Tapan Sen at the coalfield gathering

কয়লাঞ্চলের জমায়েতে তপন সেন

রাজ্য

তৃণমূল ও বিজেপি দুই সরকারই পুঁজিপতিদের তোষামোদ করা সরকার। ওরা কেবল চায় পুঁজিপতিদের মুনাফা কীভাবে বাড়ানো যায়। অন্যদিকে, খেতমজুরদের ১০০ দিনের কাজ, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য, শ্রমিক বিরোধী শ্রমকোড প্রত্যাহার, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প রক্ষা করার মতো দাবি নিয়ে মানুষ যেন আন্দোলন না করে। মানুষের নজর ঘুরিয়ে দাও। বিভেদের বিষ ঢেলে মানুষকে বিভাজিত কর। মানুষ যেন ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। মানুষকে জোটবদ্ধ করেই ওদের রুখে দিতে হবে। মঙ্গলবার রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চলে শ্রমিক জমায়েতে এই আহ্বান জানান সিআইটিইউ’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। 
তপন সেন এদিন রানিগঞ্জ কয়লা অঞ্চলে তিনটি কোলিয়ারিতে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন। একটি কোলিয়ারিতে শ্রমিকদের মিছিলেও তিনি পা মেলান। সভাগুলিতে তপন সেন বলেন, শ্রমিকের লড়াই করা অধিকার ওরা কেড়ে নিতে চায়। ২৯টা শ্রম আইন শেষ করে দিয়ে চারটে শ্রম কোড বানিয়েছে। মালিকপক্ষকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, আট ঘণ্টা কাজের অধিকার কেড়ে নেওয়ার। দাবি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার। কর্নাটকে মালিকপক্ষ ১২ঘণ্টা কাজ চাপিয়ে দিতে গিয়েছিল। জোটবদ্ধ শ্রমিকশ্রেণি তা রুখে দিয়েছে। ওরা মালিকপক্ষের অধিকার বজায় রাখতে চায়। আমরা শ্রমিকের অধিকার, খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার বজায় রাখতে চাই। অধিকার বজায় রাখার জন্য আগামী ২০ এপ্রিল মেহনতির ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে হবে। দেশজুড়ে ২০ মে ধর্মঘট সফল করতে হবে।
এদিন জে কে নগর কোলিয়ারির খনিমুখে শ্রমিক সমাবেশে তপন সেন বলেন, দেশজুড়ে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদে কী দেখলেন, একদল দুষ্কৃতি দাপিয়ে বেড়ালো। তৃণমূলের সরকার এটাকে উৎসাহিত করেছে। বিজেপিও উৎসাহিত করেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিভেদ বিষ ঢেলে ওরা মানুষের ঐক্যে ফাটল ধরাতে চায়। যেখানে শ্রমিকের দাবি নিয়ে লড়াই আছে, সেখানে ওরা বিভেদের চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, পশ্চিম বর্ধমান জেলা শিল্পের জেলা। কয়লা শ্রমিকরা ধারাবাহিক লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছেন। ইস্পাত সহ অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকরাও লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছেন। যেখানে শ্রমিকের জমায়েত আছে, লড়াই আন্দোলন আছে, সেখানে ওরা বিভেদের চেষ্টা করবে সতর্ক থাকতে হবে। 
তপন সেন এদিন ইসিএল’র পাট মোহনা কোলিয়ারিতেও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাদী সরকারের ফ্যাসিবাদী প্রক্রিয়া রুখে দিতে হবে। শ্রম কোড কার্যকরী হলে কয়লা শ্রমিকদের বেতন বোর্ডের জন্য যে কমিটি, জেবিসিসিআই তার কোনও অধিকার থাকবে না। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্তরে জেসিসি কমিটির মিটিংয়ের অধিকার থাকবে না। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কর্তৃপক্ষ মাইনস্‌ ডেভেলপার অ্যান্ড অপারেটর (এমডিও) পদ্ধতি এবং রেভিনিউ শেয়ারিং পদ্ধতি এনেছে। চালু খনি তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি মালিকের হাতে। মাটির নিচে মজুত কয়লার ভাণ্ডারে ওদের নজর। যন্ত্র এবং মানুষ নিয়ে ওরা আসছে কাজ করতে। পুরাতন ঠিকা শ্রমিকরা সব কাজ হারাবেন। স্থায়ী শ্রমিক যারা আছেন, তাদেরও কাজ করে নেওয়া হবে। সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই করে এমডিও এবং রেভিনিউ শেয়ারিং রুখে দিন। 
কয়লা শ্রমিকদের লড়াইয়ের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বিজেপি সরকার কমার্শিয়াল মাইনিং এনেছিল। করোনাকালে ধর্মঘট করে আপনারা রুখে দিয়েছেন। আপনাদের লড়াই সারা দেশকে অনুপ্রাণিত করেছে। ২০ মে ধর্মঘটে স্তব্ধ করে দিন ইসিএল। দেশ বাঁচানোর লড়াই। মুষ্টিমেয় লোলুপ মালিকদের রক্ষা করার দায় নিয়েছে বিজেপি ও তৃণমূল। 
এদিন রানিগঞ্জে বাঁশরা কোলিয়ারির সমবায়ের সভা গৃহে বক্তব্য রাখেন তপন সেন। তপন সেন ছাড়াও সভাগুলিতে বক্তব্য রাখেন ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভার সাধারণ সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরি, সিআইটিইউ নেতা সুজিত ভট্টাচার্য, প্রিয়ব্রত সরকার, বশিষ্ঠ দুষাধ, কলিমুদ্দিন আনসারি, আজগর আলি প্রমুখ। সভাশেষে পাট মোহনা কোলিয়ারিতে শ্রমিকরা বিশাল মিছিল বের করেন। তপন সেন সহ নেতৃবৃন্দ ছিলেন মিছিলের সামনের সারিতে।

Comments :0

Login to leave a comment