UTSAVE ANUVABE / STORY / SOURAV DUTTA / CHAKHUDAN / MUKTADHARA / 2 OCTOBER 2025 / 3rd YEAR

উৎসবে অনুভবে / গল্প / সৌরভ দত্ত / চক্ষুদান / মুক্তধারা / ২ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

UTSAVE ANUVABE  STORY  SOURAV DUTTA  CHAKHUDAN  MUKTADHARA  2 OCTOBER 2025  3rd YEAR

উৎসবে অনুভবে 

মুক্তধারা

গল্প

চক্ষুদান

সৌরভ দত্ত

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

ধ্যাত্তেরিকা! যত্তসব আদিখ্যেতা! শরতের হিমেল হাওয়ার ওঠানামা। নগেনের পিঠে ঠোঁট রাখছে কুয়াশা। কখনো শেষ বিকেলের চমকপ্রদ্ আলো।সময়ের তক্ষণযন্ত্রে নগেন ভাবছে এ পাড়ার ঠাকুর পুজোটা আর এ বছর হয়ে উঠল না।কি! বলিস গজানন? পৈঠেতে বসে থাকতে থাকতে হালকা বিড়ি ফুঁকে গজানন বলে তা যা বলেছিস। মায়ের ট্রাঙ্কে থাকা অ্যালবাম থেকে ১৯৭৮ এর বন্যার বছরের একটা ঝ্যাপঝ্যাপে ছবি বের করে নগেন। যাদের এখন ষাট ছুঁই ছুঁই তখন প্রত্যেকেই অনেক কম বয়সী।তবু দুর্গাপুজো বলে কথা বন্যার বছরেও পুজো বন্ধ হয়নি। মার্টিন ট্রেনে করে পলিথিনে ঢেকে ঠাকুর এসেছিল।একচালের ডাকের সাজের প্রতিমা।পুজোটা আড়াআড়ি দুটো ভাগ হয়ে গেছে।এ পুজো অনেকটা ছোটদা-মেজদার পুজো।হ্যাজাকের আলোয় সেবার পুজো হয়েছিল নিলয়পুরে মাঠভরা  উবুচুবু জল।সালতি করে এক হাঁটু জল ঠেলে পুজো করতে আসতেন গোপাল পাঠক‌।৭৮ এর বন্যা আর এ বছরের ক্লাউড ব্লাস্ট গ্রাম-শহরে প্রভাব ফেলেছে খুব।খড় ভিজে ছাতু বেরিয়েছে।কুঁড়োর আকাল।নগেন এর মধ্যে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ঘটনা রেখাপাত করে। কিছু চরিত্র নগেন হয়ে ওঠে জোয়ার ভাটার মত বয়স বাড়ে কমে।অজিত মিস্ত্রীর শোলার মুকুট, ঠাকুরের ছাঁচ বিশ্বাস বাড়ির কুলুঙ্গিতে।অদ্ভুত গন্ধ পুরনো দিনের সাজের। সংগোপনে লুকিয়ে রাখা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভাইবোন দুর্গা মহিষাসুর বধ খেলে। সিংহের কেশর, বাঘছাল বালিশের নিচে নিয়ে শোয় নগেন।গজানন বলে কবে দালানে কাঠামোয় খড় বাঁধা হবে।বিশ্বাস গিন্নি নিরুত্তাপ। কয়েকটা প্রজাপতি বাগানে পাক খায়।
নগেন সেদিন বিজয় হয়ে উঠল চোখ আঁকল ঠাকুরের।অজিত মিস্ত্রীর হাত ধরে শিখেছিল।ছোট্ট ঠাকুর পাড়ার রাস্তায় পুজো হবে। শিউলি গাছটায় ফুল আসত এবছর পাশের বাড়ির লোকজন কোন্দল করে কেটে দিয়েছে। শিউলি একটা জীবন্ত চরিত্র হয়ে ওঠে। হাতে হাত রাখে।শিউলিকে কে না ভালোবাসে। যতীনদা,নগেন সকলেই। বিশ্বাস বাড়ির উপর শারদীয় জ্যোৎস্না এসে পড়েছে।ভালোবাসার উৎসব । অনুপ্রেরণার উৎসব।এক লাখ দশ একটা সংখ্যা ফুটে হয়ে নগেনের চোখে।হীরুদাদের কেলাব চেক পাবে। তাই নিয়ে কত হইচই।আগে তর্পণ সেরে সবাই মিলে বনপরিষ্কার হত। এখন বনছাঁটার মেশিন এসে গেছে। আমাদের পাড়া আমাদের পঞ্চায়েত চলছে।পঞ্চায়েতে বিশ্বকর্মা পুজো হল ‌ঘটা করে। বিরিয়ানির প্যাকেট পেল ভাঁড়ুদা।পুজো এসে গেল চারিদিকে শুধু বিজ্ঞাপনের জঙ্গল ।বড়ো বড়ো হোডিং।অনুষ্ঠান সেরে ফিরছিল নগেন, রাহুল আর কৃষানু।এসব দেখতে দেখতে তারা ক্লান্ত।ভাবছে পরিবর্তন কি হবে না এই অবক্ষয়িত সময়ের! নগেন বারবার বদলে যাচ্ছে এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে।মা আগেই মারা গিয়েছিল,বাবাও পুজোর আগে মারা গেছে ।নগেন চুপ করে চোখ আঁকছে–তার মায়ের চোখ ,অভয়ার চোখ, অগণিত চাকরিহারার চোখ, তামান্নার চোখ।কোনটাই তুলিতে ঠিকঠাক ফুটিয়ে তুলতে পারছে না সে। নগেন চরিত্রটা আসলে জীবিত না মৃত?সেদিন নিজের চোখটা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দান করে দিয়েছে সে। সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে…পাড়ার মোড়ে পুজো পুজো রব। পাড়ার পাগল জি.এস.টির গায়ে নতুন জামা চাপিয়েছে কেউ।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গজানন বলে উঠলো–এবার পুজো সর্বহারার শ্লোক।অ্যালবামের পুরনো ছবিতে হাত বোলাতে থাকে নগেন।৭৮ এর বন্যায় ফিরে যায় স্মৃতি পাক খায় মাথায়।ঢাক-ঢোল বাজছে ।দেবীর বোধন হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment