একদিনে ৪৮৬টি টেন্ডার! প্রায় সাড়ে ৪হাজার কিলোমিটার।
শনিবার রাজ্যে গ্রামের রাস্তা তৈরির এই ৪৮৬টি টেন্ডার ডেকেছে প্রশাসন।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের এক আধিকারিকের মন্তব্য,‘‘একদিনের জন্য এটি অনেক বেশি হয়েছে। সেটা ঠিক। তবে শুক্রবারও ৩৪৫টি টেন্ডার ডাকা হয়েছে।’’
সব টেন্ডারই গ্রামের রাস্তার। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গ্রামের রাস্তার হাল ফিরিয়ে দুর্নীতি, সন্ত্রাসে দলের কালি লেপা ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে নেমেছেন মমতা ব্যানার্জি। টেন্ডার ডাকা হয়েছে কোচবিহার থেকে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া থেকে সুন্দরবন— রাজ্যের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে। প্রসঙ্গত, ২০২০-র অক্টোবরে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে মমতা ব্যানার্জি ‘পথশ্রী’ বলে একটি প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন। তখন তাঁর ঘোষণা ছিল,‘‘মিশন মোডে কাজ হবে। ১২,০০০কিমি রাস্তার কাজ হবে।’’ সেই প্রকল্প পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। বিশেষ কোনও কাজই হয়নি। এবার সেই একই কাজ বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন নামে। সম্প্রতি বিধানসভায় পেশ হয়েছে ২০২৩-২৪-র বাজেট। সেখানে ‘রাস্তাশ্রী’ নামে একটি নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। রাস্তা মেরামতি এবং তৈরির প্রকল্প। ১১,৫০০ কিমি রাস্তার জন্য ৩০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এই প্রকল্পে। অর্থাৎ প্রতি কিমি রাস্তার জন্য ২৬লক্ষ টাকা!
বেশিরভাগ কাজের ক্ষেত্রে শর্ত— আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। কাজগুলি শুরু করার লক্ষ্যমাত্রা ১১ থেকে ২০ মার্চের মধ্যে। অর্থাৎ মমতা ব্যানার্জির সরকারের লক্ষ্য মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে নতুন রাস্তা বানানো কিংবা মেরামতির কাজ শেষ করা। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই এমন লক্ষ্যমাত্রা সাজানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, আগামী জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। রাজ্য সরকার অবশ্য সেই সময়সীমার আগেই পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে চাইছে।
কোনও টেন্ডার ডেকেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। কোনও কোনও টেন্ডার ডাকা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আর্থিক বছর শেষ হতে বাকি আর এক মাসের কিছু বেশিদিন। চলতি আর্থিক বছরে, গত প্রায় ১০-১১ মাস ফেলে রাখার টাকার কাজ দেখানোর জন্যই এই প্রচুর টেন্ডার ডাকা।
এছাড়া আর একটি কারণ আছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে। মূলত নির্বাচনে গ্রামবাসীদের প্রভাবিত করার লক্ষ্যেও মমতা ব্যানার্জির সরকার এতগুলি টেন্ডার এক দিনে ডাকছে। একসঙ্গে অনেকগুলি কাজ, যা আগেই শুরু করা উচিত ছিল, তা শুরু করতে চাইছে।
আরও একটি কারণ আছে বলেও পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিকদের দৃঢ় অনুমান। গত বেশ কয়েক মাস ঠিকাদাররা কাজ পাচ্ছেন না। তাদের অনেকেরই অনেক টাকা এখনও মেটায়নি সরকার, প্রশাসন। সম্প্রতি ঠিকাদারদের কিছু অংশকে টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে, এই আশা দেখিয়ে সেই ঠিকাদারদের দিয়ে এবারের কাজগুলি নির্বাচনের আগে করিয়ে নিতে চাইছে রাজ্য সরকার।
তবে সর্বত্র এই হার বজায় রাখা হয়নি। রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হুগলীর বলাগড়ে রাস্তা তৈরির জন্য একটি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। একটিই টেন্ডারে ১৮টি রাস্তা তৈরির কাজ করা হবে। অর্থাৎ একজনই ঠিকাদার ১৮টি রাস্তা তৈরির বরাত পাবেন। সেখানে বলাগড়ের বেনালির চর থেকে সেগুনতলা তেলিয়াপাড়া মোড় পর্যন্ত ৩কিমি ৩৫ মিটার রাস্তা তৈরির জন্য ১,১৬,০৯,২১৫টাকা খরচ করা হবে। অর্থাৎ প্রতিটি কিমি’র জন্য খরচ করা হবে ৩৪,৬৫,৪৩৭ টাকা প্রায়। আবার চণ্ডীতলা-১নং ব্লকের অনিয়া আরাশুনা সাতপুকুর থেকে বাঁধপুর জিরামোড় পর্যন্ত ৫কিমি ১০০ মিটার রাস্তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১,০৩,৪১,২৭৪টাকা। এই ক্ষেত্রে প্রতি কিমির জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২০,২৭,৭০০টাকা।
ঝাড়গ্রামের মতো কিছু জেলার ক্ষেত্রে কাজের বরাত সরাসরি রাজ্য থেকে আহ্বান করা হয়েছে। আহ্বান করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি।
Pothosree
সাড়ে ৪হাজার কিমি রাস্তার জন্য একদিনে রাস্তার টেন্ডার ৪৮৬টি
×
Comments :0