Yogi Adityanath

আতিক হত্যায় আঙুল যোগী সরকারের দিকেই

জাতীয়

উত্তর নেই 
****** 
এত রাতে আতিকদের ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ কেন?
আততায়ীরা সে খবর জানল কী করে?
সাংবাদিকরাই বা খবর পেলেন কীভাবে ?
আততায়ীরা কি পুলিশের গাড়িতেই এসেছিল ? 
৭ লক্ষ টাকা দামের বিদেশি পিস্তল পেল কী করে? 
পুলিশ স্রেফ দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে রইল কেন? 
***************
রবিবার রাতে এলাহাবাদের কসারি-মসারি কবরস্তানে গ্যাংস্টার আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরফকে দাফন করা হয়েছে। শনিবার ফিল্মি কায়দায় বিপুল পুলিশি ঘেরাটোপের মধ্যে টিভি চ্যানেলের সামনে তাদের হত্যার ‘লাইভ’ দেখেছে জনতা। দাফন করার সময়ে আতিকের দুই নাবালক ছেলেকে কবরস্তানে নিয়ে আসা হয়। কয়েকজন নিকটাত্মীয় ছিলেন। এই হত্যাকে ঘিরে যে অসংখ্য প্রশ্ন উঠেছে তা যদিও দাফন করা যাচ্ছে না। উত্তর প্রদেশ বা অন্যত্রও এমন কেউই নেই, যে বিশ্বাস করে তিনজন খুচরো অপরাধী এসে এই রোমাঞ্চকর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সাধারণের মধ্যে এই আলোচনাই দিনভর চলছে যে, পুরোটাই পুলিশ প্রশাসনই পরিকল্পনা করে করেছে। নিজের নিজের অবস্থান থেকে কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু সকলেই মানছে এটা যোগী সরকারের পরিকল্পনারই অংশ। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই হত্যাকারীরা গুলি চালানোর পরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়েছে। 
উমেশ পাল হত্যাকাণ্ড মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে আতিক এবং আশরফকে ১৩ এপ্রিল এলাহাবাদের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ হেপাজতে পাঠায় ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। সাধারণভাবে পুলিশ তাদের হেপাজতে থাকা ব্যক্তিকে প্রতিবার আদালতে পেশ করার আগে মেডিক্যাল টেস্ট করায়। তাহলে হঠাৎ আতিক এবং আশরফকে শনিবার অত রাতে কেন শারীরিক পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো, সেই প্রশ্ন উঠছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক আধিকারিক স্পষ্টতই জানিয়েছেন, যদি শারীরিক পরীক্ষা করতেও হয় তাহলে সেই ‘রুটিন চেক আপ’ কেন রাত সাড়ে দশটার সময়ে? এটা একেবারেই অস্বাভাবিক। কেন আতিক এবং আশরফকে এইরকম অস্বাভাবিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ‘রুটিন চেকআপের’ জন্য তার উত্তর এখনও দেয়নি উত্তর প্রদেশ পুলিশ। 
একমাত্র হঠাৎ কোনও শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে হেপাজতে থাকা ব্যক্তিকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে আনা যেতে পারে। শরীর খারাপ লাগলে এটা বলতে পারে হেপাজতে থাকা ব্যক্তি। আতিক বা আশরফ কি তেমন কোনও কথা জানিয়েছিল পুলিশকে? জানালেও দুই জনকে কেন আনা হয়েছিল? দুই জনেই কি একসঙ্গে অসুস্থ বোধ করছিল? যদি তারা অসুস্থতার কথা বলে থাকে তাহলে তো তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আনার কথা। পুলিশের জিপে বসিয়ে হাসপাতালের বাইরে নামিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তো আনার কথা নয়। যদিও আতিকের আইনজীবী বিজয় মিশ্র জানিয়েছেন, তাদের ‘রুটিন চেক আপ’-এর জন্য হাসপাতালে নিয়েছিল পুলিশ। তারা কোনও আবেদন করেনি। 
এছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে, কেন দুই জনকে একটাই হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়েছিল? হাতকড়া পরানো প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য অনেকেই উল্লেখ করছেন। কিন্তু তার বাইরেও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে কেন একটা হাতকড়াই দু’জনের হাতে পরিয়ে রাখা হয়েছিল? দেখা গেল, আতিককে গুলি করার পরে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার পরেও আশরফ কিছুই করতে পারেনি। কারণ, আতিকের সঙ্গেই সেও বাঁধা ছিল। মুহূর্তের মধ্যেই সে নিহত হয়েছে। 
হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের বিবৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে তফাত আছে। পুলিশ জানিয়েছিল বাইকে করে হত্যাকারীরা সাংবাদিক সেজে এসেছিল। কিন্তু স্থানীয়দের বিবরণে জানা যাচ্ছে, পুলিশের গাড়িতে করেই এসেছিল আততায়ীরাও। এমনিতেই প্রশ্ন উঠেছে, রাত ১০টার পরে সাধারণত রুটিন চেক আপে আনা হয় না হেপাজতে থাকা ব্যক্তিদের। ফলে তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় জরুরি ভিত্তিতে তাদের আনা হয়েছিল, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায় সেই খবর সংবাদ মাধ্যমের কাছে গেল কীভাবে? তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হত্যাকারীরা কীভাবে জানল সেই সময়ে হাসপাতালে আনা হবে আতিক-আশরফকে? এই সব কোনো প্রশ্নেরই জবাব নেই। যেমন জবাব নেই, আগে নানা অপরাধে যুক্ত থাকা তিন যুবক যারা একে-অপরকে চেনে না, তাদের কোনও গ্যাংও নেই। হঠাৎ তারা এক জোট হয়ে এতবড় পরিকল্পনা করে দুর্ধর্ষ গ্যাংস্টারকে হত্যা করে ফেলল শুধু নাম কামানোর জন্য! একথা কোনোভাবে বিশ্বাসযোগ্য? পাশাপাশি যে বন্দুক দিয়ে তারা হত্যা করেছে সেটা তুরস্কে তৈরি জিগানা পিস্তল। এই পিস্তল ভারতে নিষিদ্ধ। এক-একটি পিস্তলের দাম প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। সীমান্ত দিয়ে বেআইনিভাবে এই পিস্তল ভারতে আনা হয়। এই পিস্তলের বিশেষত্ব হলো ১৫টি গুলি একটানা চালিয়ে দেওয়া যায়। আতিক হত্যায় সেই কারণেই টানা গুলি চালিয়েছে আততায়ীরা। সরকারিভাবে এই পিস্তল মালেয়েশিয়ার সেনা, আজারবাইজানের সশস্ত্র বল, ফিলিপাইন্সের রাষ্ট্রীয় পুলিশ এবং আমেরিকার ঊপকূল রক্ষী বাহিনী ব্যবহার করে। সেই পিস্তল কীভাবে এদের হাতে এল, বা ৭লক্ষ টাকাই বা তারা কোথায় পেল? 
আতিক এবং আশরফ দুই জনেই বলেছিল, তাদের হত্যা করার জন্যেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এলাহাবাদে। এই নিয়ে বিভিন্ন আদালতের শরণাপন্নও হয়েছিল আতিক। ২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে আতিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, যেহেতু বিচারবিভাগীয় হেপাজতে আছে আতিক, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব উত্তর প্রদেশ প্রশাসনের। এরপরে দুই দিন আগেই আতিকের ছেলে আসাদকে এনকাউন্টারে হত্যা করা হয়। তার নিরাপত্তা তো আরও জোরদার হওয়ার কথা। তার জায়গায় অবাধে পুলিশের ঘেরাটোপে ঢুকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হল আতিককে। তারপর আশরফকেও। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। অপরাধীরাও হত্যার পরে পালানোর চেষ্টা করল না। মাটিতে আতিক আশরফ পড়ে যাওয়ার পরেও লাগাতার গুলি চালিয়ে গেছে হামলাকারীরা। তখনও পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়নি বা আটকানোর চেষ্টা করেনি। তাহলেও হয়তো হাসপাতালে নিয়ে দুই জনকে বাঁচানো যেত। ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে আতিক-আশরফের হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পরে পুলিশ হত্যাকারীদের জাপটে ধরে রেখেছে আর তারাও ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ডের পরে এদিন আতততায়ীদের পুলিশ হেপাজত চাওয়া হয়নি, অস্বাভাবিকভাবে প্রথম দিনই তাদের জেল হেপাজতে পাঠানো হয়েছে। 
উত্তর প্রদেশ সরকার ঘটনার তদন্তে ৩ সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেছে এই হত্যার তদন্তের জন্য। এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরবিন্দ কুমার ত্রিপাঠিকে এর প্রধান করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ব্রিজেশ কুমার সোনি এবং প্রাক্তন ডিজিপি সুবেশ কুমার সিংকে নেওয়া হয়েছে কমিশনে। দুই মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।ঠঅ

Comments :0

Login to leave a comment