উৎসবে অনুভবে
মুক্তধারা
গল্প
হৃদয়ের পুজো
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
২ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩
---------------------
প্রায় দেড় বছর পুজোতে বাড়ি আসে নি হৃদয়। যেদিন নুরপুর থেকে বেরিয়ে যাবার কথা সেদিন খুব কেঁদেছিল সরমা। স্বামীকে যতদূর দেখা গিয়েছিল ততদূর তাকিয়েছিল সে। যাবার সময় হৃদয় কথা দিয়েছিল পুজোয় আসবেই। কিন্তু আসে নি। আসতে পারে নি।ভীষণ কষ্ট হয়েছিল হৃদয়ের। সরমা তো কেঁদে ভাসিয়েছিল। তারপর আরও একবছর কেটে গেল। এবছর পুজোতেও আসতে পারলো না। কাজ থেকে ছুটি পায় নি,টাকাও পায় নি।তাই আসা হল না। হৃদয় গ্ৰাম ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল ভালো করে বাঁচার আশা নিয়ে।গ্ৰামে কাজ পায় নি সে। শহর ঘুরে ঘুরে কম পয়সার কাজে পেট চলে না। নিজের ব্যবসা শুরু করার সংস্থান নেই।বুড়ো বাবা মা,বউ বাচ্চার ভার বইবে। কি করে সে? তাই বাধ্য হয়ে বাইরের রাজ্যে চলে যাওয়া। কিন্তু সেখানে স্বস্তি কই? ছুটি নেই। উৎসবের সময় বাড়তি টাকা নেই।এদিকে ওদিক ওদিক হলেই কাজ চলে যাওয়ার ভয়। চাকরি না থাকার ভয়টা মাঝে মাঝেই পেয়ে বসে হৃদয়কে। গেল বর্ষায় মায়ের অসুখেও বাড়ি আসতে পারে নি,বড়ো আক্ষেপ হয় মনে। ভেবেছিল পুজোয় ফিরবে। কিন্তু এবছরও আসা হল না।মনটা হু হু করে।
পুজো শেষ হল। হৃদয় এল না।ওর বাপ-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে সরমা। তাকে দেখে শ্বাশুড়িও চোখ মোছে। শ্বশুর মশাই এগিয়ে আসেন। বউমার সামনে দাঁড়িয়ে সান্ত্বনা দেয়, বলে -'বউমা হৃদয়ের পরিচয় পালটে গেছে, ওদের বলে পরিযায়ী।আজ এখানে তো কাল ওখানে ওদের কাজ খুঁজে নিয়ে বাঁচতে হবে। দেশে কাজের অকাল,ওকে যদি দেশে রাখতে চাও, পথে নামো। মেয়েদের নামতে হবে। দুগ্গা ঠাকুরের মতো।'
সরমা তাকিয়ে থাকে শ্বশুর মশাইয়ের দিকে।
Comments :0