বুরকিনা ফাসোর বিপ্লবী এবং অবিসংবাদীত নেতা টমাস শঙ্করা (Thomas Sankara) মৃতদেহ প্রায় ৩০ বছর আগে অন্যান্য কমরেডদের সাথে যেখানে তাকে হত্যা করা হয়েছিল সেই স্থানে পুনরায় সমাধিস্থ করা হয়েছে।
সেনা এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব বৃহস্পতিবার রাজধানী ওয়াগাডুগুতে একটি অনুষ্ঠানের সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তাঁর প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে। শঙ্করা ছাড়াও আরও ১২ শহীদ কমরেডের কফিনের পাশে একটি ছবি সহ বুর্কিনা ফাসোর পতাকায় মোড়া ছিল।
শঙ্করা ১৯৮৩ সালের আগস্টে ৩৩ বছর বয়সে একজন সেনা ক্যাপ্টেন হিসেবে ক্ষমতায় আসেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ব্লেইস কম্পাওরের (Blaise Compaore
তিনি ঔপনিবেশিক-যুগের ‘আপার ভোল্টা’ থেকে দেশের নাম পরিবর্তন করে ‘বুর্কিনা ফাসো’ (Burkina Faso) রাখেন, যার অর্থ – ‘‘সৎ মানুষের দেশ’’। তিনি একগুচ্ছ সংস্কারের পথে হাঁটেন ক্ষমতায় এসেই, যার মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং কুসংস্কার নিষিদ্ধকরণ ছিল অন্যতম। শঙ্করার নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য ছিল জাতীয়করণ, ভূমি সংস্কার, এবং বিস্তৃত রেলওয়ে বিল্ডিং প্রোগ্রাম। সেই সময়ে আফ্রিকার অন্যতম সফল দুরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধে গণ টিকাকরণ কর্মসূচী হয়েছিল। ২০ লক্ষেরও বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছিল। তিনিই প্রথম আফ্রিকান নেতা যিনি এইচআইভি এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নেন। শঙ্করা সারা দেশে স্কুল ও হাসপাতাল তৈরি করেন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে ১ কোটিরও বেশি গাছ রোপণ করেন। তার শাসনের মাত্র চার বছরের মধ্যে, বুরকিনা ফাসো খাদ্যে স্বাবলম্বন অর্জন করেছিল। বুরকিনা ফাসোর সরকারী সব স্তরে মহিলাদের নিয়ে আসা ছিল শঙ্কারার অন্যতম বড় রাজনৈতিক সাফল্য। তার সরকার বহুবিবাহের পাশাপাশি নারী দেহ নিয়ে প্রাচীন কুসংস্কার নিষিদ্ধ করে।
গুরুত্বপূর্ণভাবে, শঙ্করা বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এবং যেখানে সম্ভব স্ব-নির্ভরতা গড়ে তোলা এবং পশ্চিমকে প্রত্যাখ্যান করে দক্ষিণের অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন।
কিন্তু তাঁর মেয়াদ ছিল স্বল্পস্থায়ী।
১৫ অক্টোবর, ১৯৮৭-এ ক্ষমতাসীন জাতীয় বিপ্লবী কাউন্সিলের একটি সভায চলাকালীন সেখানে ‘হিট স্কোয়াড’ ঢুকে পড়ে শঙ্করা এবং আরও এক ডজন নেতাকে গুলি করে হত্যা করে। একদা শঙ্করার ‘ডান হাত’ কম্পাওরই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসে বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মামলাও চলেছে। অবশেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কম্পাওরকে আজীবন কারাদন্ডের সাজা শোনায় আদালত।
কম্পাওরের দীর্ঘ ২৭ বছরের শাসনকালে শঙ্করার হত্যা প্রসঙ্গ কঠোরভাবে ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়। ২০১৪ সালে তাকে প্রবল জনরোষের মুখে পড়ে পদ ছাড়তে হয়। কম্পাওর, যিনি এখন আইভরি কোস্টে থাকেন, তিনি সবসময় শঙ্করার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
যদিও শঙ্করার পরিবার অখুশি এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিতও থাকেনি। পরিবারের বক্তব্য, শঙ্করাকে অন্য কোথাও সমাধিস্থ করা যেত, যেখানে তাকে এবং তার বাকি কমরেডদের হত্যা করা হয়েছিল সেখানেই তাঁদের সমাধিস্থ করা অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতিকেই ফিরিয়ে আনার সমান।
Comments :0