Comrade Dilip Ganguly

কমরেড দিলীপ গাঙ্গুলিকে শেষ শ্রদ্ধা জনতার

রাজ্য জেলা

প্রয়াত হয়েছেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)’র প্রাক্তন জেলা সম্পাদক, বীরভূম জেলার বামপন্থী তথা কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রনী নেতৃত্ব কমরেড দিলীপ গাঙ্গুলি। বুধবার মধ্যরাতে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘ অসুস্থতা জনিত কারণে ৭৬ বছর বয়সে জীবনদীপ নিভেছে বীরভূম জেলার রাজনৈতিক জগতের উজ্বল ব্যক্তিত্ব দিলীপ গাঙ্গুলির। চরম প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডে পদার্পণ। কংগ্রেস মদতপুষ্ট জোতদারদের সাথে মুখোমুখি লড়াই করে গরিব ভূমিহীন কৃষকদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের সামনের সারিতে থাকা নেতৃত্বদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দিলীপ গাঙ্গুলি। বিনিময়ে শারিরীক আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছে অসংখ্যবার। মানুষের হয়ে লড়াই করতে গিয়ে জেলও হয়েছে তাঁর। আত্বগোপন করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। তবুও মানুষকে সংগঠিত করার কাজ থেকে  বিচ্যুত হন নি কোনোদিন। 
১৯৭১ সালে তিনি পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি সিপিআই(এম)’র বীরভূম জেলা কমিটির সদস্য ও ৮৮ সালে জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। বীরভূম জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হিসাবে তাঁর অবদান মনে রাখার মত। ২০০১ সালে তিনি পার্টির জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। টানা ১৩ বছর তিনি এই পদে থেকে গরিব, খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষের জন্য নিজেকে উজার করে দিয়েছিলেন। জেলার নানান উন্নয়নমূলক কাজেও তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষাবিস্তারের জন্য কলেজ প্রতিষ্টা, মহিলাদের জন্য বিদ্যালয় নির্মান থেকে শুরু করে শিশুদের বিনোদন উদ্যান, ক্রীড়াক্ষেত্রে সুইমিং পুল থেকে শুরু আরো নানা কাজ তাঁর হাত দিয়ে দিনের আলো দেখেছেন। তাঁর প্রয়ানে শোকের ছায়া রাজনৈতিক মহলে। প্রায় সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই শোকজ্ঞাপন করা হয়েছে। জেলায় কৃষক আন্দোলন করতে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বইও লিখেছেন তিনি। তাঁর সাথে রাজনৈতিক কাজে যুক্ত থাকা সকলেরই মত, অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। নকশাল আমলে বারবার তাঁকে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল। এছাড়াও কংগ্রেসের শাসনকালে গুলি, বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েও লড়াই করতে তিনি পিছপা হন নি। লক্ষ্য ছিল একটাই, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। সারাভারত কৃষক সভার জেলা সম্পাদক হিসাবেও তিনি যেমন কৃষক-খেতমজুরদের সংগঠিত করতে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন, একইভাবে সিআইটিই’র জেলা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহন করেও শ্রমিকশ্রেণির লড়াই দিয়েছিলেন সুযোগ্য নেতৃত্ব। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী, দুই পুত্র, এক কন্যা ও তাদের পরিবর্গকে। প্রয়াত নেতার মরদেহ বৃহস্পতিবার সিউড়িতে পার্টি জেলা কার্যালয়ে নিয়ে আসা হলে সেখানে শ্রদ্ধা জানান পার্টির পলিব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, রাজ্যকমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, শ্যামলী প্রধান, জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী রতন কাহার, দুই পুত্র অভিক গাঙ্গুলি ও অর্ক গাঙ্গুলি। এছাড়াও কংগ্রেস, এসইউসিআই, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দরা এসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। এরপর মরদেহ দুবরাজপুর ও খয়রাশোলের পার্টি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বক্রেশ্বরে প্রয়াত নেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। 

Comments :0

Login to leave a comment