উৎপল মজুমদার
দু’বছর ধরে চলছে জল পড়া, তেল পড়ার কারবার। রমরমা এত যে লোকজনের থাকা, খাওয়া তো বটেই, জল এবং তেলের কারবারও ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। জোটানো হয়েছিল ‘বাবার’ ভাড়া করা প্রচারকও!
মালদহের হবিবপুর থানার ১২ মাইল জাহানাবাদ ডাঙ্গা গ্রামে গত দু'বছর ধরে ‘যিশু বাবার’ নাম নিয়ে এভাবেই চলছিল ব্যবসা। স্থানীয়দেরই একাংশের সচেতনতায় কারবার বন্ধ করতে বাধ্য হলো প্রশাসন। দীর্ঘদিন চোখ বুঁজে থাকলেও নড়েচড়ে বসতে হয়েছে।
‘যিশু বাবা’-র আসল নাম মঙ্গল হেমব্রম, ঠিকানা পাকুয়াহাট। প্রত্যেক শুক্রবারে জাহানাবাদ গ্রামের রঞ্জিত মার্ডির বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জল পড়া, তেল পড়া দিয়ে অসহায় গরিব অসুস্থদের প্রতারণা করে আসছে। পসার জমায় মালদহ ছাড়িয়ে ধুলিয়ান মুর্শিদাবাদ থেকে শুরু করে রায়গঞ্জ, হরিশ্চন্দ্রপুর এমনকি পাশের রাজ্য ঝাড়খন্ড থেকেও অসুস্থদের নিয়ে পরিজনদের আনাগোনা লেগে থাকত।
১২ মাইল থেকে গ্রামটির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। গত সপ্তাহে একজন অসুস্থ মানুষ মারা যান। চারিদিকে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। হবিবপুর থানার সহযোগিতায় মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। এরপরেই স্থানীয় কিছু মানুষজন থানায় লিখিত অভিযোগ জানান।
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধি দল সভাপতি কেপি সিংয়ের নেতৃত্বে হবিবপুরে যায়। সেখানকার বিডিও এবং থানার আইসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঘটনাস্থল গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথাও বলে।
বিজ্ঞানকর্মীরা বলছেন, গ্রামের অল্প একটি অংশ এই ব্যবসায় জড়িয়ে ছিল। তবে বড় অংশই বুজরুকির কারবারের বাইরে। সে কারণে স্থানীয়দের দেখা প্রায় মিলত না প্রতারণার কারবারে। গ্রামেরই একাংশ জানিয়েছে তাঁরা বুঝতে পারছিলেন পুরো ব্যাপারটিই লোক ঠকানো।
তাঁরাই লোক ঠকানো কারবারের বিরুদ্ধে সরব। তাই স্থানীয় মানুষের ভিড় এখানে নেই বললেই ভলে। স্থানীয়দেরই এই অংশ থানায় জানিয়েছে যে সদ্য মৃতের পরিবারের অভিযোগের জেরে থানা আপত্তি তোলে। সেই কারণে এই নিয়ে পরপর দুই শুক্রবার লোক ঠকানোর ব্যবসা বন্ধ আছে।
বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে এই ধরনের প্রতারণার কাজ যাতে এই অঞ্চলে আর সংঘটিত না হয় তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সংগঠন বলেছে, মানুষকে সচেতন করতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে বিজ্ঞান মঞ্চ অবশ্যই ধারাবাহিক ভূমিকা নেবে। মানুষকে সচেতন করার কাজ করবে।
Comments :0