documentaries that faced govt wrath

তথ্যচিত্রে রাজ রোষ নতুন কিছু নয়

জাতীয়

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার উপর ভিত্তি করে একটি বিবিসি ডকুমেন্টারি দেশজুড়ে রাজনৈতিক ঝড় তুলেছে। কিন্তু, ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’, যার একটি অংশ সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা তুলে ধরেছে যখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গুজরাটে ছড়িয়ে পড়েছিল, এটি ভারতে প্রথম বিতর্কিত তথ্যচিত্র নয়।
এখানে আরও কিছু ডকুমেন্টারির দিকে নজর দেওয় হল যেগুলিকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দেয় এবং সরকারী রোষের সম্মুখীন হয়:

‘ফাইনাল সলিউশন’

মোদি কোয়েশ্চেন ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার প্রথম তথ্যচিত্র নয় যা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কয়েক দশক আগে ‘ফাইনাল সলিউশন’ প্রকাশিত হয়। রাকেশ শর্মা দ্বারা পরিচালিত, ফাইনাল সলিউশন তুলে ধরে যে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক হিংসা অত্যন্ত সুচতুরভাবে সমন্বিত এবং পরিকল্পিত একটি ঘটনা। এটি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উভয় পক্ষের - বেঁচে থাকা এবং সাক্ষীদের সাথে সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।
Central Board of Film Certification ডকুমেন্টারিটিকে ‘‘উস্কানিমূলক’’ হওয়ার জন্য এবং সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং উগ্রবাদকে প্ররোচনা দিতে পারে এমন আশঙ্কার জন্য নিষিদ্ধ করেছে।
শর্মা বলেছিলেন যে তৎকালীন সেন্সর বোর্ডের চেয়ারপার্সন অনুপম খের, বিজেপি সমর্থক হিসাবে, এনডিএ শাসনকালে ছাড়পত্র দেননি। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ কেন্দ্রে কার্যভার গ্রহণের পর অক্টোবর ২০০৪ সালে শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
ডকুমেন্টারিটি স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড (নন-ফিচার ফিল্ম) বিভাগে জাতীয় পুরস্কার জিতেছে। এটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও অনেক সম্মান অর্জন করেছে।


‘ইন্ডিয়াস ডটার’

বিবিসি’র আরেকটি ডকুমেন্টারি ২০১৫ সালে বিতর্কের মুখে পড়েছিল। লেসলি উদউইনের ‘ইন্ডিয়া'স ডটার’, বিবিসি’র স্টোরিভিল সিরিজের অংশ, দিল্লিতে কুখ্যাত নির্ভয়া কান্ডর উপর ভিত্তি করে।
ধর্ষকদের একজন মুকেশের সাক্ষাৎকারের অংশসহ চলচ্চিত্রের কিছু অংশ সম্প্রচারের পর, পুলিশ তথ্যচিত্রটির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে। বিবিসি তা মেনে নিয়ে এবং ভারতে এটি স্ক্রিনিং করেনি। যখন এটি বিদেশে সম্প্রচারিত হয় এবং YouTube-এর মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করে, তখন সরকার ইউটিউবকে ভারতে তথ্যচিত্রটি ব্লক করার নির্দেশ দেয়।

‘রাম কে নাম’

আনন্দ পটবর্ধনের ‘রাম কে নাম’ সবচেয়ে বিতর্কিত তথ্যচিত্রের মধ্যে গণ্য করা হয়। ১৯৯২ সালে চিত্রায়িত, তথ্যচিত্রটি অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) ভূমিকার তদন্ত করে।

চলচ্চিত্রটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল, সেরা অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিল। সমস্ত ইতিবাচক পর্যালোচনা সত্ত্বেও, সরকার ডকুমেন্টারিটিকে ‘‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’’ বলে বিবেচিত করে দূরদর্শনে প্রচার করা নিষিদ্ধ করেছিল।


‘ইনশাআল্লাহ, ফুটবল’

একজন তরুণ কাশ্মীরি ফুটবলারের উপর এই ডকুমেন্টারি যিনি ব্রাজিলে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু তার বাবা একজন প্রাক্তন উগ্রপন্থী হওয়ায় তাকে পাসপোর্ট  থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। যদিও অশ্বিন কুমারের ২০১০ সালের ডকুমেন্টারিটি সেন্সর বোর্ড থেকে ‘এ’ শংসাপত্র পেয়েছিল, তদসত্বেও সংস্থাটি নির্ধারিত মুক্তির ঠিক আগেই স্ক্রীনিং স্থগিত করেছিল। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কারণ ছবিটি সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে উপত্যকার সাধারণ জনজীবন নিয়েও কাজ করেছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ‘ইনশাআল্লাহ, ফুটবল’ নির্বাচিত কিছু দর্শকদের দেখার জন্য   অনলাইনে একটি পাসওয়ার্ড-সুরক্ষিত সংস্করণ প্রকাশ করেন। এরপরে সেন্সর বোর্ডকে এড়াবার জন্য তিনি আরেকটি ছবি ‘ইনশাল্লাহ, কাশ্মীর’ তৈরি করেন  এবং অনলাইনে প্রকাশ করেন।

‘কলকাতা, ফ্যান্টম ইন্ডিয়া’

ভারত সরকারের সঙ্গে বিবিসি-র রেষারেষির ইতিহাস রয়েছে। ‘দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ এবং ‘ইন্ডিয়াস ডটার’এর আগে, ব্রিটিশ এই সম্প্রচারক ১৯৭০-এর দশকে ভারত সরকারের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল। ব্রিটিশ টেলিভিশনে লুই ম্যালের দুটি তথ্যচিত্র – ক্যালকাটা, ফ্যান্টম ইন্ডিয়া - সম্প্রচার ভারতীয় প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং ভারত সরকারের  তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। উভয় তথ্যচিত্রেই ভারতের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখানো হয়েছে, যেটিকে ভারত সরকার পক্ষপাতমূলক বলে মনে করেছে যা দেশকে নেতিবাচক আলোকে দেখায়। ফলস্বরূপ, বিবিসি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ভারত থেকে বহিষ্কৃত হয়।

Comments :0

Login to leave a comment