স্বামীর গ্রুপ ডি চাকরি বাতিল হওয়ার পর থেকেই অশান্তি চলছিল, রবিবার সকালে গলায় দরি দিয়ে আত্মঘাতী হল স্ত্রী! মৃতের নাম মৌমিতা ঘোষ(৩২)। ঘটনা হগলির বলাগড়ের। বলাগড়ের সীজা কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরনই গ্রামের বাসিন্দা প্রতাপ ঘোষ। ২০১৮ সালে গ্রুপ ডি পদে চাকরি পান। ডুমুরদহ ধ্রুবানন্দ হাইস্কুলে চাকরি করছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯১১ জন গ্রুপ ডির চাকরি বাতিল হয়। সেই তালিকায় ১২৭ নম্বর সিরিয়ালে নাম রয়েছে প্রতাপ ঘোষের। জানা গেছে মৌমিতা ঘোষ নিজে ভান্ডার টিকুরির একটি বেসরকারি কলেজে ডি এল এড পরছিলেন। প্রাথমিক স্কুলের চাকরির জন্য।
সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দের দাবি এই ঘটনার জন্য দায়ী তৃণমূল সরকার। এই সরকার চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সেই সঙ্গে যারা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিল সেই মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নিয়োগ দুর্নীতির গোটা চক্রে আপাদমস্তক আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে শাসক তৃণমূল। মন্ত্রী থেকে এজেন্ট- গোটা নেটওয়ার্কে এখনও পর্যন্ত সিবিআই ও ইডি’র হাতে শিক্ষক নিয়োগকাণ্ডে যে কজন গ্রেপ্তার হয়েছে সকলেই শাসক তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষা দপ্তর থেকে পুলিশ প্রশাসন, বিধায়ক-মন্ত্রী যোগ ছাড়া গত দশ বছর ধরে এই চক্র এত নিশ্চিতে এই কারবার চালিয়ে যেতে পারত না। তৃণমূলের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই জড়িত এই দুর্নীতিতে। এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ।
মৃতের ছেলে প্রণব জানায়, চাকরির জন্য সাত লক্ষ টাকা দিয়েছিল বাবা, তার দাবি মা আশি হাজার টাকা দিয়েছিলেন এক দালালকে। চাকরি বাতিল হতেই মানসিক অবসাদ এবং সাংসারিক অশান্তি শুরু হয় বিভিন্ন কারণে। ধারদেনাও হতে থাকে সেই কথা জানিয়েছেন প্রতিবেশীরাও।
মৃতের কাকা সলিল ঘোষ বলেন, আমাদের বাড়ির মেয়েকে খুন করেছে জামাই এর মা বাবা আর ভাই মিলে। আমরা ২০১৭ সালে ১০ লক্ষ টাকা যোগার করে দিয়েছি জামাইয়ের চাকরির জন্য। তিনি বলেন, টাকা ঘুষ দিয়েই চাকরি করছে প্রতাপ। এখন ওর চাকরি টাও নেই। আমাদের দেনা প্রচুর। তাঁর অভিযোগ টাকা শোধ করার কথা মেয়ে জামাইকে বললেই তার উপর অত্যাচার হতো। আজ তো সব শেষ হয়েই গেলো। তিনি বলেন, সকালে স্বামী মাঠে গেলে ঘরে গলায় দরি দিয়ে আত্মহত্যা করেন মৌমিতা। বলাগড় থানার পুলিশ এসে ঘড়ের দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করে।
বলাগড়ের সিপিআই(এম) নেতৃত্ব অতনু ঘোষ জানান, এমন ঘটনা কখনও কাম্য নয়। এই মৃত্যুর জন্য দায়ী তৃণমূল সরকার। কারণ তারা শুধু চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেনি যারা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিল সেই মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তৃণমূলের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই জড়িত এই দুর্নীতিতে। তিনি দাবি করেন, এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বড় মাথাদের পাশাপাশি এলাকার ছোট দাদাল যারা টাকা তুলে নেতাদের দিয়েছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা উচিত।
সিজা কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান অরিজিৎ দাস বলেন, বলাগরে কয়েকটা বাড়িতে ইডি সিবিআই রেড করেছে তাই চাকরি দুর্নীতি নিয়ে কথা উঠবে। বিরোধীরা তাদের অভিযোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ বলাগরে চাকরি দুর্নীতি নিয়ে যেটা হয়েছে অস্বীকার করা যাবে না।
Comments :0