখ ফসকে বলেননি। প্রথমদিন পুলিশ কমিশনারকে দিয়ে বলিয়েছিলেন পুলিশ মন্ত্রী। আজ খোদ পুলিশ মন্ত্রী বললেন। কখনও আত্মহত্যা, কখনও দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছেন। মানুষের ভরসা উঠে গেছে। তাই বিচারের দাবিতে মানুষ দখল নিয়েছে রাজপথের।’’ 
গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের হত্যার ঘটনা সামনে আসার পর মমতা ব্যানার্জি ‘আমার কোনও লেনাদেনা নেই’ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে আর জি কর হাসপাতাল থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি সামনে চলে আসে। তখন থেকে গোটা ঘটনাতে ধামচাপা দিতে, তরুণী চিকিৎসক খুনের তথ্য প্রমাণ লোপাটে তৎপর ভূমিকা পালন করতে শুরু করে পুলিশ। আর জি কর হাসপাতালের সন্দীপ ঘোষকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে সমতুল পদে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ফের অধ্যক্ষ পদে বসানোর নির্দেশকা জারি করেছিল রাজ্য সরকারই।
রাজ্যের সর্বত্র গত দেড় মাস ধরে মানুষের প্রতিবাদ আন্দোলনের সামনে নবান্ন থেকে এক মাস পার হয়ে গেছে বলে রাজ্যবাসীকে উৎসবে ফিরুন, পুজোয় ফিরুন বলে বার্তা দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। মানুষ উৎসবমুখী করে প্রতিবাদ আন্দোলনকে থামাতে পারেনি সরকার। 
বিচারের দাবিতে সেই প্রতিবাদ এমনই বহমান যে গত ২ অক্টোবর থেকে পুজো উদ্বোধন শুরু করে টের পাচ্ছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। গত তিন ধরে দুপুর থেকে কলকাতার এক পর এক পুজো উদ্বোধন করে চলেছেন মমতা ব্যানার্জি। কলকাতা থেকে ভার্চুয়ালি শয়ে,শয়ে জেলার দুর্গাপুজোরও উদ্বোধন সারছেন। কিন্তু অন্যান্য বছরের মতো এবার সেই উৎসবের মেজাজে যে মানুষ নেই তা বুঝতে পারছেন বলেও এদিন মুখ্যমন্ত্রী ফের আর জি করের নাম উল্লেখ না করে প্রতিবাদ আন্দোলনকারীদের নিশানা করেছেন। ‘‘অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। দুঃখজনক ঘটনা কেউ মানতে পারে না। কিন্তু আমাদের ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। কেউ কেউ বাংলার সম্মানকে নিয়ে অবহেলা করতে চাইছে। আমরা তা মেনে নেব না।’’ বলেছেন মমতা ব্যানার্জি।
মহালয়ার দিন পুজো উদ্বোধন শুরু করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ওই দিন বিচারের দাবি তুলে মিছিল হয়েছে মহানগরে। এদিনও এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা মিছিল করে যায় ধর্মতলায়। সেখানে পুলিশের হাতে আন্দোলনাকারীদের আক্রান্ত পর্যন্ত হতে হয়েছে। পুলিশের এদিনের হামলার সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির ‘বাংলার অপমান আমরা মেনে নেব না’ এই হুমকির মিল পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। আসলে উৎসবের সঙ্গে আন্দোলনের একটা সঙ্ঘাত তৈরি করে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে শাসক দল। সেই প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ফুটবল খেলায় মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল। এখন তো এক সুরে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান প্রতিবাদ করছে। এখন এবং, বনাম নয়। এখন উৎসব হবে, আন্দোলনও হবে। আসলে মুখ্যমন্ত্রী আরএসএস’র কায়দায় ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করতে চাইছেন।’’
মমতা ব্যানার্জির পুজো উদ্বোধন পর্বেই বাঁশদ্রোণী থানা এলাকায় পে লোডারের ধাক্কায় নবম শ্রেণির এক পড়ুয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে যায়। এদিন সরকারের পক্ষ থেকে একদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পুজো উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর কর্মসূচিতেও এদিন মমতা ব্যানার্জির মুখ থেকে বাঁশদ্রোণীর মৃত ছাত্রকে নিয়ে একটি কথাও বলেননি মমতা ব্যানার্জি।
 

Comments :0

Login to leave a comment