নীল গ্রহের মরা-বাঁচার গুরুতর প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বসছে বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন, পরিভাষায় ‘সিওপি-২৭’। নভেম্বরের ৬ তারিখেই বিশ্ব পরিবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে মিলিত হচ্ছেন ১৩৭টি দেশের প্রধানরা, মিশরের শরম অল শেখে। এবার সারা বিশ্বের নজর থাকবে সেখানেই।
রাষ্ট্রপ্রধানরা তো যোগ দিচ্ছেন, কাজের কাজ হচ্ছে কতটা! সেই প্রশ্নে অসন্তোষ জানাচ্ছে রাষ্ট্রসঙ্ঘই। আন্তোনিও গুতেরেস বলছেন, ‘‘সাতাশতম এই সম্মেলন থেকে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরতেই হবে, বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধের নির্দিষ্ট কাজ ঠিক করতেই হবে। সমস্যা গভীর। ফলে বড় মাপে কাজে নামা ছাড়া উপায় নেই।’’
রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রারম্ভিক রিপোর্ট বলছে, ‘‘ইউক্রেনে যুদ্ধ, তীব্র জ্বালানি সঙ্কটের আবহে হতে চলেছে এবারের বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আমদের জানিয়েছে কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য যা দরকার ছিল, হয়েছে তার সামান্যই।’’ খেদের কারণ, সিওপি-তে মোট ১৯৭ দেশের অংশগ্রহণ থাকলেও উষ্ণায়ন রোধ জমা দিয়েছে মাত্র ২৩টি।
বিশ্ব উষ্ণায়ন গবেষণা পত্র বা গবেষণাগারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে আগেই। দেশে দেশে অনাবৃষ্টি, খরা, খাদ্য সঙ্কট ডেকে আনছে উষ্ণায়ন। অতি সম্প্রতি পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার জন্যও বিশ্ব উষ্ণায়নকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। জলের সঙ্কট তীব্র হচ্ছে, আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা সর্বত্র। ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণেও প্রভাব ফেলছে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রশ্ন।
হিসেব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে অতি দক্ষিণপন্থী প্রায় সব সরকার উষ্ণায়নের তোয়াক্কা করতে নারাজ। ব্যতিক্রম নয় ভারতও। বনভূমি থেকে সবুজ উড়িয়ে দেওয়ার আগে জে সব বিধিনিষেধ ছিল, উবে যাচ্ছে। ব্রাজিলের একটা গোটা নির্বাচনের অন্যতম প্রধান বিষয়ই হয়ে দাঁড়ালো আমাজনের অরণ্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
রাষ্ট্রসঙ্ঘই কেবল তো নয়। বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধের প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে বহু আন্দোলন বারবার নামছে পথে। পরিবেশ আন্দোলন সরবে বলছে, মানুষ বলে চালিয়ে দিলে হবে না। আসলে তো দায়ী মুনাফা। তাকেই আগলাচ্ছে বিভিন্ন রাষ্ট্রশক্তি। কার্বন নির্গমণ নিয়ন্ত্রণের দায়, সবুজ জ্বালানির প্রযুক্তি আর্থিক বিচারে পিছিয়ে থাকা বিশ্বকে কম খরচে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধাও দেয় মুনাফার পাহারাদাররা।’’
কোন সীমায় বাঁধতে হবে উষ্ণায়নের মাত্রা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। শিল্প বিপ্লব শুরুর পর থেকে বেড়েছে তাপমাত্রা। তার আগের সময়ের তুলনায় দেড় ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখতে হবে বাড়তি তাপমাত্রাকে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্যোগে পরিচালিত আন্তর্জাতিক স্তরে বিজ্ঞানীদের গোষ্ঠী আইপিসিসি স্পষ্ট করেই জানিয়েছে, হাতে আর সময় নেই। না ফেরার বিন্দু বা ‘টিপিং পয়েন্ট’ ছুঁয়ে ফেলছে বিশ্ব। এর পর চাইলেও আর ফেরার সময় থাকবে না।
Comments :0