কদর্যতার প্রতিযোগিতায় নেমেছে তৃণমূল এবং বিজেপি। রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা অখিল গিরি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর চেহারা নিয়ে মন্তব্য করছেন, আর বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অপদার্থতায় মানুষের প্রকৃত দুর্দশার চিত্রকে ঢাকা দিতে দুই দলের এই নোংরা রাজনীতির তীব্র নিন্দা করেছেন বামপন্থীরা।
শুক্রবার নন্দীগ্রামের একটি সভা থেকে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি দেশের রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে অখিল গিরি বলেন, ‘‘আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু তোমার রাষ্ট্রপতি কেমন দেখতে বাবা?’’ রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে এমন মন্তব্য নিয়ে বিজেপি শনিবার পালটা প্রচারে নামে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি’র আইটি সেল প্রচার করতে থাকে, আদিবাসী ও মহিলাদের সম্মান করে না তৃণমূল।
সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘ছি ছি, রাজ্যের একজন মন্ত্রী এমন অশালীন মন্তব্য করেছেন! রাষ্ট্রপতির চেহারা আলোচনার বিষয়? রঙ রূপ নিয়ে? অশালীন। এরপরেও রাজ্যের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কোন ব্যবস্থা নিয়েছে? আসলে রূপ নিয়ে কোন প্রকল্প হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এরাজ্যে রূপশ্রী প্রকল্প নিয়ে প্রচার হয়, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে অশালীন মন্তব্য করেও মন্ত্রিসভায় টিঁকে আছেন মৎস্যমন্ত্রী।’’
তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলকে তাড়াতে হবে। কিন্তু সেটা বিজেপি’কে দিয়ে হবে না। শুভেন্দু অধিকারীর মতো তৃণমূল নেতারাই তো বিজেপি’তে। ঘর পালটা-পালটিতে মানুষের লাভ হবে না।’’
এদিকে অশালীন মন্তব্য করে সর্বত্র সমালোচিত হয়ে শনিবার সাফাই গেয়েছেন অখিল গিরি। তিনি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, উনি আমাকে কাকের মতো দেখতে, হাফ মন্ত্রী ইত্যাদি মন্তব্য করে রাগিয়ে দিয়েছেন। দেখতে খারাপ হওয়ার সঙ্গে তো মন্ত্রীপদের কোনও যোগ নেই। রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে যা বলেছিলাম তা ক্রোধের বশে বেরিয়ে এসেছে। সাংবিধানিক প্রধানকে আমি কটাক্ষ করতে পারি না।
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকেই নন্দীগ্রামকে আবার নতুন করে উত্তপ্ত করার কাজ করছে তৃণমূল ও বিজেপি। বৃহস্পতিবার শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানের নাম করে রাজনৈতিক সভা করা নিয়ে প্রথমে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। তারপরে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে গন্ডগোলের পরিবেশ তৈরি হয়। তৃণমূলের সভা শুরুর আগে কুনাল ঘোষের সামনেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গন্ডগোল শুরু হয়। দ্বন্দ্বের মূল কারণ ছিল মঞ্চে সুফিয়ানের বসা নিয়ে। একটা সময় হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি পর্যন্ত হয়।
এরপরে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও নন্দীগ্রামে সভা করেন। দু’পক্ষই সভার নামে নন্দীগ্রামের দখলদারি দেখাতে চেষ্টা করছে। উত্তেজনা তৈরি করছে নন্দীগ্রামে। বিজেপি তৃণমূলের মঞ্চ পুড়িয়ে দিয়েছে এই অভিযোগ তুলে তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ, রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা ও অখিল গিরি, শিউলি সাহা সহ তৃণমূল নেতারা নন্দীগ্রামে পথ অবরোধও করেন। সেখানেই বক্তব্য রাখার সময় দেশের রাষ্ট্রপতির রূপ নিয়ে প্রকাশ্য সভায় মন্তব্য করেন অখিল গিরি। সেই সময় মঞ্চে বসা মন্ত্রী শশী পাঁজা, শিউলি সাহাদের হাসতেও দেখা যায়। কিন্তু পরে অখিল গিরি বুঝতে পারেন তিনি বিপাকে পড়ে গিয়েছেন।
অখিল গিরির মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন সিপিআই(এম)’র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের নেতারা ক্রমাগত কুরুচিকর মন্তব্য করে চলেছেন। ওদের মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে ওদের রাজনীতিতে জাত, ধর্ম, বর্ণ এগুলিই বড় বিষয়। দেশের রাষ্ট্রপতিও ছাড় পান না ওদের আক্রমণ থেকে। এই ঘটনা সারা দেশবাসীর কাছে লজ্জার। এই মন্তব্যের জন্য শাস্তি হওয়া উচিত মন্ত্রীর।’’
এদিকে বিজেপি নেতাদের গাড়ির সামনে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করলে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘‘বিজেপি নেতাদের গাড়ির সামনে আসতে হলে এলআইসি করে এসো। বাবা-মায়ের কোল খালি করে দেবো।’’
Comments :0