ভ্রমণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
পিণ্ডারির পথে...
অভীক চ্যাটার্জী
তিন
পআজ আমাদের গন্তব্য খ্যাতি। ধাকুড়ি থেকে দূরত্ব মোটামুটি আট কিমি। আমাদের প্রথমে নেমে আসতে হবে খারকিয়াতে। সেখান থেকে যেতে হবে খ্যাতির উদ্দেশ্যে। এই পথ বড় অদ্ভুত। কখনো উচুঁ কখনো নিচু, কোনো জঙ্গল কখনো খোলা মাঠ, পেরিয়ে চললাম আমরা খ্যাতির উদ্দেশ্যে। পথেই আমাদের সাথী হলো পিন্ডার নদী। বার দুয়েক এই নদীকে টপকাতে হয় খ্যাতি পৌঁছনোর আগে। পাহাড়ের গায়ে ছবির মত সুন্দর গ্রাম খ্যাতি। বলা হয়, পাণ্ডবরা অজ্ঞাতবাসের সময় কিছুকাল খ্যাতিতে কাটিয়েছিলেন।সেখানকার PWD ট্রেকার্স হাটটি ব্রিটিশ আমলের। তবে তার যথেষ্ট রক্ষণাবেক্ষণ হয় দেখলে বোঝা যায়। চোখের সামনে সারিবদ্ধ হিমালয়ের শৃঙ্গোরাজি, নন্দাদেবী, নন্দাখাত, নন্দাখোট । বড়ো নয়নাভিরাম সে দৃশ্য। কতক্ষন সে দৃশ্য দেখলাম জানি না। চমক ভাঙ্গলো নন্দনের ডাকে। চা নিয়ে এসেছে সে। এর আগে আমরা দুপুরের খাবার খেয়েছি হিমালয়ের সামনে বসে। এ ভাবেই যদি সারাজীবন কাটাতে পারতাম। হায় রে জীবন!
খ্যাতিকে বিদায় জানিয়ে পরদিন খুব ভোরবেলা আমরা বেরিয়ে পড়লাম দ্বালির উদ্দেশ্যে। এই দিনটি পুরো ট্রেকে সবচেয়ে কঠিন। আমাদের অতিক্রম করতে হবে প্রায় চোদ্দ কিমি পথ।প্রথমেই অতিক্রম করলাম পিণ্ডার নদী। তারপর শুরু হলো চড়াই। কিছু পথ সমতল চলি, আবার চড়াই আসে। শরীর হার মেনে যায় কিন্তু মন হার মানার পাত্র নয়। মনের জোরে এগিয়ে যাই আমরা দুজন। নন্দন যেন পাহাড়ি সরীসৃপ। খুব বেশি হলে তার উচ্চতা পাঁচ ফুট, কিন্তু কি অসাধারণ তার শারীরিক দক্ষতা! সে কিছুটা এগিয়ে যায়। অপেক্ষা করে। কঠিন জায়গায় হাত ধরে টেনে তোলে। আমরা একটু একটু করে এগিয়ে যাই। পথ শেষ হতেই চায় না। শেষে এক রুক্ষ পাথুরে পথ আসে। গাছ নেই, সবুজের নাম গন্ধ নেই। শুধু আছে ঝোড়ো হাওয়া, অতি বেগে ধাবমান পিণ্ডার নদী আর বড় বড় পাথর, যাতে পা ফেলে ফেলে আমরা এগিয়ে যাবো। দূরে দেখা যায় কেএমভিএন এর ট্রেকারস হাট। পৌঁছতে অনেকক্ষন লাগবে। হেঁটে চলেছি আমরা। কষ্ট উপলব্ধি বোধ সব লোপ পেয়েছে ততক্ষণে আমাদের দুজনেরই। শুধু এটুকু বুঝতে পারছি, চলতে হবে। আমরা শেষে পৌঁছলাম দ্বালি ট্রেকার্স হাটে। শরীর তখন খুব দূর্বল। প্রতীক এবং আমি দুজনেরই বিশ্রামের খুব দরকার তখন। রাতের খাবারের অর্ডার দিয়ে আমরা শুয়ে পড়লাম। শরীর তখন ছেড়ে দিয়েছে। রাত আটটা নাগাত দুজন উঠলাম রাতের খাবার খেতে। তখনই খেয়াল করলাম রাতের আকাশে অসংখ্য তারার মেলা। সে অদ্ভুত এক আকাশ। কোথাও কোনো আলো নেই। শুধু তারার মালা ঘিরে রেখেছে বিশ্ব চরাচর। খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লাম আমরা।
চলবে
Comments :0