ত্রিপুরার নির্বাচনের প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠল। ত্রিপুরায় নির্বাচনে প্রচার করতে এসে ১১ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে নির্বাচন দপ্তর ও রাজ্য পুলিশের বাছাই করা শীর্ষ পদাধিকারীদের সঙ্গে শাহ বৈঠক করেছেন। অফিসারদের মধ্যে রাজ্য পুলিশের বর্তমান ডিজি’ও ছিলেন। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা গৌরব গগৈ সাংবাদিক সম্মেলন করে এই তথ্য দেওয়ার পরেই তা নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অমিত শাহ নির্বাচনে কূটকৌশল অবলম্বনের জন্যই এই বৈঠক করেছেন বলে গগৈ অভিযোগ করেন।
সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে সোমবারই নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। মঙ্গলবার পার্টির ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি শাহের এই গোপন বৈঠক সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কমিশনে চিঠি দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ত্রিপুরায় হিংসামুক্ত নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তখন ভোটগ্রহণের তিন দিন আগে এই বৈঠক আরও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে এই বৈঠক হয়েছে। যেন তেন প্রকারে নির্বাচনে কূটকৌশল করার জন্য নকশা তৈরি করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চৌধুরি দাবি করেছেন, এই অভিযোগের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করতে হবে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে যদি এই অভিযোগের কোনও সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্বাচনী কাজ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
জীতেন্দ্র চৌধুরির এই চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি নিজে কমিশনকে লিখেছেন, এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ত্রিপুরার নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে প্রত্যক্ষ ভাবে চেষ্টা করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে সোমবারই কমিশনকে আমরা সতর্ক করেছিলাম। নির্বাচন কমিশন আশ্বস্ত করেছিল অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারপরেও এই ঘটনা ঘটেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কাজ নির্বাচনের আচরণবিধিকে স্পষ্টই লঙ্ঘন করেছে। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষকরা নিশ্চয়ই রিপোর্ট সংগ্রহ করবেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যাঁরা বৈঠক করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে ফের দাবি জানালেন সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি, আগরতলা এবং টাউন বড়দোয়ালি কেন্দ্রের দুই কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ রায়বর্মণ এবং আশিসকুমার সাহা এদিন দেখা করেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কিরণ গিত্যের সঙ্গে। তাঁরা সিইও’কে বলেন, সরব প্রচার শেষ হবার পর গোটা রাজ্যে ১৪৪ ধারা জারি হলেও বিজেপি’র বাইক বাহিনী অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে, হামলা চালাচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে পোলিং এজেন্টদের। কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। এ বিষয়ে অবিলম্বে কার্যকরী ব্যবস্থা নেবার দাবি করেন তাঁরা। পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা দেবার দাবিও জানান।
তাঁরা অভিযোগ করেন, হোটেল পোলো টাওয়ার থেকে প্রচুর পরিমাণ নগদ অর্থ হস্তান্তর হচ্ছে। অবিলম্বে সেখানে অভিযান চালানো হোক।
সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিশালগড়ের এসডিপিও রাহুল দাস বিজেপি কর্মীর মতো আচরণ করছে। আজও লালসিংমুড়ায় উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মার নির্দেশে রাহুল দাসের নেতৃত্বে পুলিশ উপজাতি যুবকদের মারধর ও ধরপাকড় করেছে। তাঁকে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে সরাতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ অভিযোগ করেছেন, হিংসা ও ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে রাখতে চাইছে বিজেপি। যাতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পায়। কিন্তু এভাবে জালিয়াতি করে পার পাবে না বিজেপি। এখানে বিজেপি’র হার নিশ্চিত। এখানে মজবুত সরকার, জনতার সরকার হবে। ঘটনাবিহীন শান্তিপূর্ণ ভোট করার জন্য সব ধরনের ভূমিকা পালন করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করেছে কংগ্রেস।
এদিকে, প্রচারের শেষদিনে তিপ্রামথা চেয়ারম্যান প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মণ বললেন, রাজনীতি আমাকে দিয়ে হবে না। চড়িলামে শেষ জনসভায় বিজেপি’র বিরুদ্ধে আগাগোড়া ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনি। বিজেপি’র বিরুদ্ধে ভোট দিতে বলেছেন। প্রদ্যোৎ কিশোর বলেন, রাজনীতি আমাকে দিয়ে হবে না। চুরি করতে হবে, মিথ্যা বলতে হবে। উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা আমার পরিবারেরই লোক। কিন্তু পাঁচ বছর আগে মিথ্যার কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন। ঝান্ডা নিয়ে ভারত মাতার জয় বলে ওরা নিজেদের পকেট ভরছে। তিনি আরও বলেন, আম্বানি আদানির টাকা ড্রাগের টাকা যারা পকেটে ভরছে তারাই গরিব মায়েদের মোদীর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তিপ্রামথা চেয়ারম্যানের অভিযোগ, বিজেপি’র মধ্যে ‘রাক্ষস’ রয়েছে।
Comments :0