Rape and Murder

ধর্ষণ করে খুন, অভিযোগ পরিবারের

রাজ্য

জাঙ্গীপাড়ায় পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের। ছবি: অভীক ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা: জাঙ্গীপাড়া, ৮ অক্টোবর— দশমীর রাতে ভাইবোনের সঙ্গে বেরিয়ে নিখোঁজ কিশোরীর দেহ উদ্ধার হলো তিন দিন পর। তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে পরিবারের বক্তব্য। নিখোঁজ হওয়ার কথা বারে বারে থানায় জানালেও পুলিশের কোনোরকম সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যদের। পুলিশের ভূমিকায় ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।    
পরিবর্তনের বাংলায় মহিলাদের নিরাপত্তা যে সুরক্ষিত নয়, আরও একবার তার নজির মিলল হুগলির জাঙ্গীপাড়ায়। বিসর্জনের কার্নিভালের মধ্যেই অস্তমিত হলো একটি ফুটফুটে প্রাণের। শুধু তাই নয়, বাগুইআটিতে দুই কিশোর, বোলপুরে শিশু এবং বীরভূমেরই জঙ্গলে এক তরুণের নিখোঁজ হওয়ার পর খুনের ঘটনা সাম্প্রতিককালে প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্য। সব ক্ষেত্রেই পুলিশের চরম ব্যর্থতা সামনে এসেছে।
গত বুধবার দশমীর রাতে নিখোঁজ ওই নাবালিকার দেহ শনিবার সকালে উদ্ধার হয়। এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় জাঙ্গীপাড়া থানার শ্রীহট্ট এলাকায়। শনিবার সকালে একটি জলাশয়ে দেহটি ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবার এবং এলাকাবাসীর। 
ওই ঝিলের পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায় একজোড়া জুতো। জুতো দেখে পরিবারের সন্দেহ, খুন করা হয়েছে নাবালিকাকে। ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে সঠিক তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। শুধু তাই নয়, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা অবনতির মোকাবিলায় পুলিশের উদাসীন ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এদিন মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যেতে বাধাও দেন তাঁরা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দশমীর রাতে ভাইবোনেদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন মণ্ডপগুলি ঘুরে দেখতে বের হয় ওই নাবালিকা। এরপর ভাইবোন বাড়ি ফিরলেও ওই নাবালিকা আর বাড়ি ফেরেনি। হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় সে। ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা থানায় গেলে পুলিশ কোনোরকম সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ। পরিবারের সদস্যরা বলেন, জাঙ্গীপাড়া থানার ডিউটি অফিসার দায় দায়িত্ব এড়িয়ে পরিবারের লোকজনকেই ভালো করে খোঁজখবর নেওয়ার পরামর্শ দেন।
কিন্তু নিখোঁজ কিশোরীর কোনোরকম খোঁজ না পেয়ে পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালে আবার থানায় যান পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীরা। এবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিখোঁজ কিশোরীর বাবা। কিন্তু ওই দিন তাঁকে কোনও ডায়েরি নম্বর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তিনি এও অভিযোগ করেন, ওই লিখিত অভিযোগের দরখাস্তে তারিখ উল্লেখ করা হয়নি থানার পক্ষ থেকে। এভাবে প্রতিদিন নিয়ম করে থানার সাথে যোগাযোগ রেখে চলেন কিশোরীর বাবা। কিন্তু প্রতিবারই শূন্য হাতে ফিরেছেন, কোনও আশ্বাস তাঁদের মেলেনি পুলিশের পক্ষ থেকে। 
অবশেষে নিখোঁজ থাকার তিনদিন পর শনিবার সকালে বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে জাঙ্গীপাড়া থানা এলাকার একটি ঝিলে নাবালিকার মৃতদেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। পরিবারের লোকজন এসে জামাকাপড় দেখে দেহ শনাক্ত করেন কিশোরীকে। এরপর ঘটনাস্থলে আসে জাঙ্গীপাড়া থানার পুলিশ। তবে সে সময়ে দেহ উদ্ধার করতে পুলিশকে বাধা দেন স্থানীয় মানুষ ও পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, যতরকমভাবে সম্ভব সমস্ত দিক দিয়ে তদন্ত করতে হবে এই ঘটনার। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
ঘটনা প্রসঙ্গে হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার আমানদীপ বলেন, একটি নাবালিকা নিখোঁজ ছিল। তার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তারপর থেকেই পুলিশি তল্লাশি চলছিল। শনিবার ওই এলাকার একটি জলাশয়ে মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়। পুলিশ ওখানে রয়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথাবার্তা চলছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পরই বোঝা যাবে এই মৃত্যুর কারণ।
গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনার পরে শেষপর্যন্ত দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। হুগলি গ্রামীণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাল্টু হালদার জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের সাথে পুলিশের দুর্ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবটা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
সিপিআই(এম) জাঙ্গীপাড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত সরকার বলেন, সরকার আজ বিসর্জনের কার্নিভালে ব্যস্ত। এদিকে ফুটফুটে এক নিখোঁজ কিশোরীর তদন্তে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রাণ চলে গেল। আবারও প্রমাণ হলো, এই বাংলায় মহিলারা নিরাপদ নয়। পার্টির পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির জন্য দাবি জানানো হয় এদিন।

Comments :0

Login to leave a comment