Uttarakhand's Joshimath

সতর্ক করা হলেও টনক নড়েনি সরকারের

জাতীয়

Uttarakhands Joshimath

 এ তো আজকের ঘটনা নয়, এক বছর আগেই ফাটলের কথা সরকারের নজরে আনা হয়েছিল। তখনই বাড়িতে বাড়িতে ফাটল শুরু হয়েছে। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ ২০২১ সালের নভেম্বরে তহসিলে অফিসে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন। সতর্ক করা হয়েছিল আগেই, টনক নড়েনি সরকারের। আর এখন পরিস্থিতি যখন আরও ভয়াবহ আকার নিল তখন যোশীমঠে তড়িঘড়ি করে আসতে হলো মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকে! মুখ্যমন্ত্রীকে শেষে কথা বলতে হলো ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির লোকজন, হোটেলের মালিক কিংবা মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
সমুদ্রস্পৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ফুট উচ্তায় অবস্থিত উত্তরাখণ্ডের চামৌলি জেলার যোশীমঠ পুরোদস্তুর পর্যটনকেন্দ্র। ভৌগোলিকভাবেই ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চল। ধসের ঘটনাও ঘটে অহরহ। বদ্রীনাথ, হেমকুণ্ড সাহিব, আউলির প্রবেশদ্বার যোশীমঠে দীর্ঘ সময় ধরে নির্বিচারে চলছে নির্মাণের কাজ। যত্রতত্র হোটেল, রেস্তোরাঁই শুধু নয়, বহুতল বাড়ি নির্মাণও চলছে অবাধে। ধসপ্রবণ এলাকা বলে এখানকার মাটির ধারণ ক্ষমতাই কম। আর এই গোদের বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে চার ধাম যুক্ত করার জন্য জাতীয় সড়ক চওড়া করা এবং অবশ্যই এনটিপিসি’র তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। পাহাড় কেটে চওড়া করা হয়েছে সড়কপথ। আবার একই সঙ্গে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সুড়ঙ্গ নির্মাণে চলে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণ। ভূতাত্ত্বিক নই, তবে মনে হয় আলগা হয়ে যাওয়া মাটির স্তরের ওপর বসবাস করছেন যোশীমঠবাসী।


ঠেলায় পড়ে মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবারই অবিলম্বে ৬০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। অবশ্য আতঙ্কে ইতিমধ্যে বহু মানুষ ঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ফাঁকা হয়ে গিয়েছে হোটেল। ভেঙেছে মন্দিরও। মুখ্যমন্ত্রী শনিবার প্রথমে আকাশপথে পরে মাটিতে অবতরণ করে কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে যান। এরপর তিনি বৃহস্পতিবার থেকে যোশীমঠে থাকা সরকারি প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের কাছ থেকে বিশদে জানতে চান ফাটলের কারণ। ক্ষতিগ্রস্তদের আপাতত সরকারি আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে এদিন আশ্বাস দিয়েছেন। দাবি করেছেন, ভবিষ্যতে সরকার স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য। পিপালকোটি এবং গাউচর এলাকা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে মনে করছে সরকার। ওখানেই পুনর্বাসনস্থল হিসাবে চিহ্নিত করেছে সরকার। তিনি বলে গেলেন, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং পর্যটনের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান যোশীমঠ। ফলে যোশীমঠকে সর্বাধিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাঁচানোর উদ্যোগ নেবে তাঁর সরকার।


মূলত শহরের মারওয়াড়ি চক এলাকায় এখন বড় ধরনের ফাটল লক্ষ্য করা গিয়েছে। অন্ততপক্ষে ৪০ পরিবার ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৫৬১টি বাড়ি, হোটেল, মন্দিরে ফাটল ধরেছে। তলার মাটি সরে গিয়েছে। হেলে পড়েছে অনেক বাড়ি। বিশাল ফাটল লক্ষ্য করা গিয়েছে জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষজ্ঞরা স্পষ্টই, পরিবেশ-প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করে নির্বিচার পরিকাঠামো গড়ে তোলাকেই দায়ী করছেন। 

 

চার ধামের জন্য হেলাঙ এবং মারওয়াড়ির মধ্যে জাতীয় সড়ক চওড়া করাকেই শূলে চড়াচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জনরোষের চাপে আপাতত সেই প্রকল্প বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে সরকার। ‘পাহাড় কেটে রাস্তা বানালে প্রকৃতি কি ছেড়ে দেবে’, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি একদল বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা করে যোশীমঠবাসীর আতঙ্কের সঙ্গে সহমত পোষণ করে জানিয়েছেন যে, শহর সত্যি সত্যি বসে যাচ্ছে।


বৃহস্পতিবার মোমবাতি মিছিল করে সরকারি গাফিলতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা স্লোগান দিয়েছেন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে। শুক্রবারও তাঁরা তহসিল অফিসে ধরনায় বসেন ফাটলের প্রতিবাদে। এই প্রতিবাদ চলছে তো বছর খানেক ধরে। যোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতির আহ্বায়ক অতুল সতীর অভিযোগ, ‘‘সরকার যদি আগেই নজর দিতেন তাহলে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। সরকার বিষয়টি জানতো না এমন নয়। তাহলে নজর দিল না কেন? জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, জাতীয় সড়ক চওড়ার কাজ বন্ধ করতে পারতো না?’’
ফাটল এখন শুধু যোশীমঠেই নয়, দেখা দিয়েছে কর্ণপ্রয়াগেও। ৫০টিরও বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে ওখানে।

Comments :0

Login to leave a comment