Hate Campaign

যুদ্ধে বিরতি, ঘৃণার গৃহযুদ্ধের খেলা শুরু

উত্তর সম্পাদকীয়​


পার্থপ্রতিম বিশ্বাস

পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীর চেহারা চরিত্র যেমন আমাদের ইচ্ছে অনিচ্ছের উপর নির্ভর করে না
ঠিক তেমনি প্রতিবেশী দেশের রাজা উজির কারা হবে সেটাও আমাদের ইচ্ছা নির্ভর নয়। ইতিহাসের পথ বেয়েই এদেশের সীমান্তের চারপাশে প্রতিবেশী কারা হবে সেটা স্থির হয়ে গেছে। ফলে ইতিহাসের সৃষ্টি
প্রতিবেশীদের সাথে ভূগোলে গোলমাল না বাঁধলে মোটের ওপর শান্তিতেই সংসার চলার কথা। কিন্তু
পাশের ফ্লাটে লুকিয়ে থাকা বিপদের মতোই প্রবল উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয় দেশের সীমান্তে বিপদের বীজ
বোনা শুরু হলে। ফলে দিন যাপনের অভিজ্ঞতায় দেশের মানুষ তার বাঁয়ে-ডানের প্রতিবেশীদের
সম্পর্কে খানিক ওয়াকিবহল হতে চায় আত্মরক্ষার স্বার্থেই । প্রতিবেশী দেশের রাজনীতির উত্থান
পতনের সাথে কেবল সে দেশের আমজনতার ভাগ্য ঝুলে থাকছে না বরং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকছে
এদেশের মধ্যেও আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা। ফলে কাঁটাতারের হাজার বেড়া লাগালেও প্রতিবেশী
প্রতিটি দেশের আর্থ-সামাজিক ভারসাম্যের ধাক্কা, প্রত্যেককেই কমবেশি সইতে হয়। এমন
প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক পাক ভারত যুদ্ধের অভিঘাত দু’দেশের জন্যই যথেষ্ট তাৎপর্যবাহী।


যুদ্ধে বিরতির পর

পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী হানায় এদেশের ছাব্বিশ জন মানুষের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় সাম্প্রতিক
সীমান্ত যুদ্ধে পাক ভূখণ্ডে থাকা সীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিতে নির্ভুল লক্ষ্যভেদের
নজির সৃষ্টি করেছে এদেশের সেনাবাহিনী। পরীক্ষিত হয়েছে দেশের প্রযুক্তনির্ভর সামরিক
ব্যবস্থার সক্ষমতা। সর্বোপরি এই যুদ্ধে সেনাবাহিনীর নারীসেনারা যেভাবে মহাভারতের
কুরুক্ষেত্রের ধারা বিবরণীর মতো দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন তাঁদের আত্মবিশ্বাস দিয়ে
সেটিও এক অর্থে ঐতিহাসিক, এই উপমহাদেশের যুদ্ধের ইতিহাসে। ফলে স্বল্পমেয়াদি এই সীমান্ত
যুদ্ধে এদেশের সেনাবাহিনীর নৈতিক জয় দেশবাসী উদ্‌যাপন করেছে প্রতি মুহূর্তে। যুদ্ধ চলাকালীন এ
দেশের সেনা আধিকারিকেরা স্মরণ করিয়েছেন দেশবাসীকে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্যের পাঠ।
কিন্তু সেই জয় উদ্‌যাপনের পাশাপাশি যুদ্ধ উত্তর পরিস্থিতিতে শঙ্কাও বেড়ে উঠেছে প্রতিপক্ষের
দাপটে নয় বরং এদেশের গেরুয়া শাসক বাহিনীর বিভাজনী রাজনীতির দাপটে।

মনুবাদ— ভীতু মেয়ের দল !

ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ চলাকালীন এদেশের উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ যেমন জাতীয়তাবাদের
মোড়কে যাবতীয় যুক্তির তর্কের ঊর্ধ্বে উঠে অন্ধভাবে নিজেদের বিশ্বাস নির্ভর ধারণা সমাজ
মাধ্যম এবং সংবাদ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচার করতে চেয়েছিলেন তার এক ভিন্ন সংস্করণ এই
মুহূর্তে দেখছে এদেশের মানুষ। ইতিমধ্যে এদেশের এক গেরুয়া সংসদ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার
ক্ষেত্রে দেশের বিবাহিত নারীদের সাহস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ! সেই সংসদের মেঠো ভাইরাল হওয়া
বক্তৃতায় তিনি দাবি করেছেন যে দেশীয় নারীদের বীরত্বের অভাবেই খুন হয়েছেন পহেলগাম
কাণ্ডে তাদের স্বামীরা। তার ভাষ্য অনুযায়ী সশস্ত্র জঙ্গিদের সামনে যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে
না পারার কারণেই স্ত্রীদের সামনেই ছাব্বিশ জন স্বামীকে খুন হতে হয়েছে। যার মানে দাঁড়ায়
খালিহাতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে আরও ছাব্বিশ জন মহিলা সেদিন খুন হলেই সাংসদ তাঁদের
বীরাঙ্গনার মর্যাদা দিতেন ? অন্যথায় পর্যটন ক্ষেত্রে যাওয়া মহিলাদের হাত ব্যাগে যুদ্ধাস্ত্র
নিয়ে ভ্রমণের পরামর্শ দিচ্ছেন সেই নির্বোধ সাংসদ !
কার্যত দেশের গেরুয়া শাসক তাদের ভাষ্যের মহিলাদের প্রতি এই অসম্মান প্রদর্শনের নজির এই
প্রথম নয় বরং ধারাবাহিকভাবেই তাঁরা অপমান এবং অসম্মান করে চলেছেন ! কিন্তু কখনোই এমন
নেতা মন্ত্রী সাংসদেরা ঐ কুবাক্য উচ্চারণের পরেও দল হিসাবে ভারতীয় জনতা পার্টি এই
বেহায়াদের দল থেকে বহিষ্কার কিংবা সাসপেন্ড করার মতো কোনও কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ
করেনি। ভাবটা যেন অপরিণত যুবকের মুখ ফসকে বেরনো মন্তব্য। কিন্তু আসলে যে সেই কুবাক্যে
লুকিয়ে থাকা মহিলাদের প্রতি ঘৃণা এবং অবজ্ঞা যে এই গেরুয়া বাহিনীর কেবল মুখের কথা নয় বরং
তাঁদের মনের কথা সেটা স্পষ্ট হচ্ছে একের পর এক এমন ধারাবাহিক মন্তব্যের ঘনঘটায়। ফলে সেই
মৃত্যু উপত্যকায় প্রাণ হাতে ফিরে আসা মহিলাদের গেরুয়া সাংসদ নয় কার্যত গোটা গেরুয়া বাহিনী
পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করেছিল সদ্য স্বামীহারা সেই তরুণীকে যার মৃত স্বামীর সাথে খোলা মাঠে
বসে থাকা বাক্‌রুদ্ধ ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীকেই। সদ্য বিবাহিতা এবং স্বামীহারা সেই মহিলা
বলেছিলেন এই সন্ত্রাসবাদ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে যেন অকারণে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ কিংবা
কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করে অভিযান চালানো না হয়। প্রবল শোকের আবহে এমন
স্বামীহারা তরুণী যেভাবে এই পরিণত মন্তব্য করেছিলেন প্রকাশ্যে তাঁকে দেশসুদ্ধ মানুষ কুর্নিশ
জানালেও গেরুয়া বাহিনীর তোপের মুখে পড়েছিলেন সেই মহিলা। এমনকি সেই মহিলার চরিত্র হনন
করতেও বাদ রাখেননি সামাজিক মাধ্যমে সেই উদ্ধত গণ্ডমূর্খের দল । ফলে ধারাবাহিকভাবেই এটা
স্পষ্ট হচ্ছে যে গেরুয়া শাসক বাহিনী এদেশের মহিলাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবেই দেখতে
চায়। ফলে সেই কারণেই গত দশ বছরে বহু ডবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্যের পাঠ্য বইতে পড়ানো হয় যে
এ দেশের যুবকদের মধ্যে বেকার সমস্যা বাড়ার অন্যতম মুল কারণ দেশের মেয়েদের চাকরিতে
যোগদান। এর পরেও অবশ্য ‘ বেটি বাঁচাও – বেটি পড়াও ‘ এর সরকারি বিজ্ঞাপন চলছে দেশজুড়ে ।

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম সন্ত্রাসবাদ
এখানে উল্লেখ করা দরকার যে পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হানার পরেও সেই অঞ্চলে প্রথম দু’-তিন ঘণ্টা কোনও নিরাপত্তা রক্ষী প্রবেশ করতে পারেনি। যে কথা স্বীকৃত হয়েছে সরকারি ভাষ্যেও।
ফলে সেই মৃত্যু উপত্যকা অরক্ষিত অবস্থায় রেখে যে প্রশাসনিক শূন্যতা তৈরি হয়েছিল তার
কারণেই জঙ্গিরা এমন খুনের সুযোগ পেয়েছিল। আর এখন এই গেরুয়া সাংসদ উপস্থিত মহিলাদের
কাঠগড়ায় তুলে সুকৌশলে সরকারি নিরাপত্তা ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন পর্যটকদের
ঘাড়ে, বিশেষত সেই মৃত্যু উপত্যকায় হাজির মহিলাদের উপরে। একদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন
রাজ্যের রাজ্যে গিয়ে’ অপারেশন সিঁদুর ‘ সেনা অভিযানের সাফল্যের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার
অর্জনের চেষ্টা করছেন আর অন্যদিকে তার দলীয় বাহিনীর নেতা মন্ত্রী সাংসদেরা সরকারি
নিরাপত্তার ফাঁকফোকর ঢাকার বহু কৌশল অবলম্বন করছেন। এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই
সন্ত্রাবাদের কার্য-কারণ সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরুকে
টেনে এনেছেন। ফলে শাসকের এই ভাষ্য থেকেই স্পষ্ট যে সরকারি ব্যর্থতা ঢাকতে বহুরূপীর মতো
ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করছে শাসক। অথচ পহেলগাম কাণ্ডের একমাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও
আজ অবধি সেই সন্ত্রাসবাদীদের টিকি স্পর্শ করতে পারেনি দেশের প্রশাসন। অথচ এমন নাগরিক
সুরক্ষার স্বার্থে এমন প্রশ্ন তোলা হলেই দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশদ্রোহী কিংবা ‘ সেকুলার  বলে
দাগিয়ে দিয়ে ।
সন্ত্রাসবাদের বীজ দেশ থেকে নির্মূল করতে গেলে প্রথম প্রয়োজন জাতি-ধর্ম-ভাষা- বর্ণ
নির্বিশেষে এদেশের মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদের আদর্শের চর্চা। এদেশের জাতীয়তাবাদের সাথে
ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা আদর্শ. কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে এই
যুদ্ধের আবহাওয়ায় দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু সন্ত্রাসবাদ হওয়ার পরিবর্তে
হিন্দুত্ববাদীদের কোপে পড়েছিল দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা। এদেশের উগ্র হিন্দুত্ব বাদিরা আসলে এক
ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিল। সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা হিসাবে মুসলমান দেশ হিসাবে দাগিয়ে
এদেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে চেয়েছিল আর তার সাথে তাঁদের ‘ পথের কাঁটা ‘ বামপন্থী
সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে জাতীয়তাবাদের বিরোধী শক্তি হিসাবে দাগিয়ে দিতে চেয়েছিল সঙ্কীর্ণ
রাজনৈতিক স্বার্থে! এটা উত্তরোত্তর স্পষ্ট হচ্ছে যে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বিসর্জন দিয়ে
ধর্মান্ধতার আদর্শকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি এই যুদ্ধ জিগিরকে রাজনৈতিক
প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চেয়েছিল সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আবেগের ঘোলা জলে।

দেশপ্রেমী বনাম দেশদ্রোহী

সংবিধান হাতে শপথ নেওয়া মধ্য প্রদেশের এক মন্ত্রী এবারের যুদ্ধে সেনাবাহিনীর অন্যতম
উজ্জ্বল মুখ কর্নেল কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন তার মেঠো
রাজনীতির ভাষণে। সেনাবাহিনীর এই গুরুত্বপূর্ণ জয়ের পর এক নারী সেনা আধিকারিকের বিরুদ্ধে
করা এমন কুন্তব্যে দেশজোড়া নিন্দার ঝড় উঠলেও যথারীতি সেই দাগি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দল হিসাবে
বিজেপি, কিংবা সেই রাজ্য প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সন্দেহ নেই যে রাজ্যের ক্যাবিনেট
মন্ত্রীর করা ওই কুমন্তব্য দেশদ্রোহীতার তুল্য কাজ। অথচ অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক
অধ্যাপক সেনাবাহিনীতে নারীশক্তির গুরুত্ব বৃদ্ধির দাবিতে সমাজ মাধ্যমে সওয়াল করে
দেশদ্রোহিতার অভিযোগে জেলের ঘানি টেনে ফেলেছেন এক গেরুয়া নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে। ফলে
দেশদ্রোহিতার অভিযোগে যে মন্ত্রীর জেলে থাকার কথা তিনি কলার তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর যে
শিক্ষকের ক্লাস ঘরে থাকার কথা তিনি জেলের কুঠরিতে দিন কাটিয়েছেন।
উপেক্ষিত প্রতিরক্ষা গবেষণা
আকাশপথে দেশের বায়ুসেনার এবার প্রতিরক্ষায় সাফল্য এসেছে স্বনির্ভর এবং আমদানি করা
প্রযুক্তির মেলবন্ধনে। ফলে সীমান্তের ওপার থেকে ধেয়ে আসা শয়ে শয়ে শক্তিশেল কাবু হয়েছে
দেশের প্রযুক্তি নির্ভর রক্ষাকবচের মাধ্যমে। ফলে দেশীয় প্রযুক্তির উন্নতি না ঘটাতে পারলে
কেবলমাত্র আমদানি করা প্রযুক্তিনির্ভর উপায় যে যুদ্ধক্ষেত্রে বেসামাল হতে হয় তার প্রমাণ
মিলেছে এবারের যুদ্ধে পাকিস্তানের দশা দেখে। ফলে যুদ্ধ উত্তর পরিস্থিতিতে এদেশের প্রতিরক্ষা
প্রযুক্তির জন্যই প্রয়োজন আরও বেশি নিবিড় গবেষণা এবং আরও বেশি সরকারি অনুদান এবং
গবেষণা পরিকাঠামো তৈরির সরকারি প্রয়াস। মনে রাখতে হবে যে দেশের প্রতিরক্ষার মতো একটি
জাতীয় স্বার্থ সেটি সুরক্ষিত রাখতে বেসরকারি বিনিয়োগ অত্যন্ত ঝুঁকির যে পথে চলতে চাইছে
দেশের সরকার। দুর্ভাগ্যের হলেও এটা সত্যি যে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণাতে ব্যয় উত্তরোত্তর
কমে চলেছে। ২০১৩-১৪ সালে দেশের প্রতিরক্ষা বাজেটের ৩২% খরচ হতো উন্নয়নমূলক মুলধনী
খাতে স্থায়ী পরিকাঠামো থেকে শুরু করে গবেষণা, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ইত্যাদি উৎপাদনের
ক্ষেত্রে। কিন্তু সেই খরচ কমে ২০২৫-২৬ সালে এখন দেশের মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ২৮ শতাংশে
এসে দাঁড়িয়েছে। কার্যত দেশের প্রতিরক্ষা বাজেটের একটা বড় অংশ এখন খরচ হয় দেশের সেনাদের
বেতন এবং পেনশনের ক্ষেত্রে। ফলে স্বাধীনতা উত্তর দেশে অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের দায়-দায়িত্ব
পালন যেমন সরকারের কর্তব্য ঠিক তেমনি দেশের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে স্থায়ী সেনাকর্মী নিয়োগ
সরকারের দায়িত্ব। অথচ সেক্ষেত্রে অগ্নিবীরের মতো চুক্তি ভিত্তিক সেনা প্রকল্পে তরুণ
বাহিনীকে নিয়োগের মাধ্যমে কৌশলে সরকার প্রতিরক্ষা খাতে খরচ যখন কমাতে চাইছে তখনই
পেশাদারিত্বের প্রশ্নেও তৈরি হচ্ছে সমস্যা এবং সঙ্কট। কারণ চুক্তিভিত্তিক এই সেনাকর্মীদের
অবসরকালীন এবং পেনশনের দায় দায়িত্ব সরকারের নয় বলেই এমন নিয়োগে প্রশাসনিক ঝোঁক
বাড়ছে। কিন্তু সে পথে এদেশের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর দক্ষতা কতটা সুনিশ্চিত করা
যাচ্ছে সেটাই হয়ে উঠেছে এখন বড় প্রশ্নের !

প্রয়োজন স্বনির্ভর প্রযুক্তি
কার্যত প্রতিরক্ষা গবেষণার ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের মাথাপিছু ব্যয় রাশিয়ার তুলনায় আট গুণ কম।
ফলে যে কারণে রাশিয়া এস-৪০০ কিংবা সুদর্শন চক্রের মতো প্রযুক্তি নির্ভর যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতে
পারে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করতে পারে ভারত সেখানে এখনও ক্রেতার ভুমিকায়। এই
প্রেক্ষিতে আমাদেরও শিক্ষা নিতে হবে ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা গবেষণার ক্ষেত্রে উপযুক্ত
পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে। এটা পরীক্ষিত সত্য যে গোটা পৃথিবীর তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ভারতে শিক্ষিত পড়ুয়াদের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু
এসত্ত্বেও ভারতবর্ষের মাটিতে এখনো পর্যন্ত সোশাল মিডিয়ার প্রযুক্তির উদ্ভাবন কিংবা
প্রসারের ক্ষেত্রে আমরা সফল হতে পারিনি। এই মুহূর্ত ফেসবুক , মেসেঞ্জার , ইন্সট্রাগ্রাম ,
হোয়াটসআপ , ইউটিউবের মতো ভিন দেশি সংস্থাগুলি যে কৌশলে দ্রুত এদেশের মানুষের পছন্দ,
অপছন্দ, রাগ, দুঃখ, ঘৃণা থেকে শুরু করে পণ্য, পরিষেবা সম্পর্কে যে পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করছে
প্রতিদিনই, কার্যত সেই তথ্য ব্যবহৃত হচ্ছে এদেশের মানুষের চিন্তা-ভাবনা পছন্দ-অপছন্দ
নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে। সাম্প্রতিককালে এমন মিডিয়ার মালিকেরা এক আধটা নয় গোটা পৃথিবীজুড়ে
বহু দেশের সরকার গড়া ভাঙার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন মানুষের মতামতকে
প্রভাবিত করার মাধ্যমে। ফলে এই প্রেক্ষিতে স্বনির্ভর প্রযুক্তির বিকাশ না ঘটাতে পারলে
এদেশেও সরকার ভাঙা গড়া থেকে শুরু করে দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক কিংবা রাজনৈতিক বিভাজনের
খেলায় ব্যবহৃত হতে পারে অর্থের বিনিময়ে এমন মাধ্যমগুলি।

Comments :0

Login to leave a comment