Dengue

এবার বৈদ্যবাটির কিশোরীর প্রাণ কেড়ে নিল ডেঙ্গু

রাজ্য

 আবারও মৃত্যু ডেঙ্গুতে। প্রাণ হারালো ১৫ বছরের এক কিশোরী। হুগলীর বৈদ্যবাটি পৌরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কায়ানাত পরভীন নামে ওই কিশোরীর প্রবল জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। তাকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শুক্রবার। ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। কিশোরীর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই মৃত্যুর পরেই ডেঙ্গু মোকাবিলায় পৌরসভার বিরুদ্ধে গাফিলতি ও ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।


প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তা নিয়ে গোটা রাজ্যেই মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে এপর্যন্ত অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন বেসরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে। জানুয়ারি মাস থেকে এপর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার বলে বিভিন্ন বেসরকারি সূত্রের খবর। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও প্রায় ১ হাজার জনের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। তবে সরকারি তরফে মৃত্যুর কোনও তথ্য প্রকাশ করাই হয়নি। অন্যদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যাও গোপন করা হচ্ছে বলে রাজ্যের চিকিৎসক মহলের এক বড় অংশের বক্তব্য।     

   
এমনকী কেন্দ্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বর্ন ডিজিজেস কন্ট্রোল-এর ওয়েবসাইটে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেওয়া তথ্য বলছে, রাজ্যে ওই দিন পর্যন্ত ২৩৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা শূন্য। এই তথ্যই রাজ্য সরকার পাঠিয়েছে কেন্দ্রের কাছে। অথচ ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে অন্তত ১৪ হাজার ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর মিলেছে বিভিন্ন বেসরকারি সূত্রে। একইভাবে ওই সময় পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতর সংখ্যা অন্তত ২৩ বলে জানা যাচ্ছে। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী কলকাতায় এসে অভিযোগ করে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গুর কোনও তথ্য রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে দিচ্ছে না। ওই দিনই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সাফাই দিয়ে বলেছেন, ‘‘ডেঙ্গু হলে কি একা আমাদের দোষ? চুরি করেছি না ডাকাতি করেছি, লুকাবো কেন?’’ শনিবার কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র অতীন ঘোষ আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এই রোগকে নোটিফায়েড ডিজিজ বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু কী করতে হবে, তা বলে দেয়নি। কেন্দ্র নোটিফাই বিষয়ক আইন করুক, যেমন কোভিডের সময় করেছিল। তাহলে বলতে পারবে, পশ্চিমবঙ্গ তথ্য দিচ্ছে কি দিচ্ছে না।
কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পারিষদ সদস্য এদিন বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমরা ডেটা গোপন করি। কিন্তু এটাই একমাত্র শহর, যেখানে ডেটা কালেকশন হয়। অন্যান্য শহরে ডেটা কালেকশন হয় না। তাই মানুষ সব কথা জানতে পারছেন না। আর বেসরকারি ক্ষেত্রে স্বার্থ জড়িত ব্যাপারস্যাপার থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যেক রাজ্যকে নিয়ে প্রোটোকল তৈরি করা উচিত।’’ কিন্তু ডেঙ্গুর এত বাড়বাড়ন্তকে ঠেকানো গেল না কেন, প্রথম থেকে এত গাফিলতি আর উদাসীনতা ছিল কেন, রাজ্যজুড়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং এলাকাবাসীরা এই প্রশ্নই তুলছেন বারবার। অতীন ঘোষ এদিন ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার জন্য সেই সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেছেন আরও একবার। তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষের সচেতনতার বিরাট ভূমিকা আছে। যেমন নিউ আলিপুরে অভিজাত মানুষরা থাকেন। দেখা যাচ্ছে, সোর্স সেই সব বাড়ির মধ্যে রয়েছে। ওয়ার্ড লেভেল, বরো লেভেল, সেন্ট্রাল লেভেল সার্ভে করেছি আমরা। বছরের প্রথম থেকে যাতে কাজ করতে পারি, তাই তথ্য সংগ্রহ হয়েছে।’’ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, কাউন্সিলরদের ভূমিকায় কোথাও একটা দুর্বলতা ছিল, সেটার ফল দেখা যাচ্ছে এখন। 
কলকাতার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার কলকাতা কর্পোরেশনের তরফে এক প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কর্মীদের নিয়ে অভিযান থেকে শুরু করে এলাকায় এলাকায় মশার লার্ভা দমন, ডেটা ব্যাঙ্কের ভিত্তিতে প্রাক-বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী সময়ে নজরদারি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নিয়ে নজিরবিহীন কাজ করে আসছে কলকাতা পৌর নিগমের স্বাস্থ্য দপ্তর। রাজ্যের বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, নিয়মিত তো দূরের কথা, ডেঙ্গু কবলিত এলাকায় এক জন বাসিন্দা সকালে উঠে এমন দৃশ্য খুবই কম দেখতে পেয়েছেন যে, কর্পোরেশন থেকে এসে বাড়ির আশপাশে রাস্তা, জঙ্গল, নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে। কর্পোরেশনেরই তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতা পৌর এলাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০৫২। এই সংখ্যা যে বিগত বছরের তুলনায় বেশি, তা মেনেছে কর্পোরেশনই। অবশ্য বাস্তব তথ্য বলছে, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কর্পোরেশনের সাফাই, এই সংক্রমণ বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ অনেক। উল্লেখ্য, তার মধ্যে ভৌগোলিক কারণ রয়েছে বলেও কিছু দিন আগে মন্তব্য করেছিলেন কলকাতার মেয়র। অন্যদিকে অতীন ঘোষ এদিন বলেছেন, ‘‘আমাদের শহরে ৬০ লক্ষ লোক জীবিকার জন্য আসেন। তাঁরা সংক্রমণ বাড়াতে সাহায্য করছেন। 
শনিবার কলকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, গোটা কলকাতায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ৭৬. ৫ শতাংশ দক্ষিণ কলকাতার। তার ২২. ৬ শতাংশ উত্তর কলকাতার। প্রকৃতপক্ষে, কলকাতার  ১, ৩,  ৯, ১১, ১২, ১৪ ও ১৬ নম্বর বরোতে ডেঙ্গু ছ‍‌ড়িয়েছে বে‍‌শি। তার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা যুক্ত হয়েছে, যেখানে আক্রান্ত বেশি। কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের আরও বক্তব্য, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ফাঁকা জমি রয়েছে। নির্মীয়মাণ বাড়ির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার, পুকুর রয়েছে ২হাজারের কাছাকাছি। রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার নর্দমা এবং ১২ হাজার পাতকুয়ো। ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের মধ্যে সাইলেন্ট ক্যারিয়াররাই ইডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ান। রাজ্যের চিকিৎসক মহল বলছে, রাজ্য সরকার আক্রান্ত ও মৃত্যুর সঠিক খবর ছাড়া বাকি অনেক তথ্যই পেশ করছে। কিন্তু এসব তথ্য সাধারণ মানুষের কাজে লাগে না। সাধারণ মানুষ চান দ্রুত মশা নিধন প্রক্রিয়া। তাঁরা চান এলাকায় এলাকায় নিয়মিত সাফাইকরণ। গরিব মানুষ চান জ্বর বা উপসর্গ দেখা দিলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দ্রুত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা, সেই সঙ্গে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা এবং প্লেটলেটের ব্যবস্থা। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই কাজগুলি করতে হবে সরকারকে।

Comments :0

Login to leave a comment