প্রতিশ্রুতি দিয়েও ‘যোগ্য-অযোগ্য’দের তালিকা দিতে পারল না এসএসসি। সারা দিন অপেক্ষায় বসে থাকার পরেও তালিকা হাতে না পেয়ে বিধাননগরে এসএসসি ভবনের সামনে দিনের শেষে পুলিশের সঙ্গে ধুন্ধুমার বাঁধল চাকরিহারা শিক্ষকদের। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী এবং তারপর শিক্ষা মন্ত্রী তাঁদের যে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট হয়ে যেতেই তাঁরা এসএসসি অফিস আচার্য সদনের দু’টি গেটই ঘেরাও করে রেখেছেন, এসএসসি’র চেয়ারম্যান ভিতরে আটকে রয়েছেন। রাত পর্যন্ত এই ঘেরাও এবং চাকরিহারাদের বিক্ষোভ চলছে, বিশাল পুলিশ বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে বিক্ষোভ সামলাতে। বিক্ষোভকারীরা সারা রাত ঘেরাও চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল এসএসসি’র। কিন্তু পরিবর্তে ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলের আটটি কাউন্সেলিং-এর প্রথম তিনটি কাউন্সিলিংয়ে নিয়োগই বৈধ এবং পরবর্তীগুলি অবৈধ বলে জানিয়ে দায় সেরেছে তারা। এতেই আগুনে ঘৃতাহুতি পড়েচে, ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অপেক্ষারত চাকরিহারারা।
শিক্ষা মন্ত্রী, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং এসএসসি’র চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ২১ এপ্রিলের মধ্যেই যোগ্যদের তালিকা দেওয়া হবে আইনি দিকগুলি বিবেচনা করে। কিন্তু তার আগেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অযোগ্য বলে চিহ্নিত নন, এমন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাময়িকভাবে কাজে বহাল রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়োগ শেষ করার জন্য সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এই রায়েও চাকরি বজায় রাখার কোনও সুযোগ না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানতে চান, ‘‘আমাদের চাকরি বজায় রাখতে এসএসসি কী করল? এসএসসি’র পরীক্ষা দিয়ে আমাদের পাওয়া চাকরি বজায় রাখতে আমাদের আবার কেন পরীক্ষায় বসতে হবে?’’
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় করুনাময়ী থেকে মিছিল করে এসএসসি’র অফিস আচার্য সদনের সামনে অবস্থানে বসেন ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’র শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দিনের শেষে অধিকার মঞ্চ থেকে ১৩ জনের প্রতিনিধিদল আচার্য সদনে চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে আলোচনার জন্য যান। প্রথমে অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তাঁরা কেউ ভেতরে যাবেন না। এসএসসি থেকেই আধিকারিকরা এসে তালিকা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রকাশ্যে আলোচনা করুন। যতক্ষণ না তাদের দাবি মানা হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা অবস্থানে বসে থাকবেন। কিন্তু সময়সীমা পার হতে বসায় প্রতিনিধিরা যান এসএসসি কার্যালয়ে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু তালিকা প্রকাশ করেনি এসএসসি। তারপর ২ ঘন্টার কাছাকাছি আলোচনার পরে ভেতরের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বাইরে নিরাশার বার্তা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হাজার হাজার চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীরা।
কী বার্তা পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আন্দোলনরত চাকরিহারারা? তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত নিযুক্ত প্রার্থীদের চাকরিকে বৈধ এবং বাকি চারটি কাউন্সিলকে অবৈধ বলছে এসএসসি। এই বার্তা আসতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। তুমুল ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে চাকরিহারাদের। তাঁদের দাবি, ‘‘যোগ্য-অযোগ্য তালিকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন বলছে, তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত বৈধ? এসএসসি যদি এটা জানত, তাহলে এরপরেও নিয়োগ করল কীভাবে? কোন আইনে, কোন যুক্তিতে বাকিদের অবৈধ বলছে? কাউন্সেলিংয়ে ঢিলেমি আমরা করিনি, দপ্তর করেছে। হাইকোর্টে এরা নিজেরাই হলফনামা জমা দিয়ে সপ্তম কাউন্সেলিং পর্যন্ত বৈধ করে। ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্তে কাউন্সেলিং পিছিয়ে ছিল। তাহলে আমাদের এখন বলি দেওয়া হচ্ছে কেন?’’
তাঁদের বক্তব্য, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির দায় আমরা কেন নেব? আমাদের সম্পূর্ণ যোগ্য-অযোগ্য তালিকা চাই। ওএমআর প্রকাশ করুক, তবে এসএসসি’র চেয়ারম্যানকে বেরতে দেওয়া হবে। কাউন্সেলিং-এর ব্যাপার আমরা দেখে নেব, আদালতে এসএসসি আগে তালিকা দিক। সুপ্রিম কোর্টের রায়েও কোথাও বলা নেই তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত বৈধ। এসএসসি’র চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ করছেন। সকাল থেকে বসে আছি আমরা, আর গোটা দিনের শেষে এখন আমাদের সঙ্গে কাউন্সেলিং-এর নামে চালাকি করছেন অযোগ্যদের বাঁচাতে।’’
এদিন গলায় শিক্ষা মন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির ‘ললিপপের মালা’ ঝুলিয়ে এসএসসি অভিযানে এসেছিলেন এক শিক্ষক। তিনি বলেছেন, ‘‘ললিপপ দেখিয়ে চাকরি, মানসম্মান কেড়ে নেবে, তা মানা হবে না। চাকরিতে পুনর্বহাল না হলে গণআত্মহত্যাই আমাদের শেষ পদক্ষেপ হবে। তবু এই ললিপপ নিয়ে বাড়ি ফিরব না।’’
তবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আরএলএসটি, ২০১৬’র গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি শিক্ষাকর্মীরা পুরোপুরি ব্রাত্য থেকেছেন। তাঁদের চাকরিতে কোনও সাময়িক সুরাহাও মেলেনি। ফলে ক্ষুব্ধ কর্মচারীরা জবাবদিহি চাইতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সামনে বিক্ষোভ দেখান। চাকরিহারা ‘যোগ্য গ্রুপ-সি অ্যান্ড গ্রুপ-ডি অধিকার মঞ্চ’র আট জন প্রতিনিধি ডিরোজিও ভবনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানের কাছে দাবিগুলি নিয়ে গেলেও কোনও সদুত্তর না পেয়ে তাঁরাও অবস্থান শুরু করেন ডিরোজিও ভবনের ভেতরে এবং বাইরে, আটক করে রাখেন সভাপতিকে।
SSC SCAM
রাত পর্যন্ত ঘেরাও হয়ে আছেন কমিশনের চেয়ারম্যান

×
Comments :0