বীরভূমের মহম্মদ বাজারে জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে বোলপুরের শিবপুরে শিল্পের জন্য জমি দেওয়া মানুষদের সাথে দেখা করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার সাতসকালেই শিবপুরের ডাঙ্গাপাড়ায় পৌছে যান সেলিম। সেখানে মিলিত হন আশপাশের গ্রামের অসংখ্য মানুষের সাথে।
রবিবার বীরভূমে মহম্মদবাজারে জনসভার রাস্তায় বিশাল মিছিল শুরু হয়েছে দুপুরে। মিছিলে সেলিমের সঙ্গে রয়েছেন পার্টির অপর পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম। মিছিলে তাঁদের সঙ্গে বক্তব্য রাখবেন পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবলীনা হেমব্রম।
সেই মানুষদের সাথে নিয়ে সেলিম আওয়াজ তুলেছেন, ‘হাত আছে কাজ চাই, নইলে জমি ফেরত চাই।’ বোলপুরের উপকন্ঠে থাকা শিবপুর বহু চর্চিত নাম। বামফ্রন্ট সরকারের শিল্পের জন্য শিবপুর মৌজার জমি অধিগ্রহন করেছিল। সেই শিল্পের জন্য অধিগৃহিত জমিতে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর শিল্পের সম্ভাবনা ধবংস করেছে। বরং তাতে থাবা বসিয়েছে জমি হাঙররা। এলাকার শিবপুর, কাশিপুর, নূরপুর, সাবিরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার হিন্দু-মুসলিম-আদিবাসী মানুষ একজোট হয়েই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন জারি রেখেছেন এখনও। যার খেসারতে সইতে হয়েছে হুমকি, শাসানি, হামলা, মামলা। তবুও এলাকার মানুষ অনড় রয়েছেন তাঁদের দাবিতেই, ‘হয় শিল্প করো, নয় জমি ফেরত দাও।’ সেই মানুষদের কাছেই রবিবার দিনের আলো ফুটতেই পৌছেছিলেন মহম্মদ সেলিম। শিবপুরের মাটিতে দাঁড়িয়েই এদিন সেলিম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘মানুষের নানাবিধ যন্ত্রণায় গোটা রাজ্য জুড়েই আন্দোলন হচ্ছে। শিবপুরেও হবে। কিছুদিনের মধ্যেই শিবপুরের আন্দোলনের ঝাঁঝ দেখতে পাবেন মানুষ। শিল্পের জন্য, কর্মসংস্থানের জন্য দেওয়া জমিতে যদি তা না হয় তাহলে মানুষ মানবেন কেন ?'
মাড়গ্রামের বোমাবাজি প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, আগে বলত প্রাণে বাঁচার জন্য তৃণমূলের গেলাম। এখন তারা বলছে প্রাণে বাঁচার জন্য তৃণমূল ছাড়তে হবে। তৃণমূলে থাকলে বাঁচা যাচ্ছে না, বগটুই প্রমাণ। বগটুইয়ে কান্ডেই আবার মমতা ব্যানার্জি মিড ডে মিলের টাকা চুরি করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। বগটুই কেসে সিবিআই যে তদন্ত করছে তাতে অনুব্রত মন্ডলকে যোগ করেনি। আর্থিক লেনদেনা মমতা ব্যানার্জিই ভাগ করে দিয়েছেন। কয়লা পাচার, গোরু পাচার, টোল প্লাজার বেআইনি টাকা সব ভাগ করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ক’দিন আগে বীরভূমে এসে মমতা বলে গিয়েছেন আগের সিস্টেমেই সব চলবে। অর্থাৎ লুটের রাজত্ব চলবে। সেই লুটের বখরা নিয়ে তৃণমূলের খুনোখুনিও চলবে। রাজ্যে যদি খুনোখুনি বন্ধ করতে তৃণমূলকেই বাদ দিয়ে দিতে হবে।’’
এদিন বিশ্বভারতী প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, গোটা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বাণিজ্যকরণ বা গৈরিকিকরণ করার চক্রান্ত চলছে। নতুন শিক্ষা নীতিও তাই। আমরা বামপন্থীরা প্রথম থেকে এর বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমাদের রাজ্য সরকারও রাজ্য শিক্ষাঙ্গনেও সেই ব্যবস্থা করেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যা শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল তা মোদি ও দিদি বেচে দিচ্ছেন। রবীন্দ্র ভাবনা দিয়ে শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতীতে বিশ্বনাগরিক তৈরি করার প্রচেষ্টা চলত সেখানে কয়েকটা অমানুষকে বসিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চৌপাট করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের রাজ্যেও একই ধারা চলছে। হঠাৎ মমতা এসে বলে দিলেন আমার সরকার জমি দিয়েছে। ১৯৪৩ সালে দেওয়া জমি কি করে মমতার সরকারের হয়। সে তো ব্রিটিশ সরকারের জমি। এতেই পরিস্কার মমতা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সংস্কৃতিই বহন করছেন। দেশে মোদি, রাজ্যে মমতা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ঐতিহ্যকে নষ্ট করছেন।
Comments :0