মণ্ডা মিঠাই / নতুনপাতা
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সবুজ পৃথিবীর শপথ
সৌম্যদীপ জানা
“পৃথিবীর সমস্ত ফুল ফোটে আমি দেখিনা।
পৃথিবী নষ্ট হয় আমি শুনি না।"
-জীবনানন্দ দাশ
কবি তাঁর লিখনীর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রকৃতি পরিবেশ আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। আর প্রকৃতি ও পরিবেশের কোলে এই যে আমাদের আদি-অনন্ত, জন্ম-মৃত্যু আর এই প্রকৃতিতেই যে আমাদের সকল সুর সূত্রপাত তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। কিন্তু গত কয়েক শতাব্দী ধরে যেভাবে প্রকৃতিমাতাকে আমরা অসুস্থ করে তুলেছি, যেভাবে আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংসের পথে গিয়ে দিয়েছি তাতে আমরা আমাদের জন্মস্থানকে নিজেরাই ধ্বংস করছে। পারি ধ্বংস থেকে পৃথিবীতে রক্ষা করার জন্যই আমরা পালন করি বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
আজ ৫ই জুন ২০২৫, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই দিনটি কেবলমাত্র একটি প্রতীকী উদযাপন নয়, বরং আমাদের চারপাশের প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধ, সচেতনতা ও ভালোবাসা প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মতো নানা সংকট মানব সভ্যতাকে চরম হুমকির মুখে ফেলেছে। এই প্রেক্ষাপটে পরিবেশ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে টিকে থাকাটাই হলো সত্যিকার উন্নয়ন।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সূচনা হয় ১৯৭২ সালে জাতিসংঘ আয়োজিত ‘মানব পরিবেশ’ শীর্ষক স্টকহোম সম্মেলনে। সেখানেই ৫ জুনকে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৭৪ সাল থেকে দিনটির আনুষ্ঠানিক পালনের সূচনা হয়। প্রথম থিম ছিল “Only One Earth” (শুধু একটি পৃথিবী)। তখন থেকেই এই দিনটি পরিবেশগত সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে রূপ নিয়েছে।
প্রতি বছর এক একটি ভিন্ন দেশ এই দিবসের আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবং একটি নির্দিষ্ট থিমের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই থিমগুলো যেমন সচেতনতা সৃষ্টি করে, তেমনি সরকার, সংস্থা ও সাধারণ মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, প্লাস্টিক দূষণ, বন রক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জল ও বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ইত্যাদি বিভিন্ন ইস্যু প্রতিপাদ্য হিসেবে এসেছে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের তাৎপর্য আমাদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। মানুষ ও প্রকৃতি একে অপরের পরিপূরক। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে মানুষের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়ে। সুতরাং, গাছ লাগানো, পানি ও বিদ্যুৎ অপচয় না করা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী ব্যবহার, প্লাস্টিক বর্জন, বর্জ্য যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করা—এসব ছোট ছোট অভ্যাস আমাদের পরিবেশ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
আজকের দিনে আমাদের শপথ নেওয়া উচিত যে, শুধু একটি দিনের সচেতনতা নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনে পরিবেশবান্ধব অভ্যাস গড়ে তুলবো। এই পৃথিবী আমাদের একটাই, এবং সেটিকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
পরিবেশ রক্ষা মানেই হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর, সুস্থ ও নিরাপদ পৃথিবী রেখে যাওয়া। একবিংশ শতাব্দীতে টেকসই উন্নয়নের পথে হাঁটতে হলে পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই এগোতে হবে। নইলে জলবায়ু সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জীব বৈচিত্র্যের ক্ষয়—এই সবই আমাদের সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।
পরিশেষে, বিশ্ব পরিবেশ দিবস শুধুমাত্র একটি দিন নয়, বরং একটি আন্দোলন, একটি উপলব্ধি এবং আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একটি প্রয়াস। আসুন, সকলে মিলে এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলি—আজ, আগামীকাল এবং ভবিষ্যতের জন্য।
নতুনবন্ধু / নবম শ্রেণী কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা ডাঙ্গাপাড়া খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা।
Comments :0