শারদোৎসব যাতে সবার সম্প্রীতির উৎসব হয়ে ওঠে সেই আবেদন করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সোমবার বহরমপুরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, শারদোৎসবের সময় সবাই সম্প্রীতি মুখর থাকুন। কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদল ধর্মীয় উৎসব নিয়ে রেষারেষি করছে, তারা মানুষকে সাম্প্রদায়িক ভাগাভাগি করছে। আগে রাজ্যে এই অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছর আমরা দেখেছি এমনই হচ্ছে রামনবমীর মতো অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। শারদোৎসবে যাতে কোনও বিভেদকামী শক্তি সক্রিয় না হতে পারে তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। রেড ভলান্টিয়াররাও সতর্ক থাকবেন।
এদিন বহমপুরে সিপিআই(এম)’র মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহম্মদ সেলিম এবং পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম। বর্তমান সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের পর্যালোচনা হয়েছে বৈঠকে। পরে সাংবাদিক বৈঠকে রামচন্দ্র ডোম এবং পার্টির জেলা সম্পাদক জামির মোল্লাকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন সেলিম। তিনি বলেছেন, উৎসবে আমাদের পার্টির কর্মীরা প্রগতিশীল সাহিত্য, মার্কসবাদী সাহিত্য, শিশু সাহিত্য নিয়ে বুকস্টল করছেন। গতবারের থেকে এবার ২৫ শতাংশ স্টল বেশি হচ্ছে। অনেক নতুন জায়গায় হচ্ছে, মানুষের মধ্যেও উৎসাহ বেড়েছে। এই সময়ে বহু বই ও শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। মানুষ এগুলি সংগ্রহ করবে আশা করি।
রাখিবন্ধনের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেলিম বলেছেন, গত শতাব্দীতে আজকের দিনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ এবং আরও গুণীজনেরা রাখিবন্ধনের ডাক দিয়েছিলেন। এটা আমাদের ঐক্যের সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ধারা। আজকের দিনেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুদৃঢ় করতে, অখন্ড বাঙালি জাতিসত্ত্বা উদ্যাপন করতে আমরা সবাই রাখিবন্ধন করি। আজকে সংস্কৃতি রাজনীতি অর্থনীতি সব বিবর্ণ করে দেওয়া হচ্ছে, তখন রাখিবন্ধনের ইতিহাস স্মরণ করা জরুরি।
তিনি বলেছেন, মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙায় আরএসএস সেনায় নিয়োগের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে যাতে তাদের মাথায় ঘৃণার রাজনীতি ঢোকানো যায়। এগুলো ভাড়াটে কোম্পানির সৈন্য। আমরা এর প্রতিবাদ করছি, এবং প্রশ্ন তুলছি তৃণমূল সরকার কী করছে? তৃণমূলের মদতে বাংলার মাটিতে আরএসএস কাজ করছে।
ইজরায়েল প্যালেস্তাইন সংঘর্ষ নিয়ে ভুয়ো তথ্য প্রচারে সতর্ক থাকার আবেদন করেও তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীই এর জন্য দায়ী। তিনিই প্রথমে বিবৃতি দিয়ে এথনিক ক্লিনসিং করা জায়নবাদী ইজরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তারপরে বিজেপি আরএসএস সোশাল মিডিয়াতে মিথ্যা প্রচার করছে। এই বিষয়েও সাবধান থাকতে হবে।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের নির্বাচিত তৃণমূলের পদাধিকারীর স্বামীর জেলায় কালচারাল হাব নির্মাণের ঠিকাদারির দায়িত্ব পাওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, উনি জেলা পরিষদের পদাধিকারীর স্বামী বলে দায়িত্ব পেয়েছেন, নাকি উনি ঠিকাদারের স্ত্রী বলে জেলা পরিষদে পদ পেয়েছেন? শুভেন্দু অধিকারীও গতবার এভাবেই পদ নিলামে তুলেছিলেন। এভাবেই দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। অভিষেক ব্যানার্জি নতুন ধরনের পঞ্চায়েত করা হবে বলেছিলেন। এটাই ওদের নতুন ধরনের পঞ্চায়েতের নমুনা। অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গে যার যার সম্পর্ক আছে তাদের সবাইকেই জেরায় ডাকা উচিত। এত টাকা কেউ একা পাচার করতে পারে না। তন্ত্র গড়ে উঠেছে পাচারের, এর সঙ্গে অনেক সরকারি অফিসারও যুক্ত আছেন।
তিনি বলেন, তৃণমূল সরকার নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। দুর্নীতি করছে, এবং আরএসএস বিজেপি’কে ধরে ব্যবস্থা করেছে যাতে ইডি সিবিআই শুধু যাওয়া আসা করে, না ধরে তার ব্যবস্থা করছে। দুর্নীতির টাকার অভাব হলে তা পুষিয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রী ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী বিধায়কদের। স্বাস্থ্য শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ছে না, প্রকল্পের কর্মীরা বেতন পাচ্ছে না, ডিএ পাচ্ছে না। অন্যদিকে যারা স্করপিও নিয়ে ঘুরছে তাদের ভাতা বাড়াচ্ছে।
মুর্শিদাবাদে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এবং মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি’র রাজনীতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে সেলিম বলেছেন, কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার থাকাকালীন আমরা বামফ্রন্ট সরকারের পক্ষ থেকে মুর্শিদাবাদে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দাবি করেছিলাম এবং আদায় করেছিলাম। তখন জমি দেওয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানের তৃণমূল নেতারা বিরোধিতা করেছিলেন। এখন কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গড়ে তোলায়। মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘুরা কি কেবল পরিযায়ী শ্রমিক হবে? আমরা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছিলাম। মমতা ব্যানার্জির সরকার রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেই নষ্ট করছে। আহিরণে যা হওয়ার কথা ছিল সেটাও করেনি। মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ঘোষণা সর্বস্ব। এর জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার নইলে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এটাও ধংস করবে।
Md Salim
বিভাজনের চেষ্টায় বিজেপি, তৃণমূল শারদোৎসবে সম্প্রীতি মুখর থাকুন, আহ্বান মহম্মদ সেলিমের
×
Comments :0