গল্প — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
তালপাতার হাতপাখা
সৌরীশ মিশ্র
বছর দশের তান বিছানায় শুয়ে একটা কমিকস পড়ছে।
বিছানায় ওর পাশে শুয়ে ওর ঠাম্মি।
আজ রবিবার। এখন দুপুরবেলা। এটা তানের ঠাম্মির ঘর।
তানদের বাড়িতে এখন তান আর ওর ঠাম্মিই শুধু আছে। এ বাড়ির অন্য দুই সদস্য, তানের বাবা-মা, গিয়েছেন গড়িয়াহাটে, কিছু কেনাকাটা করতে।
তানের ঠাম্মি ঘুমোচ্ছেন। উনি তানকেও ঘুমোতে বলেছিলেন। কিন্তু, তান শোনেনি সে কথা। ঠাম্মি যতক্ষণ না ঘুমিয়েছে, ততক্ষণ দু'চোখ জোড় করে বন্ধ করে মটকা মেরে শুয়েছিল সে। তারপর ঠাম্মি ঘুমিয়ে পড়তেই ও, ক'দিন আগে ওর মামার দেওয়া কমিকস বইটা নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়তে শুরু করে দিয়েছে। কমিকস পড়তে দারুণ লাগে তানের।
একমনে পড়ছিল বেশ তান বইটা। হঠাৎ ঘটল এতে ছন্দপতন, লোডশেডিং হয়ে যাওয়ায়।
ক'দিন হোলো হঠাৎই ভীষণই গরম পড়েছে। ঘরের পাখাটা ফুল স্পিডে দেওয়া ছিল। বনবন করে ঘুরছিল সেটা। এখন কারেন্ট চলে যেতে থেমে গেছে ওটা। বন্ধ পাখাটার দিকে শুয়ে শুয়ে তাকিয়ে ছিল তান। তখুনি, একটা কথা মনে হোলো তানের। আর, কথাটা মাথায় আসতেই, সে বইটা তাড়াতাড়ি বিছানায় একপাশে রেখে উঠে বসল। আর বসে, প্রথমেই ঠাম্মির দিকে তাকাল তান। এখনও ঘুমোচ্ছে ঠাম্মি। সে বিছানা থেকে আস্তে করে নামল। তারপর, ঐ ঘরের ডানদিকের দেওয়ালের তাকটার কাছে পায়ে পায়ে গিয়ে সেটা থেকে পেড়ে নিল তালপাতার হাতপাখাটা। সে পাখাটা নিয়ে তারপর, ফিরে এসে ফের উঠে পড়ল বিছানায়। তবে, এবার কিন্তু আর শুলো না সে। তান পাখাটা দিয়ে হাওয়া করতে থাকল ধীরে ধীরে তার ঠাম্মিকে, ঠিক যেমনটি অন্য সময় কারেন্ট চলে গেলে ওকে হাওয়া করে দেয় এই পাখাটা দিয়েই ওর ঠাম্মি।
তানের বড্ড ভালো লাগছে এখন, ঠাম্মির জন্য এটুকু করতে পেরে। ঠাম্মি তো কতো কিছুই না করে ওর জন্য। ও কি, গরমে যাতে ঘুমটা না ভেঙ্গে যায় ঠাম্মির, তার জন্য এটুকু করতে পারে না! করতে তো সে পারেই- মনে মনেই বলে ওঠে তান। সে ঠিক করে যতক্ষণ না কারেন্ট আসছে বা নিজে থেকে ঠাম্মির ঘুম ভাঙ্গছে, সে হাওয়া করেই যাবে ঠাম্মিকে। থামবে না মোটেই। হাত ব্যাথা করলেও, না।
সেই মতোই, তান তালপাতার হাতপাখাটা দিয়ে হাওয়া করা চালিয়ে যেতে থাকল।
Comments :0