MGNREGA

রেগার কাজ চেয়ে ২৫’এ কলকাতায় খেতমজুররা

রাজ্য কলকাতা

CPIM BJP RSS TMC WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS 2023 PANCHAYAT ELECTION MGNREGA

কাজের দাবির সঙ্গে বকেয়া মজুরি চেয়ে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় সমাবেশ করতে আসছেন খেতমজুররা। গোটা রাজ্য থেকেই ১০০ দিনের কাজের দাবি নিয়ে কলকাতায় খেতমজুরদের বৃহত্তম সমাবেশের আহ্বান করেছে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। 

পঞ্চায়েত ভোটের আগে রেগার বকেয়া মজুরি চেয়ে ব্লক অফিসে রাতভর ধরনায় বসেছিলেন গ্রামীণ গরিব মানুষ। ২৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় রেগার কাজের দাবিতে রাতভর ধরনায় বসার পরিকল্পনা ছিল খেতমজুরদের। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না মেলায় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খেতমজুর ইউনিয়ন। দুপুর ১টায় সমাবেশ শুরু করে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান করবে গ্রামীণ শ্রমজীবী জনতা। 

গত ২৩ আগস্ট কলকাতার মিলন মেলা প্রাঙ্গণ থেকে মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেছেন,‘‘ কেন বাইরে যাচ্ছেন? কাজ আপনার ঘরের সামনে। চলে আসুন বাংলায়।’’ কাজের আকালে এবার কলকাতায় সমাবেশ করে রেগার কাজ চাইতে আসছে খেতমজুররা। মোদী ও মমতা- দুই সরকারের মাঝখানে পড়ে কাজ হারানো গ্রামের মানুষ কলকাতায় এসে দাবি করবে, ১০০ দিন নয়, চাই ২০০ দিনের কাজ। বকেয়া মজুরির সঙ্গে বন্ধ রেগার কাজ চালু করে ৬০০ টাকা মজুরির দাবিতে আয়োজিত হবে খেতমজুর সমাবেশ। 

এরাজ্যে রেগার কাজ বন্ধ। আর গোটা দেশের জন্য রেগা চালু থাকলেও ব্যাপকহারে মোদী সরকার ছাঁটাই করেছে ১০০ দিনের বরাদ্দ। গত আর্থিক বছরে রেগার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল ৮৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরে তা কমিয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকায়। ৩৩ শতাংশ বরাদ্দ ছাঁটাই হলে গোটা দেশেই কমবে রেগার কাজ। ফলে কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারের বিরুদ্ধেই কলকাতায় আয়োজিত হবে খেতমজুর সমাবেশ। 


২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর, এরাজ্যের রেগার কাজ করে শ্রমিকরা মজুরির টাকা হাতে পেয়েছিলেন। তারপর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পড়লো, কিন্তু এরাজ্যে বন্ধ হয়ে আছে রেগার কাজ। টানা প্রায় ১৯ মাস হতে চললো এরাজ্য বন্ধ হয়ে আছে ১০০ দিনের কাজ। এমনকি কাজ করেও প্রায় ২৬০০ কোটি টাকার মজুরি বকেয়া পড়ে আছে। 

১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকার ফলে সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন এরাজ্যের গ্রামীণ খেতমজুর ও শ্রমজীবী জনতা। শনিবার কলকাতায় খেতমজুর ইঊনিয়নের রাজ্য কাউন্সিলের সভায় জেলাগুলি থেকে আসা সংগঠনের নেতৃত্বের বক্তব্যে উঠে এসেছে গ্রামীণ গরিবের কাজের আকালে দুঃসহ জীবনযন্ত্রণার কথা। সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি তুষার ঘোষ জানান, ‘‘ সভায় জঙ্গলমহল থেকে, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া মতো জেলা থেকে রিপোর্ট এসেছে মানুষের কাজ না থাকার যন্ত্রণা। এবার স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়নি। ফলে চাষের কাজ জোটেনি। সুন্দরবন এলাকা থেকেই কাজের আকালের রিপোর্ট এসেছে। কাজ না থাকায় দলে দলে পরিবার নিয়ে মানুষ চলে যাচ্ছে ভিনরাজ্যে।’’ 

ভিনরাজ্যে কাজের সন্ধানে গিয়ে গত চারমাসে এরাজ্যের প্রায় শতাধিক পরিযায়ী শ্রমিকের কফিনবন্দি লাশ ফিরেছে রাজ্যে। এদিন রাজ্য কাউন্সিল সভায় মালদহ জেলার প্রতিনিধি জানিয়েছেন,‘‘ গত দু তিন মাসে শুধু মালদহ জেলাতেই ফিরেছে ৩০ থেকে ৪০ জন পরিযায়ী শ্রমিকের কফিনবন্দি দেহ। ভিনরাজ্যে কাজের সন্ধানে জেলা থেকে যাঁরা গিয়ে কফিনবন্দি হয়ে ফিরছেন তাঁরা সকলেই খেতমজুর। গ্রামে কাজ না থাকায় খেতমজুর ভিনরাজ্যে গিয়ে অনভ্যস্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছে।’’ সম্প্রতি মিজোরামে রেলের সেতু তৈরির কাজ করতে গিয়েই ৩৫ জন মৃতের মধ্যে এরাজ্যের ১৭ জন। তাঁরা সকলেই মালদহ জেলার বাসিন্দা। রতুয়াতেই আছেন ১৬ জন। বাকি ৬ থেকে ৭ জন আছে ইংলিশবাজার এলাকার বাসিন্দা। মিজোরামের সেতু দুর্ঘটনার পর রাজ্যে ফিরে এসে মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের চায়ের দোকান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন!


২০০৫ সালে বামপন্থীদের সমর্থনে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে চালু হয়েছিল মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট। গত এক দশকে তৃণমূলের আমলে সেই রেগায় টাকা দেদার লুট হয়েছে রাজ্যে। কেন্দ্রীয় সরকার এরাজ্যে রেগার লুট সরেজমিনে দেখতে ১১২টি কেন্দ্রীয় টিম পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় টিমের রিপোর্টের ভিত্তিতেই রেগা আইনের ২৭ নং ধারা প্রয়োগ করে এরাজ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রেগার বরাদ্দ লেবার বাজেট। ফলে গত ১৯ মাস ধরে রাজ্যে কাজ নেই। 

কাজের আকালের তীব্রতা বোঝাতে বাঁকুড়া জেলার খেতমজুর ইউনিয়নের নেতা সাগর বাদ্যকর বলছিলেন,‘‘ অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে আছেন গ্রামের মানুষ। এবার বৃষ্টি হয়নি। ফলে মাঠের কাজ যৎসামান্য। মাঠে কাজ থাকলেও মুড়ি, দু-মুঠো চাল পেত খেতমজুররা। অমানুষিক কষ্টের মধ্যেই পরিবারের মুখে কাজে লাগত। এবার তার সুযোগ নেই।’’

এদিন বৈঠকে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বি ভেঙ্কট জানিয়েছেন, ২৭ নং ধারা প্রয়োগ করা হলেও কোনোভাবেই আইন মতে ২ মাসের বেশি টাকা আটকে রাখা যায় না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সেই আইনবিরুদ্ধ কাজ করছে দিল্লির সরকার। রাজ্য ও কেন্দ্রের নিজেদের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামের গরিব।’’ 

গত দেড় বছরে রেগার কাজ চেয়ে ‘৪ক’ আবেদন পূরণ করেছিলেন খেতমজুররা। সংগঠনের উদ্যোগেই কাজের দাবি জানিয়ে এই আবেদন পূরণ করার পরেও কাজ মেলেনি। রেগার আইনে আছে কাজ করার পর সপ্তাহ শেষে মজুরির টাকা জব কার্ড গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে মজুরির টাকা দিতে না পারলে ১৬ তম দিন থেকে মজুরি না মেলা পর্যন্ত ফি দিন ০.০৫ শতাংশ হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকার নীরব। 

Comments :0

Login to leave a comment